সরকার প্রধান শেখ হাসিনার ঘোষিত মুর্জিব বর্ষে থাকবে না কেনো গৃহহীন। সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় এবার ফরিদপুরের গৃহহীনের অভাব ঘুচবে ১৪৭০ পরিবারের। গৃহের অভাব লাঘবে মুখে হাসি ফুটেছে তাদের।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ফরিদপুরের নয়টি উপজেলাতে এক হাজার চারশ’ ৭০টি বাস্তুহারা পরিবারকে সেমিপাকা ঘর করে দেয়া হচ্ছে। ২১ সালের জানুয়ারী মাসের মধ্যেই এসব ঘর জমিসহ সুবিধাভোগীদের হাতে তুলে দেয়া হবে। উপকারভোগীদের এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।
মাঠ পর্যায়ে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন এসব ঘর করতে সবমিলিয়ে খরচ হচ্ছে প্রায় ২৫ কোটি ৭২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এই টাকায় তাদের জন্য ২০ ফুট বাই ২২ ফুট প্রস্থের ঘরে রয়েছে দু’টি কক্ষ, একটি রান্না ঘর, টয়লেট ও সামনে খোলা বারান্দা।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার শনিবার সকালে ফরিদপুরের সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নে নির্মিতব্য এই ঘর নির্মাণ কাজ পরিদর্শনকালে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায় পরিবারের জন্য উপহার স্বরুপ এসকল আশ্রয়স্থল করে দিচ্ছেন। এই কাজ বাস্তবায়নে উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ সকাল হতে গভীর রাত পর্যন্ত নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, উপকারভোগীদের মাঝে এই ঘর প্রাপ্তির খবরে যেই আনন্দের ঝিলিক দেখতে পেয়েছি, সেই আনন্দাশ্রন আমাদের আগামীর পথচলার প্রেরণা হয়ে থাকবে। এসময় ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাস সিদ্দিকী সহ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।ফরিদপুরের সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম রেজা বলেন, জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের নেতৃত্বে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) নিবীড় তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠছে আশ্রয়হীন মানুষের এসব স্বপ্নের ঠিকানা ‘স্বপ্ন নীড়’। স্থানীয় সংসদ সদস্যগণসহ উপজেলা ও ইউপি চেয়ারম্যানগণও এগিয়ে এসেছেন। সরেজমিনে কাজের অগ্রগতি তদারকি করছেন জেলা প্রশাসক এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকগণও।
উপকারভোগীদের একজন রাশেদ খাঁ (৭০) জানান, তাঁর নিজের কোন ঘর নেই। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে গট্টি ইউনিয়নের ঝুনাখালীতে পরের জমিতে পাটখড়ি ও পলিথিন দিয়ে টং ঘর তুলে থাকতেন। এখন এই ঘর পেলে নিজের একটু মাথা গোঁজার ঠাই হবে। একইভাবে এমন অনিশ্চিত উদ্বাস্তু জীবনযাপনের কথা জানালেন একই এলাকার শেখ মোসলেম (৭৫), মো. আবুল কালাম (৫৫), বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের দেলাননগরের লাল মিয়ার স্ত্রী সাকিরননেসা (৬৫), নগরকান্দার কোদালিয়া শহীদনগর গ্রামের শেখ মোজাম (৬৫), লিপি বেগম (৫৩) সহ অন্যরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সালথা উপজেলার ঠেনঠেনিয়া বাজারে সড়কের পাশে খাস জমিতে একটি মুজিববর্ষ ভিলেজ গড়ে তোলা হচ্ছে। শুক্রবার সাতসকালে খবর সংগ্রহে সেখানে গেলে দেখা গেছে, খুব ভোরেই সেখানে কাজের তদারকি করতে চলে এসেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসিব সরকার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হীরামনি। অসহায় এসব পরিবারের নিরাপদ আশ্রয়স্থল নির্মাণ কাজ যাতে সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় এজন্য তারা নিয়মিত তদারকি করছেন বলে জানান মাঠ প্রশাসনের এই দুই কর্মকর্তা।
পার্শবর্তী বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ছিন্নমূল ও ভূমিহীন পরিবারের প্রাপ্ত তথ্য তারা স্থানীয় ভূমি অফিস হতে তথ্য যাচাই করে নিশ্চিত হওয়ার পরেই সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরি করেছেন। আর নির্মাণ কাজ যাতে সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় সেজন্য নিয়মিত তদারকি করছেন তারা।
নগরকান্দা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, এমন ঘরে পড়ে যাওয়া গৃহকর্তা, স্বামী পরিত্যক্তা নারী, হতদরিদ্র বিধবা কিংবা পরের বাড়ি চেয়ে চিন্তে জীবন চালানো পরিবারগুলোকে এখানে বাছাই করা হয়েছে উককারভোগী হিসেবে। যাদের নিজের কোন জমিজমা বা সম্পদ নেই।
ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাকিবুর রহমান বলেন, সুবিধাভোগীদের এসব ঘরসহ জমি কবুলিয়াত করে দেয়া হবে। প্রতিটি পরিবার এতে গড়ে প্রায় ৩শতাংশ জমি পাবে ঘরসহ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গৃহহীনদের জন্য ফরিদপুরের সদর উপজেলায় ২৯২টি, ভাঙ্গা উপজেলায় ২৫০টি, আলফাডাঙ্গায় ২২০টি, সদরপুরে ১৭৮টি, চরভদ্রাসনে ১৫০টি, মধুখালীতে ১৪৮টি, নগরকান্দায় ১০৫টি, বোয়ালমারীতে ৯২টি ও সালথা উপজেলায় ৩৫টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha