রৌমারী উপজেলায় ব্রম্মপুত্র নদের কিনার থেকে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে ৪২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। বালু উত্তোলন বন্ধে নির্বাহী প্রশাসনের রহস্য জনক নীরবতা ও ব্যাপকভাবে নদী ভাঙ্গন বিস্তৃত হওয়ায় আদালত এমন সিদ্ধান্ত নেয় বলে সংশ্লিষ্ট একধিক আইন জীবি জানান। জেলায় পরিবেশ আন্দোলনের নেতারা আদালতের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।
গতকাল বুধবার (২৫ আগস্ট) দুপুরের পর কুড়িগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (আমলী আদালত,রৌমারী) বিচারক মো. সুমন আলী এ আদেশ দেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী ইসমাঈল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। আদেশে উল্লেখ করা হয়, রৌমারীতে এক শ্রেণির অসাধু বালু ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে ব্রহ্মপুত্র নদসহ উপজেলার বিভিন্ন স্পর্শ কাতর স্থানে অবৈধ ভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে আসছে। এর বিরুপ প্রভাবে এলাকায় নদী ভাঙ্গনের শিকার হন স্থানীয় অসংখ্য মানুষ। তারা বসতভিটাসহ আবাদি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয় এবং তাদের জীবনে নেমে আসে এক অমানিশার অন্ধকার।
সম্প্রতি এ সংক্রান্ত সচিত্র প্রতিবেদন জাতীয় ও স্থানীয় একাধীক পত্রিকায় প্রকাশ হলে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আদালতের নজরে আসে। কুড়িগ্রাম চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে গত ২ মে'২০২১ দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮ এর ১৯০(১) (সি) ও ১৫৬ ধারা মতে রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জকে সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। থানার অফিসার ইনচার্জ মোনতাছের বিল্লাহ বিষয়টি তদন্ত পূর্বক রৌমারী উপজেলার ব্রম্মপুত্র নদসহ ৪২টি পয়েন্টে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এসব ড্রেজার মেশিনের বৈধ কোন কাগজপত্র নেই, এমনকি রৌমারী উপজেলায় সরকার ঘোষিত কোন বৈধ বালু মহালও নেই বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সংশ্লিষ্ট আদালত সূত্র জানায়, পুলিশ কতৃক দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদন আদালত পর্যালোচনা পূর্বক "বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর ৪ ধারায় অপরাধ আমলে নিয়ে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে ৪২ পয়েন্টে চলমান ড্রেজার মালিকদের গ্রেফতারে পরোয়ানা জারি করেন। একই সঙ্গে আদালত আগামী ২১ সেপ্টেম্বর গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিল প্রতিবেদনের দিন ধার্য করেন।
সরেজমিন খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলার সীমান্ত লাগোয়া রৌমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ সহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় সরকারি দলের ছত্রছায়ায় থেকে একটি সিন্ডিকেট চক্র দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছে। একজন মন্ত্রীর আশীর্বাদ পুষ্ট ড্রেজার মালিক সুরুজ্জামালের নেতৃত্বে অবৈধ বালু উত্তোলন ও অবৈধ রমরমা বালু ব্যবসা নিষ্কণ্টক করতে এ চক্রটি সরকারি দলের আশীর্বাদে ড্রেজার মালিক সমিতি গঠন করে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
অভিযোগ রয়েছে, তাদের এসব অবৈধ তৎপরতা স্থানীয় সাংবাদিকরা গণমাধ্যমে প্রকাশ করলে তাদেরকে না-না ভাবে হুমকি ধামকি এমনকি নাজেহাল পর্যন্ত করা হয়। তাদের বেপরোয়া বালু উত্তোলনের ফলে যেমন নদীর পার ভেঙে প্রতিনিয়ত মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে, তেমনি কাকড়া গাড়ি (ট্রাক্টর) দিয়ে বালু পরিবহন করায় উপজেলার সাথে ইউনিয়ন গামী সড়কসহ গ্রামীণ সড়ক গুলো খানা-খন্দে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এ অবস্থায় উপজেলা র মানুষের দুর্ভোগ চরমে ওঠে। এরকম নৈরাজ্যকর এক পরিস্থিতির মধ্যে তথাকথিত ড্রেজার মেশিন মালিক সমিতির সভাপতি সুরুজ্জামাল ও সহ-সভাপতি যাদুরচর ইউপি'র ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য বানিজ আলী ও রৌমারী সদর ইউপি'র ৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য খলিল মিয়াসহ সংশ্লিষ্ট ৪২ জন ড্রেজার মালিকের বিরুদ্ধে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এদিকে, রাজনৈতিক উদাসীনতা, নৈরাজ্য ও নির্বাহী প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার মাঝে পরিবেশ রক্ষায় আদালতের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন,কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি এ্যড.আহসান হাবীব নীলু, সাংবাদিক তৈয়বুর রহমান, সাংবাদিক বাদশা সৈকত, সাংবাদিক শ্যামল ভৌমিক, সমাজসেবক দুলাল বোস, কর্তিমারির আব্দুল্লা আল-মামুন ও ধনার চর নতুন গ্রামের শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।