ফরিদপুরের সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের গোলডাঙ্গীতে বাসিন্দা ছিলেন এই লতিফ ফকির। তবে পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে বসতভিটা বিলীন হওয়ার পরে সম্প্রতি তিনি আস্তানা গড়েছেন সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের হাট গোবিন্দপুর গ্রামে। সেখানে ভগ্নিপতির কেনা জমিতে গত ১৫ দিন আগে ঘর তুলে ঘরের পশ্চিম দিকের ঘরে বানিয়েছেন একটি দরবার ও আসন। এখানেই এখন নতুন করে শুরু হয়েছে তার দরবারি চিকিৎসা।
ডাক্তারের নিকট থেকে চিকিৎসার আশা শেষ হয়ে গেছে এমন সব রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ্য করে তোলার এক বিস্ময়কর দরবার খুলেছেন লতিফ ফকির (৫৫)। ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার, প্যারালাইসিস, বাতের ব্যাথাসহ নানা ধরনের দূরারোগ্য রোগীদের চিকিৎসা করেন তিনি। দেড় থেকে তিন মাসেই তারা সুস্থ হয়ে যান বলে তার দাবি। এভাবে গত কুড়ি বছরে প্রায় আট হাজার মানুষের চিকিৎসা করে তাদের শতকরা ৬০ ভাগ রোগীই সুস্থ হয়েছেন বলে তিনি জানান। দেশ-বিদেশ তথা ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে তার কাছে রোগী আসে।
সরেজমিনে তার দরবারে গেলে গত (৭ নভেম্বর) শুক্রবার তার সাথে কথা হয়। এসময় তিনি তার চিকিৎসা বিদ্যার আদ্যোপান্ত খুলে বলেন। তিনি বলেন, আমার কাছেতো আসে মনে করেন ডাক্তারি চিকিৎসা মতামত শেষ কইর্যা। ফাস্টেতো একটা কবিরাজের কাছে মানুষ আসে না। শেষ কইর্যা আসে তারপরে কবিরাজি ওষুধ বানায় দেই।
কিভাবে বুঝেন কার কি রোগ হয়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘রোগীরা ডাক্তারি কাগজপত্র, মতামত নিয়ে আসে; যেইডা দেইখ্যা ডাক্তার ওষুধপানি দিছে কাজ হয় নাই। আমি আবার করি কি ওই গাছগাছড়া দিয়ে তাগে ওষুধের ফাইল বানায় দেই।
সপ্তম শ্রেণী পাস দাবিদার লতিফ ফকির ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন বুঝতে পারেন? জবাবে তিনি জানান, ‘না.. ওরা যেই আল্ট্রাসনোগ্রাম নিয়ে আসে ওরা বলে, পাশাপাশি আমি দেখি, নিজেই দেখি, অভিজ্ঞ।’
নতুন এই আস্তানায় আসার পর এই ১৫ দিনে গত শুক্রবারই তার কাছে প্রথম নতুন রোগী এসেছিল একজন। জানালেন, তার ফুসফুসের অসুখ। তিনি ২৫০ টাকায় এক ফাইল ওষুধ বিক্রি করেছেন। তবে তিনি কবিরাজি ফি হিসেবে ওষুধের বাইরে কোনো টাকা নেন না।
লতিফ ফকিরের টিনের ছাপড়ার এই কাঁচা মাটির ঘরে কবিরাজি দরবারের সামনের অংশটুকু মুদি দোকান ঘরের মতো ঝাপ লাগানো। ঘরের মধ্যে পশ্চিম কোনে মাঝামাঝি ক্যাশবাক্সর মতোই একটি জলচৌকি রাখা। তার উপরে রয়েছে কাগজের ফুল, আগরবাতি, গোলাপ জলের বোতলের সারি, সরু মোমবাতির প্যাকেট, বিড়ির প্যাকেট, দিয়াশলাই, আপেলসহ আরো কিছু জিনিসপত্র। একপাশে একটি বড় সুটকেসের মতো ব্যাগ রাখা মাটিতে। তার পেছনে বড় একটি ঢোল রাখা। জলচৌকির অন্যপাশে একটি পিড়ির মতো আসন। পেছনে হেলানের ব্যবস্থা আছে। সেখানে জায়নামাজ পাতা। এটি লতিফ ফকিরে আসন। এখানে বসে তিনি রোগী দেখেন। কবিরাজি চিকিৎসা দাবি করলেও তার এই দরবারের চিত্র দেখে মনে হবে কোনো পীর-ফকিরের হুজরা খানা।