নড়াইলের কালিয়ায় সড়কে একের পর এক প্রানহানীর ঘটনা ঘটেই চলেছে। সরকার কতৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত ট্রলির চাপায় গৃহবধু, ভ্যানচালক ও ব্যবসায়ী পর এবার সড়কে প্রান হারিয়েছেন উপজেলার বাঐসোনা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আইউব আলী মোল্যা (৭২)।
জানা গেছে, গত ৬ সেপ্টেম্বর সকাল ১১ টার দিকে চাপাইল থেকে কালিয়া যাওয়ার পথে কালিয়া-চাপাইল সড়কের লক্ষীপুর নামকস্থানে যাত্রী বোঝাই একটি ইজিবাইককে বিপরিত দিক থেকে আসা একটি পিকাপ ভ্যানে চাপা দিলে মুক্তিযোদ্ধা আইউব আলী ও নড়াগাতি গ্রামের চান্দু লস্কারের স্ত্রী জাহেদা বেগম (৬৫) সহ ৪ জন আহত হন।
এরমধ্যে আইউব আলী চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯ টার দিকে মারা যান। অন্যদেরকে কালিয়া ও গোপালগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আইউব আলী মোল্যাকে গতকাল (৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পরিবাবরিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এনিয়ে গত সাড়ে ৪ মাসে কালিয়ার সড়কে গাড়ির চাপায় প্রান হারিয়েছেন ৪ জন। আহত হয়েছেন অন্তত ৪০ জন।
আহতরা অনেকেই এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকা মানুষ বা যানবাহনও তাদের কাছে নিরাপদ নয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২ আগষ্ট দুপুর ১২ টার দিকে বালু বোঝাই একটি ট্রলি পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জ থেকে কালিয়ায় আসার পথে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে কালিয়া-গোপালগঞ্জ সড়কের চাপাইল সেতু সংলগ্ন ইজিবাইক ষ্ট্যান্ডে আছড়ে পড়ে। সেখানে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা ৫টি ইজিবাইকসহ একটি ভ্যানগাড়ি গুড়িয়ে দেয়। এসময় যোগানিয়া গ্রামের মৃত ফায়েক মোল্যার ছেলে ভ্যানচালক বিল্লাল মোল্যা (৫০) নিহত হন। সেখানে থাকা বাগুডাঙ্গা গ্রামের ওয়ায়েজ মল্লিক (৩০), চাপাইল গ্রামের হালিম শেখ (৬০) ও ওলিয়ার রহমানসহ (৪০) ৫ জন আহত হন।
গত ১০ জুন বিকাল ৫ টার দিকে উপজেলার কালিয়া-বড়দিয়া সড়কের শুড়িগাতি নামক স্থানে মোটর সাইকেল আরোহী বড়দিয়া মুন্সি মানিক মিয়া কালেজের ছাত্র রামপুরা গ্রামের টিক্কা খানের ছেলে সাব্বির খান (১৭) শাহীন শেখের ছেলে সাজেদুল ইসলামকে (১৬) একটি বালু বোঝাই ট্রলিতে চাপা দিলে তারা মারাত্মক আহত হন। তারা এখনও পুরোপুরি সুস্থ্য হতে পারেননি বলে জানা গেছে।
গত ২ জুন বিকাল ৩ টার দিকে কালিয়া-চাপাইল সড়কের কালিনগর নামক স্থানে যাত্রীবাহি একটি ইজিবাইকে বালুবাহী ট্রলি চাপা দেয়। এসময় ছোটকালিয়া গ্রামের মনিরুল মোল্যার স্ত্রী বন্যা বেগম (৩৭) নিহত হন। আহত হয় তার শিশুসন্তান রমিজ মোল্যা (৪) ও জনৈক খায়ের লস্কার (৪০) সহ ৪ জন।
এর আগে গত ৯ মে সন্ধ্যায় উপজেলার চাপাইল-তেরখাদা সড়কের পাখিমারা নামক স্থানে ধান বোঝাই একটি ট্রলি পহরডাঙ্গা গ্রামের ব্যবসায়ী শামীম মোল্যাকে (৩৮) মোটর সাইকেলসহ চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই শামীমের মৃত্য হয়। আহত হন তার সঙ্গী রকিব হোসেন (৩০)।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোল্যা ইমদাদুল হক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত গাড়ির বেপরোয়া দাপটে এভাবে মানুষের জীবন হানি মেনে নেয়া যায় না। তিনি অবৈধ গাড়ি চলাচল বন্ধে ব্যাবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলার নড়াগাতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত সাহা বলেন, মুক্তিযোদ্ধা আইউব আলীর দূর্ঘটনাস্থল থেকে পিকাপটি আটক করা হয়েছে। কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কালিয়ার ইউএনও মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত ও ঝুকিপূর্ন ওইসব যানবাহন চলাচলের বিষয়টি স্থানীয় থানা পুলিশের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রিন্ট