কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ইটভাটাগুলোতে মৌসুমে এক লাখ টন কাঠ পোড়ানো হয় বলে জানা গেছে। সাধারণত শীতের শুরু থেকে বর্ষার আগ পর্যন্ত এক মৌসুম ধরা হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় ১৬৮টি ইট ভাটা রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ২২টি বৈধ। এছাড়া দৌলতপুর উপজেলার ২৯টি ইট ভাটার মধ্যে ২৮টিই অবৈধ। এসব ইটভাটা গড়ে উঠেছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ নষ্ট করে। নামমাত্র দু-একটি কয়লার ভাটা থাকলেও বাকি সব চলছে কাঠ পুড়িয়ে। ইট তৈরির জন্য কাটা হয় ফসলি জমির মাঠ। অনেকেই আবার ইটের ভাটাতেই বসিয়েছেন কাঠ কাটার কল।
শুধু দৌলতপুরেই নয় কুষ্টিয়ার অন্য পাঁচ উপজেলাতেও অবৈধ এসব ইট ভাটায় লাখ লাখ টন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্যে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে দেদারসে চালছে এসব ইটভাটা। যেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে শিশুসহ শতশত শ্রমিক।
দৌলতপুর উপজেলার স্বরূপপুর-বাজুডাঙ্গা এলাকার কয়েকটি ইটভাটায় সরেজমিন গিয়ে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরির মহোৎসব চোখে পড়ে। এসব ভাটা গড়ে তোলা হয়েছে ফসলের ক্ষেতেই।
নুরী ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী বজলুর রহমান বলেন, আমার কোনো কাগজপত্র নেই। এভাবেই চালিয়ে যাচ্ছি, ব্যবসা চালাতে কোনো সমস্যা হয় না।
এদিকে, উপজেলার শাদীপুর ফসলের মাঠ এখন ইটভাটার দখলে। এই এলাকায় ইটের ভাটা পাঁচটি। যার মধ্যে একটিতে কয়লার জ্বালানির আয়োজন থাকলেও তা অব্যবহৃত। ওই ভাটাতেই বসানো হয়েছে কাঠ ফাঁড়ার মেশিন। সেখানকার কমবেশি সব ভাটাতেই স’ মিল বসিয়ে গাছ কেটে জ্বালানি তৈরি করা হয়।
আল সালেহ লাইফ লাইন ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী মামুন বলেন, আমার দুটি ভাটা। একটি কয়লায় চলে, আরেকটি খড়িতে।
তবে, তার ভাটায় কোনো কয়লার মজুত চোখে না পড়লেও কাটা গাছের বিশাল মজুত দেখা যায়।
জানতে চাইলে বিশ্বাস ব্রিকসের পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, মালিকদের ঐক্য নেই। যে যার মতো ছন্নছাড়া হয়ে ব্যবসা করছে। ইতিবাচক পরিবর্তনের বিষয়ে কোনো অভিভাবক নেই যে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
দৌলতপুরের চক দৌলতপুর এলাকার রমজান আলীর নুরু ব্রিকস ছাড়াও দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় চলছে চারটি ইটের ভাটা। সব ভাটাতেই পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটানোর চিত্র চোখে পড়ে।
ডাংমড়কা এলাকার তিনটি ফসলের মাঠে ইটভাটা চারটি। ইট তৈরিতে সবাই নির্ভরশীল ফসলের ক্ষেতের মাটি এবং পোড়াতে কাটা গাছের খড়ির ওপর। এই এলাকায় নতুন ভাটা মালিক মোফাজ্জল হকও এগিয়েছেন একই পথে, প্রথম লটেই গাছ পুড়িয়ে শুরু তাদের। এরই মধ্য মজুত করা হয়েছে কাটা গাছ।
দৌলতপুর থানা থেকে রিফায়েতপুরের পথে ওলি এবং নজরুলের দুটি ভাটা। নজরুলের ভাটায় কয়লার আয়োজন থাকলেও ওলির ভাটা খড়ি নির্ভর। গলাকাটি এলাকায় তিনটি, বড়গাংদিয়ায় একটি, আদাবাড়িয়ায় একটি, খলিশাকুন্ডীতে একটি এবং জয়রামপুর-কল্যাণপুর এলাকায় তিনটি ইটভাটা চলছে ফসলের ক্ষেতে।
চলতি মাসেও দাড়েরপাড়া, গোবরগাড়া, নারায়ণপুর, বড়গাংদিয়া এলাকায় ফসলের ক্ষেতে মাটি কাটা হয়েছে। এরইমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৩০ বিঘা জমিতে মাটি কাটার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সূত্র মতে, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় ইট পোড়ানোর জন্য এক মৌসুমেই কমপক্ষে এক লাখ টন খড়ির প্রয়োজন হয়। যার বাজারমূল্য অন্তত ৪০ কোটি টাকা। উপজেলাটিতে অবৈধ প্রক্রিয়ায় প্রায় ২৫ কোটি পিস ইট তৈরি ও বাজারজাত হয়। যার বাজারমূল্য ২৫০ কোটি টাকা।
দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, এসব ইটভাটা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। ফসলি জমি নষ্ট করে এসব ইটভাটা গড়ে উঠেছে। পরিবেশ বিনষ্টকারী এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরদারি প্রয়োজন।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান বলেন, জেলায় ১৬৮টি ইট ভাটা রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ২২টি বৈধ। দৌলতপুরে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়া ইট ভাটা একটি, বাকি ২৮টি অবৈধ। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী সবাইকে এসব ভাটা বন্ধে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল জব্বার বলেন, পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি এসব অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha