রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দিলসাদ বেগম বুধবার ১৮ আগস্ট পাংশা উপজেলার বিভিন্ন দপ্তর পরিদর্শন করেছেন। তার দৈনন্দিন কর্মসূচি অনুযায়ী পাংশা সফর করেন তিনি। বুধবার জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগমের দৈনন্দিন কর্মসূচিতে ছিলো- পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় পরিদর্শন, পাংশা উপজেলা ভূমি অফিস পরিদর্শন, মাছপাড়া ও যশাই ইউনিয়ন ভূমি অফিস পরিদর্শন, মাছপাড়া ইউনিয়ন পরিদর্শন, মাছপাড়া ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার দর্শন, মাছপাড়া ইউনিয়নে অবস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিক দর্শন, পাংশা উপজেলায় অবস্থিত গুচ্ছগ্রাম/আশ্রয়ণ প্রকল্প দর্শন, পাংশা উপজেলার জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে উপজেলার সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে মতবিনিময়।
সে আলোকে বুধবার সকাল ১০টায় পাংশা উপজেলা পরিষদ চত্বরে আগমন করলে জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগমকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুলেল অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করা হয়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পাংশা উপজেলা পরিষদ হলরুমে উপজেলার জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে উপজেলার সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে মতবিনিময় করেন তিনি।
মতবিনিময়কালে জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, মহামারী করোনা সংকট প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাস্ক ব্যবহার অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। সকলকে স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। শুধু স্বাস্থ্য বিভাগ নয়- করোনা সংকট প্রতিরোধে জনপ্রতিনিধি, সরকারী-বেসরকারী দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সকল শ্রেণি পেশার মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতায় একযোগে কাজ করে যেতে হবে। জীবনে বেঁচে থাকার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ জীবন আগে। জীবনের চেয়ে বড় কিছু নেই। বেঁচে থাকলে সময়মত কাজ করা যাবে। করোনা মহামারীর যুদ্ধে মানবতার জয় একদিন হবেই।
তিনি বলেন, করোনা সংকটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শিক্ষাখাতে। শিক্ষাখাতের ক্ষতি পোষাতে যে গাইড লাইন আছে তা অনুসরণ করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারছে না। ছাত্রছাত্রীরা যাতে লেখাপড়ায় পিছিয়ে না পড়ে সে ক্ষেত্রে শিক্ষক ও অভিভাবকদের সতর্কদৃষ্টি রাখতে হবে। বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের অজুহাতে যাতে বাল্যবিয়ে না হয় সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।
জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম আরও বলেন, রাজবাড়ী জেলার মধ্যে পাংশা উপজেলা এলাকার বিশেষ ঐতিহ্য রয়েছে। পাংশা একটি সমৃদ্ধ এলাকা। শিক্ষা, সাহিত্য, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন এবং সিভিল সার্ভিসে অত্র এলাকার সুখ্যাতি রয়েছে। পাংশার মাটিতে অনেক গুণীজনের জন্ম হয়েছে। তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে খ্যাতি অর্জন করে এলাকার সুনাম ও গৌরব বয়ে এনেছেন। এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকলে উন্নয়ন কর্মকান্ড গতিশীল হয়। সমন্বিত প্রচেষ্টায় এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ড বেগবান রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, ভালো কাজ করে মুজিববর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে হবে। দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি জনকল্যাণমূলক বিশেষ কাজ করে মুজিববর্ষ পালনের সার্থকতা ধরে রাখার আহবান জানান তিনি।
পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মাদ আলীর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় পাংশা পৌরসভার মেয়র মোঃ ওয়াজেদ আলী মন্ডল, পাংশার এসিল্যান্ড নুজহাত তাসনীম আওন, পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান, পাংশা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন বিশ্বাস ও রোকেয়া বেগম, পাংশা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ প্রভাস চন্দ্র সেন, পাংশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন কুমার ঘোষ, পাংশা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার চাঁদ আলী খান, শরিষা ইউপির চেয়ারম্যান আজমল আল বাহার বিশ্বাস, বাহাদুরপুর ইউপির চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর শাকিল ও সাংবাদিক মোঃ মোক্তার হোসেন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
স্থানীয় বক্তাদের মধ্যে পাংশা মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বলেন, জননিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। পাংশা এলাকায় একসময় চরমপন্থী লাল-নীল প্রভৃতি বাহিনী ছিল। কিন্তু প্রশাসনিক তৎপরতায় আজ আর সেসব বাহিনীর অস্তিত্ব নেই। বাহাদুরপুর ইউপির চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর শাকিল জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রমে জটিলতা দূরীকরণে জেলা প্রশাসকের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানান।
শরিষা ইউপির চেয়ারম্যান আজমল আল বাহার বিশ্বাস পাংশা উপজেলা থেকে এডিপির ৮৬ লাখ টাকা ফেরত যাওয়ার ক্ষেত্রে এলজিইডি কর্তৃপক্ষের জবাবদিহির দাবী জানান। অন্যান্য বক্তারা জনপ্রতিনিধি, সরকারী কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের মধ্যে পরস্পর নিবিড় ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশের কথা উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন পাংশা উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা শ্যামল কুমার বিশ্বাস।
জানা যায়, জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম মতবিনিময় সভা শেষে পাংশা উপজেলা পরিষদ হলরুমে দুস্থ লোকজনের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন এবং উপজেলা পরিষদ চত্বরে বৃক্ষরোপণ করেন তিনি। এরপর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম পাংশা মডেল থানা পরিদর্শন করেন।
এদিকে, দাপ্তরিক জরুরী কাজ থাকায় পাংশায় সফর সংক্ষিপ্ত করে দুপুর দেড়টার দিকে রাজবাড়ীতে ফিরে যান জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha