মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী মধুমতী ও নবগঙ্গা এ দুটি নদী নাব্য হারিয়ে মরে যেতে বসেছে। বালু ও পলি জমে ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর তলদেশ। কমে যাচ্ছে পানির প্রবাহ। নদীর বুকে জেগে উঠছে নতুন নতুন চর। এ কারণে নদী-তীরবর্তী এলাকার প্রায় আট হাজার হেক্টর জমিতে দেখা দিয়েছে সেচ সংকট। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এই দুটি নদীর চর জবরদখলে নিয়ে এখন করছেন চাষাবাদ।
মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার পূর্ব পাশ দিয়ে মধুমতী ও পশ্চিম পাশ দিয়ে নবগঙ্গা নদী প্রবাহিত।
স্থানীয়রা জানান, এক সময় দুটি নদীতেই পর্যাপ্ত পানি প্রবাহ ছিল। তা দিয়ে চাষাবাদ করার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে খনন না হওয়ায় নদীর তলদেশে পলি জমে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে জেগে উঠেছে বিশাল চর।
অনেকে আবার নদীর কিছু জায়গা ভরাট করে বসতবাড়ি গড়ে তুলেছেন। নদীর অভয় আশ্রমে এখন আর তেমন মাছ পাওয়া যায় না।
মধুমতি ও নবগঙ্গা নদী একসময় ছিল প্রবল খরস্রোতা এবং নদী পাড়ের মানুষের কাছে ছিল মূর্তিমান আতঙ্ক। কিন্তু বর্তমানে এ দুটি নদী নব্য হারিয়ে ফেলায় বর্ষাকালে এর ভয়াল রূপ আর চোখ পড়ে না। প্রমত্তা মধুমতী নদীর ঢেউ এখন শুধুই স্মৃতি। উপজেলার পূর্ব পাশ দিয়ে প্রবাহিত এ নদীপথে শিল্পনগরী খুলনা, বৃহত্তর বরিশাল এবং রাজধানী ঢাকায় খুব সহজেই যাতায়াতের সুযোগ ছিল। একসময় পণ্যবাহী বড় বড় জাহাজ এ নদীপথে দেশের বিভিন্ন নৌবন্দরে নিয়মিত আসা-যাওয়া করত। কিন্তু বর্তমানে শিরগ্রাম এলাকা থেকে শুরু করে পাঁচুড়িয়া পর্যন্ত নদীবক্ষে বিশাল চর পড়ার কারণে মহম্মদপুরের অংশ একেবারেই নাব্য হারিয়ে ফেলেছে। নাব্য কমে যাওয়ায় ক্রমান্বয়ে মরে যাচ্ছে মধুমতী। শুকিয়ে যাচ্ছে নদী ও আশপাশের খালবিল। স্বাভাবিক পানির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে সেচকাজ।
মহম্মদপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী বিনোদপুর ও মাগুরা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নবগঙ্গা নদীটি এখন পরিণত হয়েছে আবাদি ক্ষেতে। যে নদী একসময় ভেঙেচুরে গ্রাস করেছে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, মসজিদ-মন্দির ক্ষেত-খামার ও গাছপালা, সেই রাক্ষুসী নদী এখন মানুষের জীবনে এনে দিয়েছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। তাদের ভাগ্য উন্নয়নের একমাত্র সহায়ক এখন নবগঙ্গা নদী।
পরেশ মাঝি নামের এক স্থানীয় জেলে বলেন, নদীতে আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। তবুও বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখে পরিবার পরিজন নিয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছি।
স্থানীয় কৃষক জলিল শেখ বলেন, নদীতে চর পড়ায় আমরা পৈতৃক সম্পত্তি ফিরে পেয়ে চাষাবাদ করে ভালো আছি।
মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মুজাহিদ বলেন, দুটি নদীর নাব্য ফিরে পেতে খনন কাজের জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। তবে এটা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল।
সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর ও সংসদ সদস্য ড. শ্রী বীরেন শিকদার বলেন, বাংলাদেশের নাব্যতা হারানো নদীগুলো খনন করার সদিচ্ছা সরকারের রয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগবে।