মহম্মদপুর থেকে বাবুখালি সড়কের চালমিয়া এলকায় দোতলা বাড়ির ব্যালকনির সামনে পুকুর।
অসংখ্য লাল শাপলা পুকুরে ফুটে যেমন শোভবর্ধন করেছে বাড়ির আঙিণা তেমনি শাপলার এই লাল গালিচার অপরুপ সৌন্দর্য মুগ্ধ করে পুকুর সংলগ্ন এ সড়কে যাতায়াতকারী পথচারীদের।
এখানে ভোরের সূর্যোদয়ের সাথে সাথে অজস্র লাল শাপলা ফোঁটে। ভোরের রক্তিম সূর্যের আলোকেও হার মানায় শতসহস্র লাল শাপলা। প্রথম দেখাতেই যেকোনো মানুষের চোঁখ ও মনের প্রশান্তি মিলবে লাল শাপলায়।
এখানে আসলে মনের অজান্তেই আপনার মনে বেজে উঠতে পারে, 'তুমি সুতোয় বেঁধেছ শাপলার ফুল,নাকি তোমার মন'। বাড়ি সংলগ্ন পুকুরের পানিতে লাল শাপলার অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে খানিক সময়ের জন্য আপনার মনে হতে পারে, প্রকৃতি যেন তার রূপের সৌন্দর্য এখারে ছড়িয়েছে অবলিলায়। সেইসাথে আকর্ষনীয় লাল শাপলা আশপাশের পরিবেশ, এবং এই গ্রামটিকে মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে। এই নয়নাভিরাম রূপ দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলায়। এটি বাবুখালি ইউনিয়নের চালমিয়া এলকায়।
আরও পড়ুনঃ ফরিদপুর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত |
সূযের্র উপস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে শাপলা তার আপন সৌন্দর্যকে গুটিয়ে নেয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শাপলার সৌন্দর্য ম্লান হতে থাকে। সূর্যোদয় থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্তু লাল শাপলার সৌন্দর্য দৃশ্যমান থাকে। এখানে লাল শাপলার পাশাপাশি সাদা ও বেগুনি রঙের শাপলাও জন্মে। সাদা ও বেগুনি রঙের শাপলা মূলত লাল শাপলার তুলনায় অপ্রতুল।
কৃষি অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, বর্তমান সভ্যতায় বাড়তি জনগণের চাপের কারণে আবাদি জমি ভরাট করে বাড়ি,পুকুর মাছের ঘের বানানো এবং অপরিকল্পিত ভাবে জমিতে সার প্রয়োগের ফলে এর পরিমাণ যেমন কমেছে, তেমনি শাপলা জন্মানোর জায়গাও কমে আসছে।
বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা। তবে তার রং সাদা। কিন্তু বিলুপ্ত প্রায় লাল শাপলা সংরক্ষণে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে নিজ বাড়ির পুকুরে লাল শাপলার মেলা বসিয়েছেন মহম্মদপুর উপজেলার বাবুখালী আদর্শ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ রবিউল আলম। সৃষ্টিশীল চিন্তা-চেতনা উদ্যোগের ফলে তার লাল শাপলার আবাদ যেমন বাড়ির সামনের পুকুরে এনেছে শোভা তেমনি এখন দেখতে আসা কৌতুহলি মানুষ পাচ্ছে বিনোদন। রবিউল আলম উপজেলার বাবুখালী ইউনিয়নের চালিমিয়া গ্রামের মৃত সৈয়দ রজব আলীর ছেলে।
মাগুরা শহর থেকে প্রায় ২৫ এবং মহম্মদপুর উপজেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে বাবুখালী ইউনিয়নের চালিমিয়া গ্রামে ‘সেজুতি' নামের বাড়িটির অবস্থান। ওই গ্রামের সৈয়দ রবিউল আলম লাল শাপলার কিছু কন্দ এনে লাগিয়েছিলেন দুই বছর আগে। তিনি মহেশপুর থেকে মোথাকন্দগুলো এনে প্রায় ৯ শতাংশ জমির ওই পুকুরে আবাদ করেছিলেন। তার পর থেকে নিবিড়ভাবে পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে এগুলো। সেখানেই এখন ফুঁটেছে সহস্রাধিক লাল শাপলা। ভাবনার দিক থেকে সৈয়দ রবিউল আলমের এ উদ্যোগকে অনেকটা ব্যতিক্রম বলা যেতে পারে।
রবিবার সকালে শাপলার পুকুরে গিয়ে দেখা যায়, দোতলা বাড়িরদুই পাশে ব্যালকনি, পশ্চিম পাশে রড সিমেন্টের গোল টেবিল চেয়ার। বসে বসে পুকুরের শাপলার লাল হাসির অপরূপ সেই দৃশ্য দেখে ভীষণ মুগ্ধ হবেন যে কেউ। শরতের মৃদু হাওয়ায় লাল শাপলার চোঁখ জুড়ানো হাসির দেখা মিলবে এখানে।
লাল শাপলা যখন বিলুপ্তির পথে তখন ব্যাক্তি উদ্যোগে পুকুরে লাল শাপলার উপস্থিতি সুন্দরের প্রবাহকে বাড়িয়ে তুলেছে বহুগুনে। অধ্যক্ষ সৈয়দ রবিউল আলম জানান, লাল শাপলার নয়নাভিরাম দৃশ্য আমাকে বিমোহিত করে। পুকুরটিতে লাল শাপলার পাশাপাশি পদ্মফুলও চাষ করবো এবছরেই। তিনি আরও জানান, বর্তমান প্রজন্মের অনেক ছেলে-মেয়েরা লাল শাপলা চেনে না। তারা এখানে এসে জানতে পারবে লাল শাপলার পরিচিতি। লাল শাপলা দেখতে আসা স্বামী-স্ত্রী আবিদুর রহমান ও সোনিয়া বেগম বলেন, জীবনের প্রথম লাল শাপলা দেখলাম। মুগ্ধ হয়েছি।
এখানের পরিবেশটাও অনেক সুন্দর। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুস সোবহান জানান, লাল শাপলা একটি জলজ উদ্ভিদ এবং ওষুধিও বটে। বিলুপ্তপ্রায় লাল শাপলা এখন আর বিলেঝিলে তেমন দেখা যায় না। তবে অনেকে বাণিজ্যিক ভাবে পুকুরে চাষাবাদ করছেন। এমন উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়।
আরও পড়ুনঃ মাগুরায় ধূলজোড়া চুড়ারগাতী প্রতাপ চন্দ্র স্কুলের নিয়োগে অর্ধকোটি টাকা ঘুষ বাণিজ্যের লেনদেন |
এ ব্যাপরে প্রয়োজনীয় পরামর্শ কৃষি বিভাগ থেকে দেওয়া হবে। ইউএনও রামানন্দ পাল বলেন, লাল শাপলার সৌন্দর্যের খবর পেয়েছি। সপরিবারে দেখতে যাব সময় করে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha