কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে রেজাউল ইসলাম (৫৬) নামের এক প্রধান শিক্ষকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) ভোরে যদুবয়রা ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামের নিজ বাড়ির লোহার গ্রিল থেকে স্বজনরা লাশ উদ্ধার করে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে।
পরিবারের অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। নিহত ব্যক্তি যদুবয়রা ইউনিয়নের কেশবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বাগুলাট ইউনিয়নের শালঘর মধুয়া গ্রামের মৃত আনছার উদ্দিনের ছেলে।
নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী জানায়, প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম ঋণগ্রস্ত ছিলেন। কিছুদিন ধরে বিভিন্ন মানুষের কাছে মৃত্যুর কথা বলে মাপ চেয়েছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে ধার-দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হয়েই গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।
রেজাউল ইসলাম ১৯৯০ সাল থেকে কেশবপুরের নিদেনতলায় ঘরজামাই থাকতেন। উপজেলার শালঘরমধুয়ায় তার নিজের বাড়ি। শ্বশুর ইউসুফ আলীর কোনো পুত্রসন্তান না থাকায় তিনি শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। সেখানে থেকেই তিনি চাকরি করতেন। তার স্ত্রী শেফালী আক্তার চর আগ্রাকুণ্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তাদের ২ ছেলে রয়েছে।
আরও জানা গেছে, তিনি নতুন বাড়ি ও বাজারে একটি মার্কেট নির্মাণ করতে গিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকা ধার-দেনা করেন। দেনার টাকার জন্য স্বজনদের কাছে সহযোগিতা কামনা করতেন। গত সোমবার বিকেলে জন্মস্থান শালঘরমধুয়াতে যান তিনি।
সেখানে তিনি ভাইদের বলেন, দুই লাখ টাকা না দিলে তাকে আর পাওয়া যাবে না। পরে তার ভাইয়েরা তাকে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা দেন। তিনি টাকা নিয়ে রাতে রাতে অন্যদিনের মতই ঘুমিয়ে পড়েন।
এরপর হঠাৎ ভোররাতে নিজের বাড়ির সামনের পাশের গ্রিলে রশির সঙ্গে ঝুলতে দেখেন তার স্ত্রী। এ সময় স্ত্রীর চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে তাকে নিচে নামিয়ে ডাক্তারকে খবর দেওয়া হয়। স্থানীয় ডাক্তার এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কেশবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মুনসুর আলী বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার প্রধান শিক্ষক আড্ডায় চিরবিদায়ের কথা বলেছিল। কিন্তু সত্যিই চলে যাবেন তা ভাবতে পারিনি। আজ শোনা যাচ্ছে তার অনেক টাকা দেনা। হয়তো দেনার চাপে আত্মহত্যা করেছেন।
বরইচারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খন্দকার শাজাহান আলী বলেন, কয়েকদিন আগে রেজাউল ভাই মজা করে বলেছিল, ‘একটা কলা খাওয়াও ভোটের পরে কিন্তু মারা যাব।’ একথা শুনে আমি ও কয়েকজন শিক্ষক তাকে কলা খাইয়েছিলাম। কিন্তু সত্যিই চলে যাবেন বুঝতে পারিনি।
নিহতের স্ত্রী শেফালী আক্তার বলেন, কিছুই বুঝতে পারিনি। ধারদেনার কথা কিছু বলেনি। ভোরে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে গ্রিলে ঝুলতে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠেছিলাম। আমি আর কিছু জানি না।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ধারণা করা হচ্ছে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। নিজবাড়ির গ্রিলে ঝুলছিল এক প্রধান শিক্ষককের লাশ। ঝুলন্ত লাশ নিচে নামিয়ে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha