আজকের তারিখ : নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ৬:৪৩ এ.এম || প্রকাশকাল : সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১, ৭:২৯ পি.এম
মাগুরায় বহুতল ভবন নিমার্ণ নিয়ে আপন দুই ভাইয়ের দ্বন্দ চরমে
মাগুরা শহরের সৈয়দ আতর আলী রোড মাঝিপাড়া এলাকায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও পৌরসভার বিধি নিষেধ না মেনে বহুতল ভবন নির্মাণ করায় ছোট ভাই আহমেদ শরীফ বাহার তার আপন বড় ভাই সিরাজুল ওহাব ওরফে বয়ানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দাখিল করেছেন। তারা ঐ এলাকার মৃত আলহাজ্ব মাওলানা শামছুল হকের পুত্র।
১৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার মাগুরা সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক রুমানা রুবি বিবাদী পক্ষকের নিকট নোটিশ জারি হওয়ার পর সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য এ আদেশ দেয়।
বাদী পক্ষের আইনজীবী মঞ্জুরুল ইসলাম কনক বলেন, মক্কেলের পক্ষে দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের ৩৯ নং আদেশের ১ম ও ২য় রুলের বিধান ও ১৫১ ধারা মতে, মাগুরা সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করলে বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি গ্রহণ পূর্বক সাত দিনের অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞাসহ বিবাদী পক্ষের নিকট নোটিশ জারি হওয়ার সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানো ও পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা শুনানী না হওয়া পর্যন্ত নালিশি জমিতে উভয় পক্ষকে ব্লিডিং নির্মানের কাজ বন্ধ রেখে স্থিতিবান বজায় রাখার জন্য নির্দেশ দেন। যাহার মামলা নং ৬৭১/২১
সরেজমিনে দেখা যায় আহমেদ শরীফ বাহার ও সিরাজুল ইসলাম ওহাব বয়ানের পিতা-মাতার মৃত্যুঅন্তে সাবেক ৯৬ ও হাল ৬৯ নং মাগুরা মৌজার ১১৪৩ খতিয়ানের এস.এ. ৪৬৭৩ ও ৪৬৭৪ নং দাগের ১১.২৫ শতাংশ জমি এস.এ রেকর্ডে ফাইনাল প্রকাশিত হয়। যাহার হাল ৬৯ নং মাগুরা মৌজার ১৮২৬ খতিয়ানের হাল আর. এস. ৪২৯৪ দাগের ৫.৬৩ শতাংশ জমি আহমেদ শরীফ বাহার ও ঐ একই দাগের আর.এস. ৬৪৮০ নং খতিয়ানে এ.বি এম সিরাজুল ওহাব অরফে বয়ান ৫.৬২ শতাংশ জমি অর্থ্যাৎ দুই ভাই একই দাগের দুইটি আলাদা খতিয়ানে আটআনা ও আটআনা অংশে আর.এস. রেকর্ডে মালিক হয়।
তাছাড়া দেখা যায়, আহমেদ শরীফ বাহার প্রায় ২০ বছর পূর্বে নির্মীত করা ভবনে ও তার ভাই বয়ান তাদের পূর্বের বাড়িতে তাহার অংশে সুখে শান্তিতে বসবাস করে আসছিলো। এমতবস্থায় দেখা যায়, বাহারের তিন তলা বিল্ডিংয়ের সানসাইড অতিক্রম করে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে সিরাজুল ওহাব অরফে বয়ান বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করার কারণে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে।
আহমেদ শরীফ বাহার দৈনিক সময়ের প্রত্যাশাকে বলেন, তারা দুই ভাই সম্প্রীতির সাথে বসবাস করে আসছিলেন। এমতাবস্থায় প্রায় ২০ বছর পূর্বে তার ভাগের জমিতে বিল্ডিং করার জন্য সিদ্ধান্ত নেন। তখন তিনি মাগুরা পৌরসভার বিধি মোতাবেক ইঞ্জিনিয়ারিং প্লান পাশের মাধ্যমে তার বড় ভাই বয়ানের সাথে থেকে সীমানা নির্ধারণ করে তার সম্মতিক্রমে বিল্ডিংয়ের কাজ শুরু করে। তার বড় ভাই বয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, পৌরসভার প্লান মোতাবেক বিল্ডিং হতে ৩ ফুট দুরত্ব রেখে বিল্ডিং নির্মাণের নিয়ম থাকলেও তা অগ্রাহ্য করে জোর পূর্বক তাহার বিল্ডিংয়ের পূর্বপাশের দেয়ালের সাথে লাগিয়ে সানসাইড অতিক্রম করে গত ৫ সেপ্টেম্বর রবিবারে সেন্টারিং করে ঢালায়ের কাজ শুরু করে। তখন তিনি পৌরসভার আইন না মেনে দুই বিল্ডিংয়ের মাঝে নিয়মনুযায়ী ফাঁকা না থাকলে যে কোন বিপদ বা বিল্ডিং মেরামত কাজে বাধা ও ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে জানালে তার বড় ভাই তাকে মিথ্যা আশ্বাস দেন যে, তার বিল্ডিংয়ের সীমানা হতে ৩ ফুট ফাঁকা বা দুরত্ব রাখবে এবং বাকী সেন্টারিং পর্যন্ত ঢালাই দিবে না।
তিনি আরো বলেন, বড় ভাইয়ের কার্যকলাপে সন্দেহ হওয়াই মাগুরা পৌরসভায় একাধিকবার অভিযোগের দরখাস্ত দাখিল করেন। তাছাড়া মাগুরা বিজ্ঞ আদালতে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করলে, ১৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার মাগুরা বিজ্ঞ আদালত আবেদনটি গ্রহণ করে বিল্ডিং নির্মাণের কাজ বন্ধ রেখে ৭ দিনের অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়ে কেন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে না এর কারণ দর্শানোর জন্য ও পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত উভয় পক্ষকে স্থিতিবান বজায় রাখার নির্দেশ দেন।
সিরাজুল ওহাব অরফে বয়ানের বিরুদ্ধে আহমেদ শরীফ বাহার অভিযোগ করে বলেন, আদালতের উক্ত নোটিশ সম্পর্কে অবগত হওয়ার পরেও আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে শুক্রবার ১৭ সেপ্টেম্বর সরকারি বন্ধের দিনে ঢালাই না করা বাকি সেন্টারিং অংশে ঢালাই সম্পন্ন করে।।
এর আগে এবিষয়কে কেন্দ্র করে তার বড় ভাই তার বিরুদ্ধে সদর থানায় অভিযোগ করলে এস.আই. অমৃত বিশ্বাস বিষয়টি তদন্ত করেন। এস.আই. অমৃত বিশ্বাসের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, তাদের দুই ভাই এর মধ্যে মৌখিক চুক্তি হওয়া বিষয় জানা যায় যে, যে আগে বিল্ডিং নির্মাণ করবে অপর ভাই সেই বিল্ডিংয়ের একই পিলারের সাথে লাগিয়ে ব্লিডিং নির্মাণ করিতে পারবে। তদন্ত অফিসার সরেজমিনে তদন্ত করে তাদেরকে বলেন এটা জমা-জমির বিষয় আদালত ও পৌরসভার দারস্থ্য হয়ে সমস্যার সমাধান করতে। এ বিষয়টি নিয়ে ভাই ভাইয়ের মধ্যে শান্তি ভঙ্গ হতে পারে বলে মাগুরা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি প্রসিকিউশন দাখিল করে তিনি।
এবিষয় মাগুরা পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি মেয়র মহোদয় খুরশিদ হায়দার টুটুল জানেন এবং বিষয়টি সমাধানের জন্য তিনি নিজে ও একাধিকবার পৌরসভার প্রতিনিধিগণ সরোজমিনে পাঠিয়ে সমাধান করতে ব্যর্থ হয়। পরে আবার উভয় পক্ষকে নিয়ে শুনানির ব্যবস্থ্যা করার জন্য সার্ভেয়ারকে নির্দেশ দিয়েছে। তাছাড়া সার্ভেয়ার শাহিনুর রহমান বলেন, তারা দুই ভাইয়ের কোন ব্যক্তিই পৌরসভার প্লান না মেনে যার যার জমি থেকে তিন ফুট দুরত্ব না রেখে বিল্ডিং নির্মাণ করছে।
এবিষয় নিয়ে সিরাজুল ইসলাম বয়ানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার ভাই বাহার বিল্ডিং করার সময় পৌরসভা থেকে প্লান পাশ করেছে কিনা তা অনিশ্চিত এবং বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন বলে জানিয়ে আর কোন কথা না বলে আদালতেই দেখবেন বলে জানান।
উল্লেখ্য যে, কিছুদিন আগে মাগুরা শহরের মেটানিপাড়া এলাকাই দুই ভায়ের মধ্যে জমাজমি ও বিল্ডিং নিয়ে বিরোধের কারণে পিন্টু নামে একজন তার আপন ভায়ের হাতে খুন হয় যা আইনানুগ বিচারাধীন ছিলো।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha