বিজ্ঞানী মাদাম কুরী'র ৮৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ মাগুরা জেলা শাখার উদ্যোগে আজ ৩ জুলাই ২০২২ দুপুর ১২টায় সৈয়দ আতর আলী পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চের কেন্দ্রীয় সদস্য প্রকৌশলী শম্পা বসুর সভাপতিত্বে সভায় আলোচনা করেন সাবেক অধ্যক্ষ কাজী নজরুল ইসলাম ফিরোজ, মাগুরা জেলার বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বিকাশ মজুমদার, কবি ওহিদ কামাল বাবলু, বালিদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ভূপতি কুমার বিশ্বাস। বিজ্ঞানী মাদাম কুরীর সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করেন বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ মাগুরা জেলা শাখার সংগঠক গোলাম পারভেজ। সভা পরিচালনা করেন বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চের জেলা সংগঠক মৃধা ফারিয়া সিদ্দিকী চৈতি।
আলোচনাবৃন্দ বলেন, মাদাম কুরি ১৯৬৭ সালে পরাধীন পোল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তৎকলীন সময়ে পোল্যান্ডে একটি ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয় ছিল সেখানে মেয়েরা ভর্তি হতে পারতো না। মাদাম কুরী প্যারিসের সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং পরবর্তীতে বিজ্ঞান গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। তৎকলীন সময়ে নারীদের জন্য বিজ্ঞান চর্চা করাটা সহজ ছিল না। সেই যুগে মাদাম কুরী সকল সংস্কার ও বাধা অতিক্রম করে বিজ্ঞানের জগতে এগিয়ে গেছেন। আবিষ্কার করেছেন বেশ কয়েকটি তেজস্ক্রিয় মৌল। তেজস্ক্রিয়তা সম্পর্কে অনেক মৌলিক গবেষণা রয়েছে তাঁর। পৃথিবীর একমাত্র বিজ্ঞানী যিনি বিজ্ঞানের দুটি শাখায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।
১৯০৩ সালে পদার্থ বিজ্ঞানে এবং ১৯১১ সালে রসায়নে। তিনি বিশ্ববিখ্যাত সরবন বিশ্ববিদ্যালয় তথা ফরাসি দেশের প্রথম মহিলা অধ্যাপক ছিলেন। কিন্তু এ সকল কিছু ছাপিয়ে তাঁর অসামান্য ব্যক্তিত্বই যেন সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠে। বজ্রকঠিন ইচ্ছাশক্তি, কাজ সম্বন্ধে নিখুঁত অনুসন্ধানী মন আর ইস্পাত দৃঢ় বলিষ্ঠতা এই ছিল তাঁর বৈশিষ্ট্য। নিজের পথে এমনি করেই দ্বিধাহীন চিত্তে এগিয়ে গেছেন তিনি।
কেবলমাত্র নোবেল পুরস্কার পাওয়া বিজ্ঞানী হিসেবে নন, মানবকল্যাণে নিবেদিত প্রাণ, জ্ঞানের জন্য অপার তৃষ্ণা, গভীর দেশপ্রেম, উদারতা, সামাজিক দায়িত্ববোধ--এমন অনেক মানবিক গুণের অধিকারী ছিলেন তিনি। বিজ্ঞানী হয়ে, বড় মানুষ হয়ে কেউ জন্মায় না। একজন মানুষের সংগ্রামই তাকে বড় মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। মানবকল্যাণে উৎসর্গকৃত এক সাধকের জীবন ছিল যেন তাঁর। মানবসমাজের মঙ্গলের জন্য জীবনকে নিবেদন করার এই মনোভাব তাঁকে অন্যন্য সাধারণ একজন বিজ্ঞানীতে পরিণত করেছিল। তাই আর্থিক অসচ্ছলতা থাকলেও ‘রেডিয়াম’ কে পেটেন্ট করেননি। পেটেন্ট করলে কোটি কোটি টাকার মালিক হতে পারতেন। কিন্তু বিজ্ঞানের আবিস্কারকে কিছু মানুষের মুনাফা তৈরির হাতিয়ার করতে দিতে চাননি।
বিজ্ঞান সবার জন্য--এই ছিল তাঁর মনোভাব। যত রেডিয়াম তিনি শোধন করেছিলেন বা উপহার পেয়েছিলেন তা সবই ল্যাবরেটরিতে দান করে গেছেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অনেক অসুস্থ অবস্থায় জীবনের পরোয়া না করে এক্স-রে মেশিন তৈরি করেছেন, মেশিন পরিচালনার প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, যুদ্ধক্ষেত্রে সেবা পৌঁছে দিয়েছেন।
বাহুল্যকে সবসময় পরিহার করেছেন জীবনে। এমনকি খ্যাতির শিখরে উঠেও প্রচলিত প্রথাগত সম্মানকে গ্রহণ করেছেন ঔদাসিন্যের সঙ্গে আর সামাজিক দায়হীন ঐশ্বর্যের পথ তিনি সবসময় পরিহার করেছেন। এসবই খুব সহজ ছিল তাঁর কাছে কারণ মাদাম কুরীর প্রাণ ছিল অন্যন্য সুন্দর ঐশ্বর্যে ভরা। মাদাম কুরীর ৬৬ বছরের বর্ণাঢ্য ও সংগ্রামী জীবন এবং তাঁর গবেষণা এই ছোট্ট আলোচনা সভায় তুলে ধরা খুব কঠিন।
নারীদের সম্পর্কে সমাজের সংস্কার ভাঙ্গতে এবং মানবকল্যাণে নিবেদিত বড় মানুষ হওয়ার আকাক্ষা জাগাতে মাদাম কুরীর জীবন সংগ্রাম ও কাজ অনুপ্রেরণা তৈরি করবে বলে প্রত্যাশা করেন আলোচনা সভার আয়োজকরা।