নওগাঁর আত্রাইয়ে গরুর খাবার খড় এখন আটি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খড়ের দাম বাড়ার সাথে সাথে দাম বেড়েছে গরুর দুধের। গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে দুধ কিনতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নি¤œ মধ্যবিত্ত গৃহস্থরা। অনেক পরিবারেই শিশুদের পুষ্টির জন্য প্রক্রিয়াজাত দুধ না কিনে এলাকা থেকে গরুর দুধ কিনেন। বাড়তি দামের কারণে দিশেহারা তারা। কৃষি বিভাগ বলছে, খড়ের বহুবিধ ব্যবহারের কারণে খড়ের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়াও ধানি জমিতে পুকুর খননের কারণে বন্যার জন্য ধানের আবাদ কম হওয়ায় এমনটি হচ্ছে। সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে ১০০আটি খড় ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেশি দামেরাকারণে মেশিনে খড় কেটে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অতীতে কোনদিন এত টাকায় খড় বিক্রি হতে দেখা যায়নি। অন্যদিকে গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে দুধেরও। কয়েকমাস আগেও যে দুধের দাম ছিল ৪০-৪৫ টাকা লিটার সেই দুধ এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা লিটার দরে।
গো-খাদ্য ও দুধ ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগেরদিনে মাঠে ধান কাটার শেষে মাঠে পরে থাকা খড় তুলে নিয়ে বাড়িতে রাখতেন চাষীরা। সেই খড় গরু দিয়ে মারাই করে পালা করে রাখতেন। পরে সেই খড় গরুর খাদ্য হিসাবে বিক্রয় করতেন। সেই খড়ের সঙ্গে অন্যান্য সামগ্রী মিশিয়ে গরুকে খাওয়াতেন। বর্তমানে হারভেস্টিং মেশিন দিয়ে ধান কাটার পর ধানে ক্ষেতে যে অবশিষ্ট খড় পরে থাকে তা মাঠেই পুরিয়ে ফেলছেন চাষীরা। যার ফলে এখন আর চাইলেই মিলছে না খড়।
এছাড়া আগের দিনে আমন ধান অগ্রহায়ণ মাসে শুষ্ক মৌসুমে কাটার ধুম পরে যেত। যাতে ধানেরখড় ইচ্ছে মত চাষীরা গরু দিয়ে মারাই করে বড় বড় খড়ের পালা দিয়ে রাখতেন গৃহস্থরা। তখন প্রায় প্রতি বাড়িতেই গরুর খাবার খড়ের কোন অভাব দেখা যেত না। চাষীরা ইচ্ছে মতো ধান লম্বা করে কেটে বাড়িতে নিয়ে আসতেন। আর খড় হিসাবে মারাই করে পালা দিয়ে রাখতেন। কিন্তু এখন আর আমন ধানের আবাদ কৃষকরা করেন না বলেলই চলে। বর্তমানে ইরি, বরো ধান চাষ করাই এবং বর্ষা মৌসুমে ধান কাটার ফলে জমিতে পানি জমে যাওয়ায় ইরি, বরো ধানের গোড়াতে কাটা সম্ভব হয়না। শুধু ধানের শিষ টুকু কেটে আনতে দেখা যায়।
এছাড়া কৃষকদের জৈষ্ঠ্য, আষাঢ় মাসে ধান কাটার ভড়া মৌসুম হওয়ায় কৃষকরা ধান কাটা-মারাই নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করায়খরের প্রতি নজর দিতে পারেনা। সেই জন্যও খড়ের আকাল পরবর্তীতে দেখা দেয়। আজকাল গো-খাদ্যের আকাল সারা দেশ ব্যাপী বিরাজ করছে। এখন প্রচুর পরিমান ধানি জমিতে পুকুর খনন করছে চাষীরা। যার ফলে ধানি জমির পরিমান দিন দিন কমে যাচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ রহনপুর রেল স্টেশন থেকে আম নিয়ে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন ছুটলো আজ
শহিদুল নামের একজন খড় ব্যবসায়ী জানান, গত আমন মৌসুমে ১০০ আটি খড় বিক্রি করেছেন ৪০০-৫০০ টাকায়। বর্তমানে ১০০ আটি খড় বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকায়। ইউনুস নামে একজন দুধ ব্যবসায়ী জানান, আগে প্রতি কেজি দুধ বিক্রি হতো ৩৫-৪০ টাকায়। বর্তমানে সে দুধ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা কেজি দরে। গরুর খাদ্যের দাম যোগানের পর এখন সামান্য লাভেই দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে। তার মতে এভাবে পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামীতে দুধের দাম আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।
চা ব্যবসায়ী মিজান বলেন, যদি গরুর খাদ্যের সংকট হয় তাহলে, দুধের উৎপাদনের উপর তার প্রভাব পরবে। যান্ত্রিক উপায়ে ধান কাটা-মারাইয়ের জন্যও খড়ের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ উপ-সহকারী কর্মকর্তা জানান, বন্যা জনিত কারণে আমন ধান না হওয়ায় গো-খাদ্যের অভাব দেখা দিলে দুধ উৎপাদনে তার প্রভাব পড়বে। সেক্ষেত্রে বেশি দামে গো-খাদ্য কিনতে হচ্ছে গরুর মালিকদের। আর এ প্রভাব পড়ছে দুধের দামে। এরপরও গো-খাদ্যের দামের তুলনায় দুধের দাম তেমন বৃদ্ধি করেননি গোয়ালারা।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha