বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাই নাই, এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে নিয়ে মাগুরায় বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারি দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের ৭ দফা দাবির বাস্তবায়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর মাগুরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি পেশ করা হয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারি আপনার নিকট অত্যন্ত কৃতজ্ঞ যে, ২০১৫ সালে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বেতন স্কেলসহ নানাবিধ সুবিধা দিয়েছেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় কোন অদৃশ্য কারনে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় স্বাধীনতার ৫১ বছর পূর্ণ হলেও ১১-২০ গ্রেডভুক্ত কর্মচারীগণ আজ বেতন ও পদবীর ক্ষেত্রে চরম বৈষম্যের অবসান ঘটেনি। আমরা ১১-২০ গ্রেডের সরকারি কর্মচারি বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ বৃদ্ধি, পরিবারের চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি, পরিবারের ভরণপোষণের ব্যয় বৃদ্ধি ও সেবা খাতের ব্যয় বৃদ্ধির দরুণ আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি।
ইতিমধ্যে বৈশ্বিক কোভিড-১৯, মহামারি ও রাশিয়া ইউক্রেনসহ অন্যান্য দেশের মধ্যে যুদ্ধের কারণে এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে। যার ফলে দ্রব্যমূল্য কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে ও সেবামূল্যও আকাশচুম্বি রুপ ধারণ করেছে অথচ নিম্ন গ্রেডের কর্মচারিদের বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধি ৫% হিসেবে বহাল রয়েছে অথচ ২০১৫ সনের প্রদানকৃত ৮ম পে-স্কেলে বাৎসরিক মুদ্রাস্ফীতির সাথে সংগতি রেখে বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধির বিষয় সমন্বয় করার কথা লিপিবদ্ধ থাকলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫ নং অনুচ্ছেদে নাগরিকদের যুক্তি সংগত মজুরীর বিনিময়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার বিষয়টি রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হিসাবে বলা হয়েছে। একজন কর্মচারীর পরিবারে ৬ জন সদস্য বিবেচনায় সর্বনিম্ন বেতন ৮২৫০ টাকায় ৩ বেলা খাবার মাথা গোজার ঠাই, চিকিৎসা, সন্তানের শিক্ষা, অতিথি আপ্যায়ন ও বিনোদন ব্যয় মিটিয়ে মানবিক ও সামাজিক মর্যাদা নিয়ে জীবন ধারন সম্ভব কিনা আপনিই বলুন। এছাড়া ২০ থেকে ১১ গ্রেডের কর্মচারিদের বেতন ৮২৫০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ১২৫০০ টাকায় শেষ হয়েছে।
এই ১০ গ্রেডের বেতন স্কেলের মোট পার্থক্য ৪২৫০ টাকা একই সময়ে ১০ থেকে ১ম গ্রেডের কর্মকর্তাদের বেতন ১৬০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৭৮০০০ টাকায় শেষ হয়েছে। এদের এই ১০ গ্রেডের বেতন স্কেলের মোট পার্থক্য ৬২০০০ টাকা। ২০১৫ সালে প্রদত্ত ৮ম পে-স্কেল ইতিমধ্যে ৭ বছর পূর্ণ করেছে। সব সময়ই সরকার কোন পে-স্কেল ৪ বছর পূর্ণ হলেই মহার্ঘ্য ভাতা প্রদান করে থাকে।
কিন্তু এ বিষয়ে কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছেনা। হে বিশ্ব মানবতার বিবেক, আপনি এই ব্লক পোস্ট বাতিল করে ব্লক পোস্ট পদে কর্মরত কর্মচারিদের পদোন্নতি বা ৫ বছর পর পর উচ্চতর গ্রেড প্রদান করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। এ প্রসঙ্গে আমাদের দাবি ১১ থেকে ২০ গ্রেডের সকল পদে কর্মচারিদের পদোন্নতি দেয়া সম্ভব না হলে ৫ বছর পরপর উচ্চতর গ্রেড দেয়ার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি। এছাড়াও অধঃস্তন আদালতের কর্মচারীদের বিচার বিভাগীয় কর্মচারী হিসেবে গণ্য করতে হবে এবং টেকনিক্যাল কাজে নিয়োজিত কর্মচারিদের ডিপ্লোমাধারীদের ন্যায় টেকনিক্যাল পদমর্যাদা দিতে অনুরোধ জানাচ্ছি।
রবিবার ২ অক্টোবর সকাল ১১ টার সময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে, বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারি দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ, মাগুরা জেলা শাখার সদ্যসরা জেলা প্রশাসক ডঃ আশরাফুল আলম এর কাছে স্মারকলিপি পেশ করেন। (জাতীয় ভিত্তিক সংগঠন সমূহের সমন্বয়ে গঠিত জোট) বৈষম্যমুক্ত ৯ম পে-স্কেল ঘোষণা, অন্তবর্তীকালীন সময়ের জন্য ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের ৫০% মহার্ঘ ভাতা প্রদান টাইমস্কেল সিলেকশন গ্রেড পুনঃবহাল, সচিবালয়ের ন্যায় পদ-পদবী এবং অভিন্ন নিয়োগবিধি বাস্তবায়নসহ ৭ দফা দাবিতে মাগুরায় সরকারি কর্মচারি দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের জেলা শাখার সদস্যরা চৌরঙ্গী মোড় থেকে শ্লোগানের সাথে র্যালি শুরু করে মাগুরা জেলা প্রশাসকের প্রধান গেটের সামনে বক্তব্য রেখে র্যালি সমাপ্তি করে।
এ সময় বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারি দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ মাগুরা জেলা শাখার সভাপতি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় মোঃ ফসিয়ার রহমান, সাধারণ সম্পাদক, স্টোর কিপার সিভিল সার্জন কার্যালয় গৌতম কুমার সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর মাগুরা অফিস সহকারী সোহেল সবুজ, সদস্যরা হলেন- প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মফিজুল ইসলাম, শালিখা উপজেলার সদস্য, মাগুরা কালেক্টটরেট সহকারী সভাপতি মোঃ আক্তারুজ্জামান, সহকারী কমিশনার বাংলাদেশ স্কাউটস মাগুরা শামসুন্নাহার লাকী, সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ শিক্ষক সমাজ মোঃ ইমরান হোসেন, শ্রীপুর উপজেলার সদস্য, প্রধান শিক্ষক বাকেরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আসাদুজ্জামান, মহম্মদপুর উপজেলার সদস্য, নাজির উপজেলা ভূমি অফিস শিহাব হোসেন। এছাড়াও র্যালিতে উপস্থিত ছিলো প্রায় ১ শত ৫০ জন সদস্যবৃন্দ গণ।
জাতীয় বেতন স্কেলের ১১-২০ গ্রেডের সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৈষম্য নিরসনসহ ৭ দফা দাবিসমূহ নিম্নে উপস্থাপন করা হলো : দাবীনামা-০১- পে কমিশন গঠন পূর্বক বৈষম্যমুক্ত ৯ম পে-স্কেল বাস্তবায়ন করতে হবে। পে-স্কেল বাস্তবায়নের পূর্বে অন্তবর্তীকালীন সময়ে ৫০% মহার্ঘ ভাতা প্রদান করতে হবে। ০২- ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা অনুযায়ী ১০ ধাপে বেতন স্কেল নির্ধারণসহ পে-কমিশনে কর্মচারী প্রতিনিধি রাখতে হবে। ০৩- সচিবালয়ের ন্যায় সকল দপ্তর, অধিদপ্তর ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের পদ ও পদবী পরিবর্তনসহ এক ও অভিন্ন নিয়োগ বিধি প্রণয়ন করতে হবে। ০৪- টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড, বেতন জ্যেষ্ঠতা পূনঃবহাল এবং সকল স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে গ্রাচ্যুইটির পরিবর্তে পেনশন প্রবর্তনসহ বিদ্যমান গ্রাচ্যুইটি/আনুতোষিকের হার ৯০% এর স্থলে ১০০% নির্ধারণ ও পেনশন গ্রাচ্যুইটি ১ টাকায় = ৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
০৫- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের আপীল বিভাগের রায় বাস্তবায়নসহ সহকারি শিক্ষকদের বেতন নিয়োগ বিধি ২০১৯ এর ভিত্তিতে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণ। আউট সোসিং পদ্ধতি বাতিল পূর্বক উক্ত পদ্ধতিতে নিয়োগকৃত ও উন্নয়ন খাতের কর্মচারীদের রাজস্বখাতে স্থানান্তর করতে হবে। ০৬- ব্লক পোস্টে কর্মরত কর্মচারীসহ সকল পদে কর্মরতদের পদোন্নতি বা ৫ বছর পরপর উচ্চতর গ্রেড প্রদান করতে হবে, অধস্তন আদালতের কর্মচারীদের বিচার বিভাগীয় কর্মচারী হিসেবে গণ্য করতে হবে।
এছাড়া টেকনিক্যাল কাজে নিয়োজিত কর্মচারিদের টেকনিক্যাল পদমর্যাদা দিতে হবে। ০৭- বাজার মূল্যের উর্দ্ধগতি ও জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সাথে সমন্বয় পূর্বক সকল ভাতাদি পূণঃনির্ধারণ করতে হবে। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর ও অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর নির্ধারণ করতে হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এ. এস.এম
মুরসিদ, মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।