বর্তমান সময়ে মানুষ আয়রোজগার বাড়িয়ে অর্থকষ্ট দূর করছে। দিন বদলে গড়ে তুলছে সম্পদের পাহাড়। তবে ভাগ্য বিগম্বিত ফরিদপুরের সালথা উপজেলার নিঃসন্তান ভূমিহীন দম্পতি নিরাঞ্জন কুমার মালো ও মিরা রানি মাথা গোঁজার ঠাঁই তৈরী করতে পারে নাই। এদিক সেদিক ঘুরে মিরা-নিরাঞ্জন এখন ভাড়া বাসায় থাকে। নিঃসন্তান হওয়ায় ভাড়া বাসায় অনেক কটু কথা শুনে চোখের জল মুছতে মুছতে নতুন ঠিকানায় বেড়িয়ে পড়ে মিরা ও নিরঞ্জন।
জানা যায়, উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের তুগোলদিয়া গ্রামের মৃত গৌড় কার মালোর পুত্র নিরাঞ্জন কার মালোর সাথে ৮ বছর আগে বিয়ে হয় উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের গট্টি পাটপাশা এলাকার রতিকান্ত মালোর কন্যা মিরা রানী মালোর। মৃত গৌড় কুমার মালোর ভিটে-মাটি ছাড়া তেমন অর্থ সম্পত্তি ছিল না। যা ছিল মৃত্যুর পূর্বে তাও বিক্রি করে যান তিনি। মৃত গৌড় মালোর ৫ ছেলে ও ১ মেয়ের মধ্যে সবাই কম বেশি জমি কিনে বাড়ি ঘর নির্মাণ করে সুখে শান্তিতে বসবাস করলেও নিরাঞ্জনের আয় রোজগারে তা আর জুটে নাই।
বিবাহের ৮ বছরে এই দম্পতি বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে ভাড়া থাকেন। শারীরিক অসুস্থতা সারাবছর লেগে থাকার কারনে ঠিকমত কাজ করতে পারেন না নিরাঞ্জন, মিরাও তেমন কাজ জানেন না। আবার বিবাহিত জীবনের ৮ বছরে সন্তানের মুখ না দেখার কারনে কাজ কর্মেও তেমন মন দিতে পারেন না তারা। একটা সন্তান ও মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে ফেরেন সব সময়।
"আশ্রয়নের অধিকার শেখ হাসিনার অঙ্গীকার" এই শ্লোগানকে সামনে রেখে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর জন্মশত বার্ষিকী (মুজিববর্ষ) উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ বাড়ি প্রদান করা হয়েছে। কয়েকটি ধাপে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে মোট ৬৩৩টি ঘর ভূমিহীনদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকল্পে আরও অনেক ঘর উপজেলায় প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু কোন ঘরই কপালে জুটে নাই হতভাগা মিরা ও নিরাঞ্জানের।
নিঃসন্তান ভূমিহীন দম্পতি নিরাঞ্জন কুমার মালো ও মিরা রানির সাথে কথা হলে তারা জানায়, প্রায় ৫বছর যাবত বিভিন্ন বাড়িতে ভাড়া থাকে, সন্তান না থাকার কারনে বিভিন্ন জায়গাতে তাদের আটকুরে অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এদিক সেদিক ঘুরে কোন কুল কিনারা না পেয়ে আবারও নতুন ঠিকানা খুঁজে তারা।
নিরাঞ্জন কুমার মালো ও মিরা রানি দম্পতি বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই চেয়ে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমরা নিঃসন্তান ভূমিহীন দম্পতি আমাদের মাথা গোঁজার কোন ঠাঁই নাই, আপনি আমাদের থাকার মত একটা ব্যবস্থা করে দিবেন। আমরা সারাজীবন আপনি ও আপনার পরিবারের জন্য আশির্বাদ করবো।
ভাওয়াল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুকুজ্জামান ফকির মিয়া বলেন, বিষয়টি আপনার মাধমে জানতে পারলাম, শুনে খুব খারাপ লাগলো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের উপজেলাসহ বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক ভূমিহীনকে জমিসহ ঘর প্রদান করেছে। আরও আগে যোগাযোগ করলে হয়তো একটা ব্যবস্থা হয়ে যেত। তারপরেও আমি ঐ দম্পতিকে যথাযথ সহায়তা করার চেষ্টা করবো।
সালথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আক্তার হোসেন শাহিন এই বিষয়ে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ভূমিহীন গৃহহীনদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। তবুও যদি কেউ আশ্রয়হীন থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে তার পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হবে।