পাবনার চাটমোহরের হান্ডিয়াল বেজপাটিয়াতা গ্রামে আব্দুস সামাদ (ঠান্টুর) ছেলে আব্দুল হালিম (৩৫) এর বাড়িতে স্বামীর স্বীকৃতি চেয়ে তিন মাস যাবত দ্বারে দ্বারে ঘুরছে ধর্ম পরিবর্তন করে বিয়ের পিড়িতে বসা নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা মরিয়ম আক্তার রত্না (৩০)। সে তার স্বামী আব্দুল হালিমের বাড়িতেই গত শুক্রবার থেকে স্ত্রীর স্বীকৃতি চেয়ে নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা রত্না অনশন শুরু করেন।
শ্বশুরের বাড়িতে অন্তঃসত্ত্বা রত্নাকে হত্যা করে ঘরের ডাবের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছে বলে অভিযোগ করে অন্তঃসত্ত্বা রত্না। সে বলেন, আমার শশুর আব্দুস সামাদ ও তার স্ত্রী মঞ্জিলা খাতুনসহ তার দুই ছেলে রিপন ও ঠান্টু মিলে রাতে আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এ সময় আমি নিজে আরাল থেকে বিষয়টি জানতে পেরেছি।
আমাকে হত্যার পরিকল্পনা বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান ও আমার চাচা শশুর আব্দুল মান্নানসহ গ্রাম বাসিকে জানিয়েছি। এদিকে ধর্ম পরিবর্তন করে মুসলিম হওয়া নারীকে বিয়ে করার পর স্ত্রী'র স্বীকৃতি না দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা এলাকা জুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনার স্থলে গিয়ে জানাযায়, বেজপাটিয়াতা গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে আব্দুল হালিম পূর্বেও আরোও দু’টি বিয়ে করেছিল, বড় স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে ২ টি সন্তান ও মেজ বউ আছে এবং ছোট বউ রত্না খাতুন সাতক্ষীরা জেলার দেভাটা উপজেলার হিজলডাঙ্গা গ্রামের শ্রী সুভল চন্দ্রের মেয়ে।
আব্দুল হালিম ২০১৭ সালে ঢাকায় গাবতলিতে পাথরের ব্যবসা করতো। সেই সুবাদে ঢাকার গাবতলিতে রত্না খাতুনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে আব্দুল হালিম নিজের পূর্বের বিয়ের কথা আড়াল করে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ইসলামী শরীয়া মোতাবেক রত্নাকে বিয়ে করে এবং তার সঙ্গে তিন বছর ঢাকায় সংসার করে।
হালিমের গ্রামের বাড়ীতে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেই শুরু করতো বিভিন্ন তাল-বাহানা। বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে বার বার নিয়েছে মোটা অংকের টাকা।
২০২১ সালের অক্টোবর মাসে রত্ন্ার কাছ থেকে আরো ১০ লক্ষ্য টাকা দাবি করে, রত্না দিতে অস্বীকার করলে রত্নাকে রেখে সে পালিয়ে যায়। রত্নার জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। উপায় না পেয়ে স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে হাজির হন স্বামীর গ্রামের বাড়ী হান্ডিয়ালে। কোন উপায় না পেয়ে অভিযোগও দিয়েছেন স্থানীয় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে। ধর্না ধরেছেন ইউপি চেয়ারম্যান, গ্রামের মাতব্বরদের কাছে, তবুও মিলছেনা প্রতিকার।
অনশনরত রত্না খাতুন সাংবাদিকদের জানান, আমি হিন্দু ধর্মের একজন মেয়ে ছিলাম, পরে মুসলিম হয়ে একজন মুসলিম পরিবারের ছেলেকে বিয়ে করে সুখে সংসার করি। এক পর্যায়ে আমার আগের সংসার ভেঙ্গে যায়। এরই মধ্যেই আব্দুল হালিমের সাথে পরিচয় হয় ঢাকায়। দুই বছর প্রেমের সম্পর্কের পরে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ৫০ হাজার টাকা কাবিন দিয়ে ইসলামী শরীয়া মাতাবেক ঢাকার গাবতলিতে হালিমের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। ঢাকা গাবতলি ভাড়া বাসায় হালিমের সাথে দীর্ঘ ৩ বছর আমার সাথে তার সংসার হয়।
বিয়ের পর আব্দুল হালিম আমার কাছ থেকে গ্রামের বাড়ী মেরামত ও তার ব্যবসার জন্য বিভিন্ন সময়ে সুকৌশলে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা নিয়েছে। তাতেও তার লোভ যায়নি, আমার নিজ নামের সম্পত্তি বিক্রি করে আবারো ১০ লক্ষ টাকা দাবি করে এবং বলে টাকা না দিলে হালিমের মা-বাবা মেনে নেবে না। আমি টাকা দিতে অস্বীকার করলে হালিম আমাকে বুঝতে না দিয়ে পালিয়ে আসে । এখন আমি নিরুপায় হয়ে স্বামীর স্বীকৃতির দাবিতে এখানে ৩ মাস যাবত দ্বারে দ্বারে অবস্থান করছি। আমার গর্ভে হালিমের ঔরসজাত নয় মাসের সন্তান রয়েছে। হালিম আমাকে স্ত্রীর স্বীকৃতি না দিলে এ জীবন নিয়ে আমি কোথায় দাড়াব, এখানে স্বীকৃতি না পেলে আমার ও গর্ভের সন্তানের লাশ যাবে।
আব্দুল হালিমের চাচা আব্দুল মান্নান বলেন, আমার ভাতিজা তাকে বিয়ে করেছে এটা আমরা জানি এবং তাদের কাবিন নামাও দেখেছি। এখন মেয়েটা অন্তঃসত্ত্বা মেয়েটাকে রেখে বাড়ীর সবাই পালিয়েছে। গত কয়েকদিন দিন যাবত মেয়েটা আমার বাড়ীতে আছে। দ্রুত এটার ফয়সালা হলে মেয়েটার জন্য ভাল হয়। এদিকে হালিমের সঙ্গে বার বার মুঠোফোনে (০১৭৫৮৪৭৭৯৫১) যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে হান্ডিয়াল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল করিম মাস্টার বলেন, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে বসে বিষয়টা স্থানীয় ভাবে সমাধানের চেষ্টা চলছে, তবে এখনো কোন সমাধান করতে পারিনি।
এ বিষয়ে হান্ডিয়াল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসএম নূরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মেয়েটি স্বামীর স্বীকৃতীর দ্বাবি চেয়ে লিখিত অভিযাগ দিয়েছে। বিষয়টা তদন্ত চলছে, তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।