ঢাকা , শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo কাশিয়ানীতে ভুয়া প্রত্যয়ন দেওয়ায় ইউপি চেয়ারম্যানের নামে মামলা Logo পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে জেলা পুলিশের সেহেরী বিতরণ অনুষ্ঠিত Logo ফরিদপুরের ‌রথ খোলা পতিতালয় থেকে উদ্ধার হল দুই তরুণীঃ পাচার চক্রের নারী পারু বেগমকে আটক করেছে পুলিশ Logo ঈশ্বরদীতে কোকেন ব্যবসায়ী আটক Logo নতুন করে পান বরজ নির্মাণ শুরু করেছেন পানচাষীরা Logo মৌসুমে আয় ১০ লাখ টাকাঃ স্ট্রবেরি চাষে সফল পাবনার কৃষক নজরুল ইসলাম Logo বালিয়াকান্দিতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও সন্তানকে মারপিট Logo পাংশায় পুলিশের অভিযানে ১কেজি গাঁজাসহ মাদক বিক্রেতা গ্রেফতার Logo মহম্মদপুরে বজ্রপাতে কোরআনের হাফেজ সহ দুই যুবকের মৃত্যু Logo দৌলতপুরের পদ্মার চর কৃষকের স্বপ্নের সমাহার
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

গার্ডারে চাপা পড়ল বিয়ের আনন্দ

মাত্র দুদিন আগে বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে দুই পরিবারের আত্মীয়তা শুরু। বেশ আনন্দেই কাটছিল সময়। বিয়ে, বউভাত—সবই হলো। গতকাল সোমবার ছিল কনের বাড়িতে বরের ফিরতি যাত্রা। সে যাত্রায় প্রাইভেট কারে করে কনের বাড়ি আশুলিয়ায় যাচ্ছিলেন দুই পরিবারের সদস্যরা। সবাই অপেক্ষায় ছিলেন বিয়ে-পরবর্তী আরেকটি আনন্দঘন মুহূর্তের। কিন্তু নিমেষেই শেষ হয়ে গেল সব উৎসব।

বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পের (বিআরটি) একটি গার্ডার পড়ল চলন্ত গাড়ির ওপর। দুই শিশু আর বর-কনেসহ গাড়িতে ছিলেন সাতজন। নববিবাহিত দম্পতি ছাড়া গাড়ির আর কেউ বেঁচে রইলেন না। গতকাল বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে রাজধানীর উত্তরায় বিমানবন্দর সড়কের জসীমউদ্‌দীন রোড মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তবে দীর্ঘ সময় পার হওয়ার পরও গার্ডারে চাপা পড়া গাড়িটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সন্ধ্যা সাতটার দিকে আরেকটি ক্রেন এনে তিন ঘণ্টা পর পাঁচজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় বিমানবন্দর সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

গার্ডারে চাপা পড়ে পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিআরটি। এই কমিটি আজ মঙ্গলবারের মধ্যেই প্রতিবেদন প্রকাশ করবে বলে জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন।

পুলিশ ও নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা জানান, রাজধানীর দক্ষিণখানের হৃদয়ের সঙ্গে আশুলিয়ার রিয়া মনির বিয়ে হয় গত শনিবার। গত শনিবার হৃদয় ও রিয়ার বিয়ে হয়। হৃদয়ের পরিবার দক্ষিণখান থানার কাওলা আফিল মেম্বারের বাড়ির ভাড়াটে। আর কনে রিয়া মনির বাড়ি আশুলিয়ার খেজুরবাগানে। গতকাল বিকেলে স্বজনেরা নবদম্পতিকে নিয়ে কনের বাবার বাড়ি যাচ্ছিলেন। তাঁদের গাড়িটি উত্তরার জসীমউদ্‌দীন রোডের মোড়সংলগ্ন সড়কে ওঠার পর হঠাৎ বিআরটির প্রকল্পের একটি গার্ডার তাঁদের বহন করা প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে। এই গাড়িতে আরোহী ছিলেন সাতজন। বর হৃদয়ের বাবা রুবেল (৬০), হৃদয়ের শাশুড়ি ফাহিমা (৪০), কনে রিয়া মনির খালা ঝরনা (২৮), ঝরনার দুই সন্তান জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (২)। ঘটনাস্থলেই তাঁদের মৃত্যু হয়। সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান হৃদয় ও রিয়া। পথচারীরা তাঁদের উদ্ধার করে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যান।

দুর্ঘটনার পর সেই ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এতে দেখা যায়, দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িটির আগে একটি মোটরসাইকেল, তার পরে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও দুটি প্রাইভেট কার ছিল। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি হৃদয়-রিয়ার গাড়িটির। গার্ডারটি সেটিকে চাপা দেয়।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান দুই পরিবারের সদস্যরা।

হৃদয়ের চাচাতো ভাই রাকিব (১৯) বলেন, বিকেলে তাঁরা দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে আসেন। এসে দেখেন গার্ডারের নিচে গাড়িতে সবাই আটকে পড়ে আছে। তাদের বের করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘সরকার কীভাবে এভাবে অব্যবস্থাপনার মধ্যে কাজ করছে? আমরা কার কাছে বিচার দিব?’

উত্তরা (পূর্ব) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম জানান, আসলে গার্ডারটি ওপর থেকে ছিঁড়ে পড়েনি। সেটা ক্রেন দিয়ে ওপরে তোলা হচ্ছিল। এ সময় গার্ডারসহ ক্রেনটি কাত হয়ে পড়ে। আর রাস্তার ওপর গার্ডারের নিচে চাপা পড়ে চলন্ত প্রাইভেট কারটি।

একই কথা বলেছেন, ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী। তারা বলেন, গার্ডারটি ক্রেন থেকে ছুটে যায়নি, বরং ক্রেনের একপাশ উল্টে পড়ে যায়। গার্ডারের ওজন নিতে না পেরে ক্রেনটি কাত হয়ে যায়। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী সবাই যে অভিযোগ করেছে তা হলো, যথেষ্ট সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ছাড়াই গার্ডারটি তোলা হচ্ছিল। তবে ঘটনার পর উৎসুক জনতা সেখানে ভিড় করেন। এ সময় উদ্ধার অভিযানে বিলম্ব হওয়ায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অবশ্য পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দিয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করে।

এদিকে দুর্ঘটনার পর উত্তরা এলাকায় যান চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিমানবন্দর সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়। ট্রাফিক উপকমিশনার (উত্তরা) সাইফুল হক জানান, উত্তরা থেকে সীমিত পরিসরে ঢাকার দিকে যান চলাচল করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।

যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন বিআরটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুল ইসলাম।

ঘটনার জন্য কে দায়ী এবং কীভাবে ঘটল জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি না জেনে কিছু বলতে পারব না। তবে ক্রেন কাত হয়ে যায়—এটা যান্ত্রিক সমস্যা। এটা নিরাপত্তাব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়।’

জবাবদিহির অভাবের কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটে বলে মনে করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, বিআরটি প্রকল্প ঘিরে এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়। ২০১৯ থেকে বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে কখনো প্রাণহানি ঘটেছে, কখনো আহত কিংবা পঙ্গুত্ববরণ করেছে। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা ঘটার পরে শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি। এখানে জবাবদিহির জায়গাটা একেবারেই দুর্বল। যে কারণে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। অথচ এ ধরনের প্রকল্পে নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যয়ও ধরা থাকে।

জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুহাম্মদ ইয়াছিন গণমাধ্যমকে বলেন, এ রকম ব্যস্ত রাস্তায় নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে এত বড় কাজ করা কোনোভাবেই উচিত হয়নি। কাজ করার আগে ওই ক্রেনের সক্ষমতা যাচাই করা উচিত ছিল। এটি অবশ্যই অবহেলা। দায়ী ব্যক্তিরা দণ্ডবিধির ৩০৪ক ধারায় অপরাধ করেছেন।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৫ জুলাই গাজীপুরে একই প্রকল্পের ‘লঞ্চিং গার্ডার’ চাপায় এক নিরাপত্তারক্ষী নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় এক শ্রমিক ও একজন পথচারী আহত হয়েছিলেন। ২০১৭ সালে ১৩ মার্চ রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট এলাকায় নির্মাণাধীন মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের গার্ডার পড়েও নিহতের ঘটনা ঘটেছে। তারও আগে ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে মুখ থুবড়ে পড়ে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকার নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের তিনটি গার্ডার। এতে নিহত হন ১৫ জন, আহতের সংখ্যা অর্ধশতাধিক।

প্রধানমন্ত্রীর শোক

ক্রেন ছিঁড়ে গার্ডারের চাপায় হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী মৃতব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং আহত ব্যক্তিদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

কাশিয়ানীতে ভুয়া প্রত্যয়ন দেওয়ায় ইউপি চেয়ারম্যানের নামে মামলা

error: Content is protected !!

গার্ডারে চাপা পড়ল বিয়ের আনন্দ

আপডেট টাইম : ১১:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ অগাস্ট ২০২২

মাত্র দুদিন আগে বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে দুই পরিবারের আত্মীয়তা শুরু। বেশ আনন্দেই কাটছিল সময়। বিয়ে, বউভাত—সবই হলো। গতকাল সোমবার ছিল কনের বাড়িতে বরের ফিরতি যাত্রা। সে যাত্রায় প্রাইভেট কারে করে কনের বাড়ি আশুলিয়ায় যাচ্ছিলেন দুই পরিবারের সদস্যরা। সবাই অপেক্ষায় ছিলেন বিয়ে-পরবর্তী আরেকটি আনন্দঘন মুহূর্তের। কিন্তু নিমেষেই শেষ হয়ে গেল সব উৎসব।

বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পের (বিআরটি) একটি গার্ডার পড়ল চলন্ত গাড়ির ওপর। দুই শিশু আর বর-কনেসহ গাড়িতে ছিলেন সাতজন। নববিবাহিত দম্পতি ছাড়া গাড়ির আর কেউ বেঁচে রইলেন না। গতকাল বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে রাজধানীর উত্তরায় বিমানবন্দর সড়কের জসীমউদ্‌দীন রোড মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তবে দীর্ঘ সময় পার হওয়ার পরও গার্ডারে চাপা পড়া গাড়িটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সন্ধ্যা সাতটার দিকে আরেকটি ক্রেন এনে তিন ঘণ্টা পর পাঁচজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় বিমানবন্দর সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

গার্ডারে চাপা পড়ে পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিআরটি। এই কমিটি আজ মঙ্গলবারের মধ্যেই প্রতিবেদন প্রকাশ করবে বলে জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন।

পুলিশ ও নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা জানান, রাজধানীর দক্ষিণখানের হৃদয়ের সঙ্গে আশুলিয়ার রিয়া মনির বিয়ে হয় গত শনিবার। গত শনিবার হৃদয় ও রিয়ার বিয়ে হয়। হৃদয়ের পরিবার দক্ষিণখান থানার কাওলা আফিল মেম্বারের বাড়ির ভাড়াটে। আর কনে রিয়া মনির বাড়ি আশুলিয়ার খেজুরবাগানে। গতকাল বিকেলে স্বজনেরা নবদম্পতিকে নিয়ে কনের বাবার বাড়ি যাচ্ছিলেন। তাঁদের গাড়িটি উত্তরার জসীমউদ্‌দীন রোডের মোড়সংলগ্ন সড়কে ওঠার পর হঠাৎ বিআরটির প্রকল্পের একটি গার্ডার তাঁদের বহন করা প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে। এই গাড়িতে আরোহী ছিলেন সাতজন। বর হৃদয়ের বাবা রুবেল (৬০), হৃদয়ের শাশুড়ি ফাহিমা (৪০), কনে রিয়া মনির খালা ঝরনা (২৮), ঝরনার দুই সন্তান জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (২)। ঘটনাস্থলেই তাঁদের মৃত্যু হয়। সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান হৃদয় ও রিয়া। পথচারীরা তাঁদের উদ্ধার করে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যান।

দুর্ঘটনার পর সেই ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এতে দেখা যায়, দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িটির আগে একটি মোটরসাইকেল, তার পরে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও দুটি প্রাইভেট কার ছিল। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি হৃদয়-রিয়ার গাড়িটির। গার্ডারটি সেটিকে চাপা দেয়।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান দুই পরিবারের সদস্যরা।

হৃদয়ের চাচাতো ভাই রাকিব (১৯) বলেন, বিকেলে তাঁরা দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে আসেন। এসে দেখেন গার্ডারের নিচে গাড়িতে সবাই আটকে পড়ে আছে। তাদের বের করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘সরকার কীভাবে এভাবে অব্যবস্থাপনার মধ্যে কাজ করছে? আমরা কার কাছে বিচার দিব?’

উত্তরা (পূর্ব) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম জানান, আসলে গার্ডারটি ওপর থেকে ছিঁড়ে পড়েনি। সেটা ক্রেন দিয়ে ওপরে তোলা হচ্ছিল। এ সময় গার্ডারসহ ক্রেনটি কাত হয়ে পড়ে। আর রাস্তার ওপর গার্ডারের নিচে চাপা পড়ে চলন্ত প্রাইভেট কারটি।

একই কথা বলেছেন, ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী। তারা বলেন, গার্ডারটি ক্রেন থেকে ছুটে যায়নি, বরং ক্রেনের একপাশ উল্টে পড়ে যায়। গার্ডারের ওজন নিতে না পেরে ক্রেনটি কাত হয়ে যায়। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী সবাই যে অভিযোগ করেছে তা হলো, যথেষ্ট সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ছাড়াই গার্ডারটি তোলা হচ্ছিল। তবে ঘটনার পর উৎসুক জনতা সেখানে ভিড় করেন। এ সময় উদ্ধার অভিযানে বিলম্ব হওয়ায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অবশ্য পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দিয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করে।

এদিকে দুর্ঘটনার পর উত্তরা এলাকায় যান চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিমানবন্দর সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়। ট্রাফিক উপকমিশনার (উত্তরা) সাইফুল হক জানান, উত্তরা থেকে সীমিত পরিসরে ঢাকার দিকে যান চলাচল করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।

যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন বিআরটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুল ইসলাম।

ঘটনার জন্য কে দায়ী এবং কীভাবে ঘটল জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি না জেনে কিছু বলতে পারব না। তবে ক্রেন কাত হয়ে যায়—এটা যান্ত্রিক সমস্যা। এটা নিরাপত্তাব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়।’

জবাবদিহির অভাবের কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটে বলে মনে করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, বিআরটি প্রকল্প ঘিরে এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়। ২০১৯ থেকে বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে কখনো প্রাণহানি ঘটেছে, কখনো আহত কিংবা পঙ্গুত্ববরণ করেছে। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা ঘটার পরে শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি। এখানে জবাবদিহির জায়গাটা একেবারেই দুর্বল। যে কারণে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। অথচ এ ধরনের প্রকল্পে নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যয়ও ধরা থাকে।

জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুহাম্মদ ইয়াছিন গণমাধ্যমকে বলেন, এ রকম ব্যস্ত রাস্তায় নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে এত বড় কাজ করা কোনোভাবেই উচিত হয়নি। কাজ করার আগে ওই ক্রেনের সক্ষমতা যাচাই করা উচিত ছিল। এটি অবশ্যই অবহেলা। দায়ী ব্যক্তিরা দণ্ডবিধির ৩০৪ক ধারায় অপরাধ করেছেন।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৫ জুলাই গাজীপুরে একই প্রকল্পের ‘লঞ্চিং গার্ডার’ চাপায় এক নিরাপত্তারক্ষী নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় এক শ্রমিক ও একজন পথচারী আহত হয়েছিলেন। ২০১৭ সালে ১৩ মার্চ রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট এলাকায় নির্মাণাধীন মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের গার্ডার পড়েও নিহতের ঘটনা ঘটেছে। তারও আগে ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে মুখ থুবড়ে পড়ে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকার নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের তিনটি গার্ডার। এতে নিহত হন ১৫ জন, আহতের সংখ্যা অর্ধশতাধিক।

প্রধানমন্ত্রীর শোক

ক্রেন ছিঁড়ে গার্ডারের চাপায় হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী মৃতব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং আহত ব্যক্তিদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।