নুরুল ইসলাম (৭৫) ও জুলেহা খাতুন (৬৯) দম্পতি সংসার করেছেন দীর্ঘ ৫০ বছর। এত বছর পর আবার ঢাক-ঢোল-বাঁশি বাঁজিয়ে ব্যান্ড পার্টি নিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছেন। বিয়েতে মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনি, আত্মীয়-স্বজনসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। দাওয়াত খেয়েছেন প্রায় অর্ধ-শতাধিক মানুষ।এমনই ঘটনা ঘটেছে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের কুন্টিয়ারচর গ্রামে।
এই দম্পতি হলেন কুন্টিয়ারচর গ্রামের মৃত হোসেন মন্ডলের ছেলে নুরুল ইসলাম ও পার্শ্ববর্তী মহিষাদাড়ি এলাকার মোবারক হোসেনের মেয়ে জুলেহা খাতুন। তাদের সংসারে তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। আছে নাতি-নাতনি ও নাতজামাই।
বর নুরুল ইসলাম বলেন, ১৯৭১ সালে তড়িঘড়ি করে মহিষাদাড়ি এলাকার মোবারক হোসেনের মেয়ে জুলেহা খাতুনের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। আমি যখন অনেক ছোট তখন মা বলেছিলেন, ছেলেকে ঢোল পিটিয়ে, বাঁশি বাজিয়ে ১০০ বরযাত্রী দিয়ে বিয়ে করাবেন। কিন্তু যুদ্ধের সময় হওয়ায় ও আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে তখন সেটা করা সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ২০০২ সালে আমার মা মারা যান। আমিও মাঝে মাঝে বিয়ের স্বপ্ন দেখি। বোনরা মায়ের ইচ্ছার কথা জানায়। মায়ের প্রতিজ্ঞা পালনের কথা বলে। ছেলে-মেয়েরাও নতুন করে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা পালনের কথা বলে। ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনিরা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এতে মায়ের প্রতিজ্ঞাও পূরণ হলো। আর এত দিন পরে হলেও বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় খুশি আমরা।
নুরুল ইসলামের বড় বোন সুফিয়া খাতুন বলেন, মায়ের ইচ্ছা পূরণ করতেই এই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। এত বছর পরে ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান খেলাম। আমরা সবাই অনেক খুশি।
১৭ জুলাই রবিবার সকাল থেকে আত্মীয়-স্বজনরা জড়ো হতে থাকে বরের বাড়িতে। গায়ে হলুদের পর ব্যান্ড পার্টি নিয়ে দুপুরে ১০০ বরযাত্রী নিয়ে কনের বাড়িতে যায়।
নুরুল ইসলামের নাতনি রুমি খাতুন ও নাতি রুহুল বলেন, আমরা অনেক খুশি। দাদা-দাদির বিয়ে খেলাম। অনেক মজা পেয়েছি। এই বয়সের বর-কনে দেখলাম। সবাই অনেক আনন্দ করেছে।
নুরুল ইসলামের দুই ছেলের শাশুড়িও উপস্থিত ছিলেন বরযাত্রী হিসেবে। তারা জানায়, বেয়াই-বেয়াইনের বিয়ে খেতে এসেছিলাম। আমরা অনেক আনন্দ করে গোসল করিয়ে বর সাজিয়ে দিয়েছি। বরযাত্রী হয়েও গিয়েছিলাম।
আরও পড়ুনঃ ফরিদপুর চিরকুট লিখে যুবকের আত্মহত্যা
নুরুল ইসলামের ছেলে তারাচাঁদ মন্ডল বলেন, দাদির করা মানত রক্ষার জন্য বাবা-মায়ের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা করা হলো। তবে আমরা সকলেই খুব খুশি।
নুরুল ইসলামের পুত্রবধূ আফরোজা খাতুন বলেন, বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতায় আমরা আনন্দ করে শেষ করেছি। এই বয়সে তাদের বিয়ে দেখতে পাব ভাবতেও পারিনি।
নুরুল ইসলামের জামাই জিয়ারুল ইসলাম বলেন, শ্বশুরের নতুন করে বিয়ে দেখলাম। এটা বিরল ঘটনা। বিয়ের এত দিন পর আনুষ্ঠানিকতা হওয়ায় এলাকার অধিকাংশ মানুষ এসেছিল। বিয়েবাড়ির লোকজনের মতো খুশি এলাকাবাসীও।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha