মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরে ১৩ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে মডেল মসজিদ নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও ১৮ মাসে কাজ শেষ করার শর্ত থাকলেও এক বছরের বেশি সময় পার হলেও এখনও ৩০ ভাগ কাজ শেষ হয়নি।
আজ রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রামানন্দ পাল সরেজমিন গিয়ে সত্যতা পাওয়ায় নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন।
ইউএনও অফিস সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুর উপজেলায় মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের একটি তিনতলা ভবন নির্মাণ করছে মাগুরা গণপূর্ত বিভাগ। ১৩ কোটি ১১ লাখ ৯৬ হাজার ৯৭৩ টাকায় নতুন ভবন নির্মাণের কাজ পায় ঝিনাইদহের এম. এস লিটন ট্রেডার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২০ সালের ১০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশে একযোগে মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন (১ম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। তিনতলা মসজিদে প্রথম তলায় ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, লাইব্রেরি, শবদেহের গোসল, কফিন ঘর থাকবে। দ্বিতীয় তলায় প্রধান নামাজ কক্ষ, সভাকক্ষ এবং তৃতীয় তলায় মহিলাদের নামাজ কক্ষ, মক্তব হেফজ খানা, ইমাম মোয়াজ্জিম খাদেমদের থাকার জায়গা ও ইসলামি গবেষণা কক্ষসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা থাকবে।
মহম্মদপুর সদরের গোপালনগর গ্রামের বাসিন্দা কামাল হোসেন অভিযোগ করেন, মসজিদ ভবনের কাজে ৬০ গ্রেডের রড ব্যবহারের কথা। কিন্তু দুই ঠিকাদারই নিম্নমানের রড ও নম্বরবিহীন ইট ব্যবহার করছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বাধা দিয়েছি। কিন্তু কাজ হয়নি। তাই লিখিতভাবে ইউএনও স্যারকে জানিয়েছি।’
সরেজমিন আজ রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দেখা গেছে, উপজেলা পরিষদের জায়গায় মডেল মসজিদ নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে। মসজিদের ফ্লোরে নিন্মমানের ইট ব্যবহার করায় নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। পিলারের রডে কালো মরিচা পড়ে গেছে। ১৮ মাসে নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ইতিমধ্যে ১২ মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেছে, অথচ এখনও ৩০ ভাগ কাজ শেষ হয়নি বলে জানা গেছে। এতে সঠিক সময়ে মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা মাগুরা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশল প্রকৌশলী প্রসেনজিৎ পাল বলেন, ‘এলাকাবাসীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে নির্মাণকাজ সরেজমিন দেখে এসেছি। ইটের মান খারাপ হওয়ায় কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ কাজের ঠিকাদারকে দুই নম্বর ইট সরিয়ে ফেলতে বলেছি।’
ঠিকাদার মিজানুর রহমান লিটন বলেন, ‘রডের গায়ে মরিচার দাগ থাকবেই। ইট ভুলে অন্য সাইট থেকে চলে আসছে। এগুলো দুই নম্বর হওয়ায় ফেরত দিয়ে দেবো।’
মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রামানন্দ পাল বলেন, ‘মডেল মসজিদ ভবন নির্মাণে নিম্নমানের রড ও ইট ব্যবহারের অভিযোগ পেয়েছি। কাজ সাময়িক বন্ধ। নির্বাহী প্রকৌশলীকে দিয়ে তদন্ত করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’