ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়ন পরিষদের মূল ভবন বা কার্যালয় ব্যবহার করেন না নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান মোঃকামাল আহমেদ। তিনি পরিষদের যাবতীয় কার্যক্রম চালাচ্ছেন তার নিজ এলাকা সহস্রাইল বাজারের ব্যাক্তিগত অফিসে বসে। ফলে সংখ্যা গরিষ্ঠ ইউনিয়ন বাসীর সুযোগ-সুবিধার তোয়াক্কা না করে বা তাদের মতামত না নিয়ে চেয়ারম্যান তার নিজের ইচ্ছে মতো পরিষদের কার্যক্রম স্থানান্তর করায় ইউনিয়নের ২৩ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ইউনিয়নের পরিসেবা গ্রহণ করতে গিয়ে তারা আর্থিক ও সময় জনিত ক্ষতি এবং হয়রানির সম্মুখীন হচ্ছেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে যেমন তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে তেমনি আলোচনা- সমালোচনার ঝড় বইছে গোটা ইউনিয়ন জুড়ে।
তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, ২৯ টি গ্রাম নিয়ে গঠিত শেখর ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৪৩ হাজার। ঐতিহাসিক কাল থেকেই ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় বা বোর্ড অফিসটি ইউনিয়নের সাবেক ৩ ও বর্তমানে ৮ নং ওয়ার্ডের চর শেখর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত। কারণ গ্রামটি ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থানে যেমন অবস্থিত তেমনি আয়তন, ঐতিহ্য, জনসংখ্যা বিবেচনায় এ গ্রামের নামেই নামকরণ করা হয়েছে ইউনিয়নের।
আরও পড়ুনঃ নিখোঁজের ৫ দিন পর নদীতে ভেসে উঠল সাংবাদিকের লাশ
স্বাধীনতা পরবর্তী কাল থেকে যত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তারা সকলেই এই বোর্ড অফিসে বসেই পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। যে কারণে ২০১০-১১ অর্থ বছরে ইউনিয়ন কার্যালয়ের আধুনিকায়ন করে নির্মিত হয় দ্বীতল বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন ইউনিয়ন কমপ্লেক্স ভবন।
কিন্তু ব্যাতিক্রমী কান্ড ঘটিয়েছেন ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ কামাল আহমেদ। তিনি এই আধুনিক কমপ্লেক্স ভবন উপেক্ষা করে নিজের ব্যাক্তিগত অফিসকে পরিষদের কার্যালয় হিসাবে ব্যবহার করছেন অভিযোগ উঠেছে । পরিষদের অনলাইন পরিসেবা, গ্রাম আদালত সহ সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এই অফিস থেকে।
একটি সূত্রের দাবী, পরিষদের মূল ভবনের ডিজিটাল সরঞ্জামাদী সহ সকল অস্থাবর জিনিস পত্র সরিয়ে আনা হয়েছে চেয়ারম্যান কামাল আহমেদের এই ব্যাক্তিগত অফিসে। ৬ জুলাই বুধবার দুপুর ১২ টায় সরেজমিন শেখর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় পরিষদের সব কক্ষে তালা ঝুলছে। পরিষ্কার-পরিছন্নতার অভাবে বিশাল পরিষদ ভবন ও এর বিস্তৃত আঙ্গিনাটিকে দেখে মনে হয়েছে পরিত্যক্ত কোন বাসগৃহ। সেখানে ব্যাগ হাতে কয়েক জন নারী-পুরুষ জটলা পাকিয়ে বসে আছেন। এদের মধ্যে রিনা বেগম নামে একজন জানান, ঈদ উপলক্ষে ১০ কেজি চাউলের একটা সিলিপ পেয়েছেন তিনি। সকাল ১০ টায় এসে বসে রয়েছেন সেটা নেয়ার জন্য। বেলা ১২ টায় শুনতে পাচ্ছেন চেয়ারম্যান এখানে অফিস করেননা। তিনি চাউল দিচ্ছেন সহস্রাইল বাজারে। একশত টাকা খরচ করে এখন কে সেখানে চাউল আনতে যাবে? এসময় উপস্থিত অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে চলে যান।
সহস্রাইল বাজারে গিয়ে দেখা যায় সেখানে একটি মার্কেটের পিছনে ৩ টি কক্ষে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চলছে। তিন টেবিলে তিন জন কম্পিউটারে কাজ করছেন।দুই ব্যাক্তি সিলিপ বুঝে নিয়ে কয়েকজন জন মানুষের মাঝে চাউল বিতরন করছেন। এসময় চেয়ারম্যান, সচিব বা ট্যাগকর্মকর্তা কাউকে দেখা যায়নি।
চর শেখর গ্রামের মুকুল মোল্যা বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর দুই/তিন বার পুরাতন অফিসে এসেছেন। এরপর অফিস খুলছেন তার নিজ গ্রাম সহস্রাইলে। এতে আমাদের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের মানুষের ভীষণ সমস্যা হচ্ছে। সহস্রাইলের অবস্থান ইউনিয়নের শেষপ্রান্তে হবার কারণে অন্য প্রান্তের মানুষের সেবা পেতে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সহস্রাইলে গেলে দালাল ছাড়া কাজ হয়না বলে তিনি অভিযোগ করেন।
বাজিতপুর গ্রামের কৃষক সালাম শেখ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে দেখছি, বোর্ড অফিস শেখর গ্রামে। এখন নতুন অফিস হইছে সহস্রাইলে। একটা কাগজ আনতে গেলে দিন শেষ। তাও আবার অফিস কোথায় সেটা অনেকেই চেনেন না। শেখর ইউনিয়নের ঐতিহ্য ধ্বংস করে দেয়ার এ চেষ্টা খুবই দূঃখ জনক।
শেখর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রইসুল ইসলাম পলাশ বলেন, চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ তার এলাকার ৫/৬ টি গ্রামের ৮/৯ হাজার মানুষকে খুশি করতে পরিষদের কার্যালয় সরিয়ে নিয়েছেন। এতে ২৩ গ্রামের ৩০/৩৫ হাজার মানুষ দূর্ভোগে পড়েছেন। নিজের ব্যাক্তি স্বার্থে একজন চেয়ারম্যান এমন অশুভ সিদ্ধান্ত নিতে পারেননা। কামাল আহমেদ পরিষদের মূল ভবন ব্যবহার না করায় রাষ্ট্রীয় এই স্থাপনা নষ্ট হচ্ছে, যা দূঃখজনক।
ইউনিয়নের দুইবারের আরেক সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ ইসরাফিল মোল্লা বলেন, আমিও সহস্রাইলের মানুষ। দুইবার চেয়ারম্যান ছিলাম। সরকারি দপ্তরে বসেই মানুষকে সেবা দিয়েছি। কারণ সেটিই হচ্ছে সেবা প্রাপ্তির নির্ধারিত স্থান। সেবার জন্য একজন নাগরিকতো চেয়ারম্যানের পিছনে দৌড়ে বেড়াতে পারেনা। চেয়ারম্যান কামাল যেখানে অফিস খুলেছেন সে জায়গাটি অনেকেই চেনেননা। তাহলে মানুষ সেবা পাবে কিভাবে?
আরও পড়ুনঃ মধুখালীতে তক্ষক উদ্ধার
ইউনিয়ন কার্যালয় স্থানান্তরকে বেআইনি মন্তব্য করে যুক্তি দেখিয়ে এই সাবেক চেয়ারম্যান আরো বলেন, ইচ্ছে করলেই একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার বাড়িতে বসে উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম চালাতে পারেননা। কাজের জন্য তাকে সরকারি দপ্তরে আসতে হয়। ঠিক তেমনি একজন ইউপি চেয়ারম্যানও স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন কর্মকর্তা। তিনিও সরকারি দপ্তর এড়িয়ে যেখানে সেখানে অফিস খুলে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম চালাতে পারেননা।
মুঠোফোনে জানতে চেয়ারম্যান মোঃ কামাল আহমেদ বলেন, ঐ অফিসে বসা নিয়ে আমার সঙ্গে খুবই খারাপ আচরণ করা হয়েছে। ওখানে আমার স্টাফদের নিরাপত্তা নেই। এ অবস্থায় আমি সেখানে যেতে স্বাচ্ছন্দবোধ করিনা। একদিন সরাসরি সাক্ষাৎ করেন, বিস্তারিত বলবো। মূল ভবনের মালামাল স্থানান্তর প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি ফকিন্নির ছেলে নই যে ঐ অফিসের জিনিসপত্র দিয়ে আমাকে কাজ করতে হবে। এ সবই আমার নিজের টাকায় কেনা মালামাল।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, চেয়ারম্যানদের জন্য নির্ধারিত স্থান অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের বাইরে পরিষদের কার্যক্রম চালানোর কোন সুযোগ নেই। এটা আইনের সম্পূর্ণ ব্যত্যয়।এমনটি কোথাও ঘটে থাকলে প্রয়োজনীও ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha