‘আমীন’ শব্দের অর্থ ‘হে আল্লাহ! তুমি কবুল কর’। যা আমরা প্রত্যেক দোয়া বা প্রার্থনা শেষে বলে থাকি। কিন্তু রাসূল (ছা.) প্রত্যেক জেহরী ছালাত অর্থাৎ ফজর, মাগরিব এবং এশার ছালাতে সূরা ফাতিহা শেষ করে সশব্দে টেনে ‘আ-মীন’ বলতেন (বুখারী জুযউল ক্বিরাআহ, আবূ দাউদ, হাদীস নং. : ৯৩২, ৯৩৩)।
উপরন্তুু তিনি মুক্তাদীদেরকে ইমামের ‘আমীন’ বলা শুরু করার পর ‘আমীন’ বলতে আদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ইমাম যখন ‘গাইরিল মাগযুুবি আলাইহিম অলায যয়া-ল্লীন’ বলবে, তখন তোমরা ‘আমীন’ বল। কারণ ফেরেশতাবর্গ ‘আমীন’ বলে থাকেন (সহীহুল বুখারী, ৭৮০-৭৮২, ৪৪৭৫, ৬৪০২, সহীহ মুসলিম) ১।
আত্বা বলেন, আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের (রা.) সরবে ‘আমীন’ বলতেন। তাঁর সাথে মুক্তাদীদের ‘আমীন’ এর আওয়াযে মসজিদ গুঞ্জরিত হয়ে উঠত (বুখারী তা’লীক্ব ১/১০৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং. : ৭৮০)২।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছা.) বলেন, ইমাম যখন ‘গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায য-ল্লীন’ বলবেন, তখন তোমরা ‘আমীন’ বল। কারণ যার কথা ফেরেশতাদের কথার সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের সকল পাপ ক্ষমা হয়ে যাবে (ছহীহ বুখারী, হাদীস নং. : ৭৮২, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১০৭-৮)।৩
বর্ণিত হয়েছে, অন্য হাদীসে এসেছে, তোমরা ‘আমীন’ বল, আল্লাহ তোমাদের দু‘আ কবুল করবেন (আবু দাউদ, হাদীস নং.: ৯৭২, মুসলিম)।৪
ড. মুযাফফর বিন মুহসিন রচিত ‘জাল হাদীসের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছা.)- এর ছালাত’ গ্রন্থের ২৫০ পৃষ্ঠায় আরো বলা হয়েছে ইমাম তিরমিযী (রা.) বলেন, ‘রাসূলের ছাহাবী. তাবেঈ এবং তাদের পরবর্তী মুহাদ্দিছগণের সকলেই এই কথা বলেছেন যে, মুছল্লী ‘আমীন’ জোরে বলবে, নীরবে নয়। ইমাম শাফেঈ, আহমাদ ও ইসহাক্ব এ কথাই বলেছেন (তিরমিযী ১/৫৭-৫৮ পৃষ্ঠা)।
মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব রচিত ছালাতুর রাসূল (ছা.) গ্রন্থের ১০৩ পৃষ্ঠায় সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, ‘আমীন’ বলার পক্ষে ১৭টি হাদীস এসেছে (আর-রাওযাতুন নাদিইয়াহ ১/২৭১)।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এতগুলো হাদীছ থাকা সত্তে¡ও ‘হেদায়া’ কিতাবে বলা হয়েছে ‘মুক্তাদীরা ‘আমীন’ নিম্নস্বরে বলবে (হেদায়া ১/১০৫ পৃষ্ঠা)।
হানাফী আলিমগণদের মধ্যে শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী (রহ.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.) সূরা ফাতিহার শেষে ‘আমীন’ বলতেন জাহরী ছালাতে (অর্থাৎ মাগরিব, ইশা ও ফজরে) উচ্চস্বরে আর সিররী ছালাতে (অর্থাৎ যহুর ও আসরে) নিম্নস্বরে (মাদারিজুন নুবুওয়াত, পৃষ্ঠা ২০১)।
আল্লামা আব্দুল হাই লক্ষৌবী (রহ.) বলেন, ন্যায়সঙ্গত কথা হলো, দলীল অনুযায়ী উচ্চস্বরে আমীন বলা মজবুত (আত তা‘লীকুল মুমাজ্জাদ, পৃষ্ঠা নং. : ১০৩)। তিনি আরো বলেন, গভীর চিন্তা ও গবেষণার পর আমরা উচ্চস্বরে ‘আমীন’ বলাকেই অতি সঠিক পেলাম। কেননা এটা নবী (ছা.) থেকে বর্ণিত রিওয়াতের সাথে মিলে। আর নিম্নস্বরে ‘আমীন’ বলার রিওয়াতগুলো দূর্বল (আস সিআয়া, ১/১৩৬)।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, মসজিদে ইমাম ‘আমীন’ বলার পূর্বেই মুক্তাদীদের ‘আমীন’ বলা যেমন সমীচিন নয় পাশাপাশি ইমাম কর্তৃক ‘য-ল্লীন’ বলার পর ওয়াক্ফ না করেই একই সঙ্গে ‘আমীন’ বলা ও সঠিক নয়। বরং ইমাম ওয়াক্ফ করবেন (তাফসীরে কুরতুবী ১/১২৭ পৃষ্ঠা)। উপরন্তু কোন কোন মসজিদে ইমামের ‘আমীন’ বলা শেষ হলে তারপর মুক্তাদীগণ ‘আমীন’ বলেন যাও একটা বাড়াবাড়ি বলে উল্লেখ করেছেন ড. মুযাফফর বিন মুহসিন তার রচিত ‘জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছা.)- এর ছালাত’ গ্রন্থের ২৫৩ পৃষ্ঠায়। উক্ত পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখিত হয়েছে বরং ইমাম ‘আমীন’ বলা শুরু করলে মুক্তাদীরাও একই সঙ্গে ‘আমীন’ বলবে। যাতে করে ইমাম-মুক্তাদীর ‘আমীন’ ও ফেরেশতাদের ‘আমীন’ এক সঙ্গে হয়। অন্যথা ‘আমীন’ বলার ফজীলত থেকে বঞ্চিত হবে (ফাতাওয়া উছায়মীন, ১৩/৭৮ পৃষ্ঠা)।
নীরবে ‘আমীন’ বলার পক্ষে যে কয়টি বর্ণনা এসেছে, তার সবই যঈফ এবং জাল বলে উল্লেখ করা হয়েছে ড. মুযাফফর বিন মুহসিন রচিত ‘জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছা.)- এর ছালাত’ গ্রন্থের ২৪৮ পৃষ্ঠায়। আর আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ তার রচিত ‘রাসূল (ছা.) এর ছালাত বনাম প্রচলিত ছালাত গ্রন্থের ১৭২ পৃষ্ঠায়’ বলেন, চুপে আমীন বলার কোন ছহীহ হাদীছ নেই। কোন যঈফ হাদীছও নেই। ছাহাবী, তাবেঈগণের পক্ষ থেকে কোন ছহীহ আছারও পাওয়া যায় না।
পরিশেষে একটি কথা না বললেই নয় যে আমাদের জোরে ‘আমীন’ বলায় কুন্ঠিত হওয়া উচিত নয়। কেননা আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছা.) বলেন, তোমাদের সালাম ও আমীন বলার ব্যাপারে ইয়াহুদীরা তোমাদের প্রতি যত বেশি হিংসা করে, আর কোন ব্যাপারে তারা তোমাদের প্রতি হিংসা করে না (ইবনে মাজাহ, হাদীস নং. : ৮৫৬)৫।
মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সত্য এবং সঠিকটি জানার এবং তা আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
সহায়ক গ্রন্থ ও উৎস সমূহঃ
১. স্বালাতে মুবশ্শির (ছা.) - আব্দুল হামীদ ফাইযী আল-মাদানী, পৃষ্ঠা নং. : ১৫৪।
২. ছালাতুর রাসূল (ছা.) - মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, পৃষ্ঠা নং. : ১০২।
৩. জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর ছালাত - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন, পৃষ্ঠা নং. : ২৫১।
৪. নবী ছালাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছলাত সম্পাদনের পদ্ধতি - অনুবাদ : আকরামুজ্জামান বিন আবদুস সালাম, আবু রাশাদ আজমাল বিন আবদুন নুর, পৃষ্ঠা নং. : ৯৯।
৫. রাসূল (ছা.) - এর ছালাত বনাম প্রচলিত ছালাত - আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ, পৃষ্ঠা নং. : ১৭২।
facebook : facebook.com/palashkhan/রহমিা ফাউন্ডশেনে/সত্যরে অন্বষেণ
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha