মহম্মদপুর উপজেলার পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত মধুমতী নদীর ভাঙনের তীব্রতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ফলে মহম্মদপুর উপজেলার মানচিত্র থেকে ক্রমাগত হারিয়ে যাচ্ছে চরপাচুড়িয়া, মহেষপুর, হরেকৃষ্ণপুর, আড়মাঝি, রায়পুর, রুইজানি ও ভোলানাথপুর গ্রাম।
গত দুই বছরে বর্ষা মৌসুমে মধুমতীর ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে ৪৫টি পরিবারের শতাধিক ঘরবাড়ি। এ বছর ভাঙনের মুখে রয়েছে অসংখ্য দোকানপাটসহ হাজার হাজার একর ফসলি জমি। ফলে আতঙ্কে রয়েছে নদীতীরের মানুষ।
গত বর্ষা মৌসুমে উপজেলার ছয়টি গ্রামের দুই থেকে তিন কিলোমিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বসুরধুলজুড়ি কালী মন্দির থেকে রুইজানি বিশ্বাস বাড়ি পর্যন্ত মধুমতী নদীর তীব্র ভাঙনরোধে এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জিও ব্যাগ ফেলে নদীভাঙন রোধ করা হলেও মহেষপুর, হরেকৃষ্ণপুর, আড়মাঝি এলকায় ভাঙন অব্যাহত থাকায় নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
সরজমিন হরেকৃষ্ণপুর এলাকায় গতকাল শনিবার সকালে দেখা গেছে, গত কয়েকদিনের ভাঙনে মাফুজার ও মিটুর মিয়ার বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সহায়-সম্বল হারিয়ে মিটুর মিয়া অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। অন্যদিকে মাফুজার মিয়া রাস্তার পাশে ছাপড়াঘর তুলে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
পানি কমতে থাকায় নদীভাঙন ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ভাঙন ভয়ংকর আকার ধারণ করায় নদীতীরে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভাঙনের মুখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন শাহাদত মোল্যা, ইবাদত মোল্যা, রমজান মিয়া, নান্নু, মৃদুল শেখ, মন্নু শেখ, পান্নু ও সলেমান শেখ। এ ছাড়া উপজেলার নদীতীরবর্তী চর পাচুড়িয়া, মহেষপুর, কাশিপুর, ভোলানাথপুর, আড়মাঝি, হরেকৃষ্ণপুর, ও রুইজানি এলাকার ভাঙনকবলিত অধিবাসীদের এখন দিন কাটছে আতঙ্কে।
এসব গ্রামের মসজিদ, মন্দির, ঈদগাহসহ হাজার হাজার একর ফসলি জমি ও বসতবাড়ি এ বছর বেশি ভাঙনের কবলে পড়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, মধুমতী নদীর ভয়াবহ ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপের আবেদন জানালেও ভূমিকা রাখছে না স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
গোপালনগর থেকে পাল্লা পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কি.মি. নদীর মাঝ বরাবর জেগে উঠেছে বিশাল চর। চরের কারণে স্রোতপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে প্রবল বেগে নদীতীরে ঢেউ আছড়ে পড়ায় নদীর ভাঙন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং উপজেলার নদীতীরবর্তী গ্রামগুলো ক্রমেই ভাঙনের কারণে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে।
এ ব্যাপারে মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামানন্দ পাল দৈনিক সময়ের প্রত্যাশাকে বলেন, খবর পেয়ে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে।
মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সরোয়ার হোসেন সুজন জানান, নদী ভাঙনরোধে তারা কাশিপুর এলাকায় প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫০ মিটার বাঁধ নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যেই শেষ করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। নতুন করে বরাদ্দ পেতে অধিদপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি নতুন করে বাঁধ নির্মাণ করতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন তারা।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. বীরেন শিকদার দৈনিক সময়ের প্রত্যাশাকে বলেন, নদী ভাঙনরোধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha