পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহন করায় ৪ বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থীকে দলীয় শৃংখলা ভঙ্গ ও গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অপরাধে সাময়িক বহিস্কার করেছে পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগ। গত ৫ সেপ্টেম্বর ( রবিবার) জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার সাদাত সম্রাট সাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়।
৪ বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থীকে দলীয় পদ থেকে স্থায়ী বহিস্কার ও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সংসদে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি। সেই সাথে দলীয় মেয়র প্রার্থীকে পৌর নির্বাচনে নির্বাচিত করতে উপজেলার দলীয় নেতাকর্মীদের একযোগে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বহিস্কারাদেশ সংক্রান্ত চিঠিটি সম্পর্কে বৃহস্পতিবার (০৯ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যেম কর্মীদের জানানো হয়। দেবীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থীরা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুর নেওয়াজ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন নিউটন।
বহিস্কারাদেশ নিয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুর নেওয়াজ বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোন চিঠি পাইনি আমি। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন জেলা আওয়ামী লীগ আমাকে কি বহিস্কার করবে? আমিতো জন্মগত ভাবে আওয়ামী লীগ করি। এ পৌরসভার সীমানা জটিলতা থেকে শুরু করে পৌরসভা কার্যক্রমের জন্মলগ্ন থেকে আমি পৌরবাসীর উন্নয়নে ব্যাক্তিগত ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমার প্রতি এখানকার মানুষের আস্থা এবং ভালবাসা আছে। তারা আমাকে ২০ সেপ্টেম্বর মোবাইল ফোন মার্কায় তাদের একটি করে মূল্যবান ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে তাদের ভালবাসার প্রমাণ দিবে।
আওয়ামী লীগের অপর বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদকে বহিস্কার সর্ম্পকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন আমাদের আবিস্কার কে করছে। আমরা তো নিজে থেকেই দল করি। বহিস্কারের বিষয়ে কোন চিঠি পেয়েছেন কিনা এ বিষয়ে বলেন, শুনেছি তবে এখনো কোন চিঠি পাইনি। আমার কাছে দল বড় না; এখানকার মানুষ আমার কাছে বড়। আমি আশা করি এখানকার মানুষ আমাকে নির্বাচিত করে সকল ষড়যন্ত্রের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিবে।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ায় দেবীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদে আওয়ামী লীগের ৪ বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থীকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। তারা দলীয় শৃংখলা ভঙ্গ এবং দলের গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কাজ করেছে। তাদের স্থায়ী বহিস্কারের বিষয়ে কার্য নির্বাহী সংসদে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেই সাথে দলীয় নেতাকর্মীদের এক হয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
এই পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনিত মেয়র প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। এ ছাড়া দলের অপর বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুর নেওয়াজ মোবাইল ফোন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক রেল ইঞ্জিন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ক্যারাম বোর্ড, পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন নিউটন জগ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদিকে পৌরসভা সহ আগামীতে সব ধরনের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিলেও দলের দুই নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেছেন। তাদের মধ্যে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এফ এস এম মোফাখখারুল আলম বাবু (বিএনপি বাবু) চামুচ প্রতীকে এবং পৌর যুবদলের আহ্বায়ক সরকার ফরিদুল ইসলাম নারিকেল গাছ প্রতীকে লড়ছেন।
দেবীগঞ্জ পৌর যুবদলের আহ্বায়ক সরকার ফরিদুল ইসলামকে দলের পক্ষ থেকে মৌখিক সমর্থন দেয়া হয়েছে বলে দলের বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়াও অপর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে দৈনিক যুগান্তরের সহ-সম্পাদক জাকারিয়া ইবনে ইউসুফ ইস্ত্রি মেশিন ও মাসুদ পারভেজ কম্পিউটার প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এছাড়াও কাউন্সিলর পদে ৬৩ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
গত ১১ই এপ্রিল এই পৌরসভার ৯ টি কেন্দ্রের প্রত্যেকটিতেই ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহনের কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে তা স্থগিত হয়। এর পরে গত ১০ই জুন আবারো নির্বাচন স্থগিত করা হয়। উল্লেখ্য দেবীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন ও দেবীডুবা ইউনিয়নের কিছু অংশ নিয়ে ২০১৪ সালে গঠিত হয় দেবীগঞ্জ পৌরসভা। সীমানা জটিলতায় দীর্ঘদিন নির্বাচন ঝুঁলে থাকায় পৌর প্রশাসক দিয়ে চলছিলো পৌরসভার কার্যক্রম।
প্রথম বারের মতো এই পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পৌরসভায় মোট ভোটার ১০ হাজার ৯১৪ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ হাজার ৩৩৬ জন এবং নারী ভোটার ৫ হাজার ৫৭৮ জন।