নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় এক মানবিক পুলিশ কনেস্টবলের দেওয়া খাবার খেয়ে দিনপার করছেন হতদরিদ্র প্রতিবন্দী আমজাদ হোসেন (৪৮)। এক সময় প্রতিবন্দী আমজাদ হোসেনের বাবা, মা, ভাই, বোন, স্ত্রী, ছেলে-মেয়েসহ সংসারে সবই ছিলো। হটাৎ করে এক দূর্ঘটনায় পা ভাঙ্গার ঝড়ে তার সেই সপ্নের সংসার ভেঙ্গে যায়। এরপর থেকে প্রতিবন্দী আমজাদ হোসেনের ছেলে-মেয়ে, ভাই বোনসহ স্বজনরা কেউ তার খবর রাখেন না।
বর্তমানে রাণীনগর থানায় কর্মরত মানবিক পুলিশ কনেস্টবল সারোয়ার হোসেন দেওয়া খাবার খেয়ে দিনপার করছেন তিনি। দরিদ্র প্রতিবন্দী আমজাদ হোসেন রাণীনগর উপজেলার সদরের বিষ্ণপুর গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে। তার সংসার ভেঙ্গে যাবার পরই থেকেই সদরের রেলগেট সংলগ্ন কৃষ্ণচুড়া গাছের নিচে একটি ছোট্ট ঢোপ ঘর বসিয়ে সেখানে দোকান সাঝিয়ে দিনে কেনাবেচা আর রাতে সেই ছোট্ট ঢোপ ঘড়েই রাত কাটাচ্ছেন।
জানা গেছে, অভাব অনাটনের কারনে দীর্ঘদিন থেকে ঢাকা শহরে বিভিন্ন বে-সরকারি কোম্পানিতে চাকুরী করতেন আমজাদ হোসেন। তার পরিবাবে বাবা, মা, ভাই, বোনসহ স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে সবাই ছিল। হটাৎ করে ২০১৬ সালে ঢাকায় এক দূর্ঘটনায় পা ভাঙ্গে তার। তারপর চিকিৎসা করেও তার পা ভালো হয়নি। এরপর থেকেই তিনি হয়ে গেছেন প্রতিবন্দী।
ইতিমধ্যেই তার মেয়ে বিয়ে হয়ে স্বামীর বাড়িতে গিয়ে সংসার করছেন আর ছেলে ঢাকাতে চাকুরীরত। এরমধ্যে দূর্ঘটনায় পা ভাঙ্গার ঝড়ে তার সেই স্বপ্নের সংসার ভেঙ্গে যায়। এমনকি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কও ডির্ভোসের মাধ্যমে বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর থেকেই প্রতিবন্দী আমজাদ হোসেনের ছেলে-মেয়ে, ভাই বোনসহ স্বজনরা কেউ তার খবর রাখেন না।
সংসার ভেঙ্গে যাবার পর থেকেই প্রতিবন্দী দরিদ্র আমজাদ হোসেন দিশেহারা হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে পেটের খিদে মেটাতে তিনি রাণীনগর উপজেলার সদরে রেলগেট সংলগ্ন ক্রিষ্ণচুড়া গাছের নিচে ছোট্ট একটি ঢোক ঘড়ে অল্প কিছু টাকার মালামাল দিয়ে দোকান সাঝিয়ে দিনে কেনাবেচা করেন। আর তা থেকেই যে সামান্য আয় হয় সেই টাকায় খাবার কিনে কোন রকমে খেয়ে পেটের খিদে মিটান।
আবার ছোট্ট সেই ঢোপের দোকান ঘড়ের ভেতরই তিনি এক প্রকার নির্ঘুম রাত পার করে আসছেন। এরই মাঝে করোনা ভাইরাস নামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়লে প্রশাসনিক (বিধিনিষেধ) লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই আমজাদ হোসেন খাবার সংকটে ও পেটের খিদের জ্বালায় দিশেহারা হয়ে পড়েন। এমনই এক সময় মানবিকতার টানে সহযোগীতায় এগিয়ে আসেন রাণীনগর থানায় কমর্রত মানবিক পুলিশ কনেস্টবল সরোয়ার হোসেন।
বিগত লকডাউনের সেই শুরু থেকেই পুলিশ কনেস্টবল সরোয়ার তার নিজ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাসা থেকে এবং খাবার কিনে প্রতিনিয়ত খাবার নিয়ে এসে প্রতিবন্দী আমজাদ হোসেনকে দেন। আর খাবার রান্না থেকে সাজিয়ে দিয়ে সহযোগীতা করেন পুলিশ কনেস্টবল সরোয়ারের স্ত্রী। হতদরিদ্র প্রতিবন্দী আমজাদ হোসেন জানান, আমার বাবা, মা, ভাই, বোন, স্ত্রীসহ ছেলে-মেয়ে সংসারে সবই ছিলো। এক অজানা ঝড়ে আজ আমি এখন পথে। এমনি কি বাবা জায়গা জমিও অন্য ছেলের নামে লিখে দিয়েছেন। বর্তমানে খাবারতো দূরের কথা প্রতিবন্দী হওয়ায় আমার খোঁজ খবরও নেওয়ার এখন কেউ নেই।
এরই মাঝে যখন আমি পেটের খিদের জ্বালায় ভুগতে থাকি সে সময় থেকেই থানার পুলিশ কনেস্টবল সরোয়ার তার বাসা থেকে প্রতিদিন খাবার এনে আমাকে দেন। আর আমি অনেক দিন থেকেই ওই পুলিশের দেওয়া খাবার খেয়ে বেঁচে রয়েছি। দোয়া করি আল্লাহ যেন ওই পুলিশ ও তার পরিবারকে ভালো রাখেন।
সরকারি কোন অনুদান পান কিনা সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে তিনি জানান, অনেক আগে দু’বার পঙ্গু ভাতা পেলেও এখন আর পাই না বলেই তিনি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন।
এ ব্যাপারে রাণীনগর থানায় কর্মরত সেই মানবিক পুলিশ কনেস্টবল সরোয়ার হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, দরিদ্র প্রতিবন্দী আমজাদের মুখ থেকে তার কষ্টের কাহিনী জানার পর থেকেই আমি নিজের দায়িত্ব পালনের ফাঁকে যখন বাসায় খাবার খেতে যাই, সেই সময় ওনার জন্যও বাসা থেকে খাবার এনে দেইমাত্র। আর আমি যতদিন এই থানায় কর্মরত আসি ততদিন আমি তার পাশে থাকবো বলেও জানিয়েছেন তিনি।