অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট পানির চাপে পঞ্চগড়ের সুগার মিল থেকে মাড়েয়া হয়ে দেবীগঞ্জ উপজেলা সড়কের মানিকপীর ভক্তের বাড়ি নামক সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় সড়ক দিয়ে পথচারী সহ সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করা ৪/৫ ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ।
গত শুক্রবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে জেলার বোদা উপজেলার বেংহারি বনগ্রাম ইউনিয়নের মানিকপীর ভক্তেরবাড়ি এলাকায় ভক্তের বাড়ি সেতুর উত্তর পাশের সংযোগ সড়কে ভাঙ্গন দেখা দেয়। পরে তা ভেঙে বাড়তে বাড়তে প্রায় ১০/১২ ফিট সড়কের অংশ ভেঙে যায়। একই সময়ে ওই সড়কের দক্ষিণ পাশের সংযোগ সড়কে ফাটল দেখা দেয়। তবে ওই অংশে সড়কের তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
এদিকে শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সাংসদ ও রেলপথ মন্ত্রী এডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন। এসময় মন্ত্রী দ্রুত সড়ক মেরামত করে সড়ক দিয়ে মানুষের চলাচলের উপযোগী করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা যায়, গত কয়েক ধরে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারনে ওই এলাকার নিম্নাঞ্চলের পানি বেয়ে সেতুর নিচ দিয়ে দ্রুত বেগে প্রবাহিত হতে থাকে। এসময় সেতুর সামনের অংশে থাকা গাইড ওয়ালের কারণে পানি বাঁধাগ্রস্থ হয়ে পানির প্রবল স্রোত তৈরী হয়। পরে সেতুর নিচ দিয়ে সুরঙ্গ হয়ে পানি প্রবাহিত হতে থাকে। পরে আস্তে আস্তে বিকেলে ভক্তেরবাড়ি সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙ্গে যায়। আর আকস্মিক ভাবে সেতুটি ক্ষতিগ্রস্থ ও সংযোগ সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় সদর, বোদা ও দেবীগঞ্জসহ তিন উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বাসিন্দা ছাড়াও জেলা শহর থেকে দেবীগঞ্জ উপজেলা সদরে যাতায়াতের এই সড়কটি দিয়ে হাজার হাজার মানুষ ও ছোট-বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম দূর্ভোগে পড়েছে চলাচলকারীরা। অনেকে এখন বিকল্প পথ দিয়ে আধাঁ কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে সেতু নির্মাণ ও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সড়ক নির্মাণ করায় পানির স্বাভাবিক প্রবাহ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় সংযোগ সড়কটি ভেঙে গেছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
এবিষয়ে ওই ইউনিয়নের মানিকপীর এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান জানান, গত কয়েক দিন বৃষ্টিপাতের কারনে আজ হঠাৎ করে সেতুটি হেলে পড়ে এবং সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙ্গে গেছে। আমরা এখন আর চলাচল করতে পারছি না। ফলে আধাঁ কিলোমিটার ঘুরে আমাদের চলাচল করতে হচ্ছে। আমরা সমস্যাটি সমাধানের প্রশাসনের দ্রুত সুদৃষ্টি কামনা করছি। একই কথা বলেন ওই সড়ক চলাচলকারী কলেজ ছাত্র হাসানুজ্জামান হাসান,তিনি বলেন,আমরা প্রতিদিনি ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করি কিন্তু হঠাৎ করে সেতু ও সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় আমরা হাজার হাজার মানুষ চলাচল করতে না পারায় ভোগান্তিতে পড়েছি। রাস্তাটি যদি ভাল সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করা হতো তাহলে এমন ভাঙন দেখা দিতো না।
বোদা উপজেলার বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, পানির অতিরিক্ত স্রোতের কারণে সেতুর উত্তর পার্শ্বের সেতুর একটি অংশ ও সংযোগ সড়ক ভেঙ্গে গেছে। পরে স্থানীয়রা আমাকে বিষয়টি জানালে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে সড়ক জনপথ দপ্তরকে জানাই। পরে জেলা প্রশাসক, বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পঞ্চগড় সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন,সেতুর উত্তর পাশ্বে ১৮ ফুট সংযোগ সড়ক ভেঙ্গে গেছে। সেতুর দক্ষিণ পাশ্বে সংযোগ সড়কও ভাঙতে শুরু করেছে।
গত ২০১৯-১০ অর্থবছরে মানিকপীর ভক্তের বাড়ি সেতুর কাজ নির্মাণ কাজ করা হয়ে ছিল। গত অর্থবছরেও ২ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটির ১১ কিলোমিটার সংস্কার কাজ করা হয়েছে। তবে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করবো। পঞ্চগড় সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, অতিরিক্তি পানির চাপে সেতুর সংযোগ সড়কটি ভেঙে গেছে। সেখানে বেইলি সেতু নির্মাণ করা হবে। সড়ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন এবং সেখানে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে নাকি পূর্বের সেতুর মেরামত করা হবে তা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এবিষয়ে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মোঃ জহুরুল ইসলাম বলেন,বোদা উপজেলার বেংহাড়ি ইউনিয়নের পঞ্চগড়-দেবীগঞ্জ পাকা সড়কের ভক্তেরবাড়ি সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙ্গে মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে এমন খবর পাওয়া মাত্রই আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আপাতত চলাচলের জন্য সেখানে বেইলি সেতু নির্মাণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।