কাঠের একটি কয়েন ঘিরে মিলিয়ন ডলার লাভের আশায় কোটি টাকা খুইয়েছেন একাধিক নামী ব্যবসায়ী ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এই কয়েনের কি এক তেলেসমাতি! সর্বস্বান্ত হওয়ার আগে কেউ প্রতারণার বিষয়টি বুঝতেই পারছেন না।
সম্প্রতি এই কয়েনের ঘোরে সরকারের প্রথম শ্রেণির অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা তার পেনশনের ১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা তুলে দিয়েছেন প্রতারকদের হাতে। আরেক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খুইয়েছেন ৮৪ লাখ টাকা।
স্বনামধন্য এক ব্যবসায়ী ২ কোটি টাকা দিয়েছেন, আরও টাকা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন।
গত ডিসেম্বরে আনন্দ গ্রুপের চেয়ারম্যান এই প্রতারকদের হাতে নগদ দেড় কোটি টাকা তুলে দেন।
আরও টাকা দেওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে প্রতারণার বিষয়টি ধারণা করেন তিনি। পরে এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়।
মামলার তদন্তে একটি কয়েন ঘিরে মহাপ্রতারণার এই তথ্য জানতে পারে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
তদন্তের ধারাবাহিকতায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন—আক্তারুজ্জামান, সালাম, মনিরুজ্জামান কামরুল ওরফে জামান, আবু তাহের জবা ও শফিকুল ইসলাম স্বপন। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত দুটি কাঠের কয়েন, নগদ ২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ও বিভিন্ন উপকরণ জব্দ করা হয়।
[caption id="attachment_2542" align="alignnone" width="725"] পিবিআই'র হাতে গ্রেফতার প্রতারক চক্র।[/caption]
পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, এই কাঠের কয়েনের কি এক তেলেসমাতি! যেন টাকা না দিতে পারলে তাদের মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। যেন ইচ্ছে করে সবাই প্রতারিত হওয়ার জন্যই টাকা দিচ্ছেন।
আনন্দ গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. বারীর প্রতারিত হওয়ার বিষয়ে পিবিআই জানায়, আবু তাহের জবা নিজেকে বড় ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিতেন। তার দেশে বিদেশে অনেক ব্যবসা ও স্পেন-দুবাইতে নিয়মিত যাতায়াত বলে জানান। আদতে এসএসসি পাস জবা আগে নিজ বাড়িতে পেয়ারা চাষ করতেন।
প্রায় এক বছর আগে জবার সঙ্গে আনন্দ গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. বারীর পরিচয় হয়। বিশ্বাস স্থাপনের এক পর্যায়ে প্রতারক জবা বলেন, দেশের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা সালাম নামে একজনের কাছে একটি কয়েন আছে। কয়েনটি নাসায় গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয়। জামান নামে একজন আমেরিকান ক্রেতা আছেন যিনি কয়েনটি কিনবেন।
কিন্তু মূল্যবান এই কয়েন কেনাবেচায় মিলিয়ন ডলারের লেনদেন। তাই জবা আনন্দ গ্রুপের চেয়ারম্যানের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে চান। এজন্য তিনি একটা মোটা অঙ্কের টাকা কমিশন পাবেন।
এর মধ্যে ক্রেতা মনিরুজ্জামান কামরুল জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন জবা। জামানের সঙ্গে নাসা, সিআইএ কিংবা ইউএস অ্যাম্বাসির যোগাযোগ রয়েছে বলে জানান। আসলে জামান একজন শাড়ি ব্যবসায়ী। আরেক প্রতারক স্বপন নিজেকে জামানের পিএ হিসেবে পরিচয় দিতেন। জামান ওই অমূল্য কয়েনটি কিনবেন আর লেনদেনে ব্যবহার করবেন আনন্দ গ্রুপের অ্যাকাউন্ট।
প্রতারক আক্তারুজ্জামান সীমান্ত এলাকায় থাকেন, তিনি বিক্রেতা খোঁজেন। ভারতের এমন কেউ নাই যাকে তিনি চেনে না। প্রকৃত অর্থে তিনি এইচএসসি পাস আর ঝিনাইদহের একটা বাড়িতে কেয়ার টেকারের চাকরি করেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৯ ডিসেম্বর আনন্দ গ্রুপের চেয়ারম্যানকে চুয়াডাঙ্গায় নিয়ে মূল্যবান ওই কয়েন দেখান প্রতারকরা। তার সামনেই কয়েনটি বিভিন্ন যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে দেখানো হয়। এক পর্যায়ে কয়েনের পাসওয়ার্ড নিতে ভারতে ফোন দেওয়া হয়। হিন্দিতে কথা বলে পাসওয়ার্ড নেওয়া হয়। বিশ্বাস স্থাপনের জন্য নানা কৌশল ব্যবহার করতে থাকেন প্রতারকরা।
এক পর্যায়ে কয়েনের দাম ঠিক হয় ১০ কোটি টাকা। এ সময় ক্রেতা জামান তাৎক্ষণিক সাড়ে আট কোটি টাকার চেক দেন। প্রলোভনে পড়ে নগদ বাকি দেড় কোটি টাকা দিয়ে দেয় আনন্দ গ্রুপ। কিছুদিন পর কোনোভাবে তারা প্রতারণার বিষয়টি টের পেয়ে আইনের আশ্রয় নেয়।
পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, চট্টগ্রামের এক বড় ব্যবসায়ী (পিএইচপি গ্রুপ) এই কয়েনের প্রলোভনে ২ কোটি টাকা দিয়েছেন। আরও টাকা দেবেন বুঝতে পেরে তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে আটকে রাখেন ওই ব্যবসায়ীর জামাতা। তিনিও চট্টগ্রামের বড় ব্যবসায়ী।
বনজ কুমার মজুমদার বলেন, কোনোভাবে শ্বশুরকে টাকা দিতে আটকাতে না পেরে আমাদের জানান। পরে আমরা বিমানবন্দর থেকে আমাদের গাড়িতে করে ওই ব্যবসায়ীকে অফিসে নিয়ে আসি। তিনি প্রতারকদের টাকা দিতে এমন পাগল হয়ে গিয়েছিলেন যে, বাসায় যেতে পারলে তিনি আবার টাকা দিতেন।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha