গাইবান্ধায় ৪৫০ গ্রাম হেরোইন পরিবহনের দায়ে বাস সুপার ভাইজার পারভেজকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড ও এক লক্ষ টাকা জরিমানার আদেশ দেয়া হয়েছে। গাইবান্ধার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ দিলীপ কুমার ভৌমিক আজ সকাল ১১টায় এই রায় দেন। মামলায় অপর তিন আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। দন্তপ্রাপ্ত বাসের সুপার ভাইজার পারভেজ বগুড়া সদর থানার ধরমপুর এলাকার মোঃ শামিম আলমের ছেলে।
মামলা ও রায়ের বিবরণে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর র্যাব-১৩ গাইবান্ধা ক্যাম্পের ডিএডি মোঃ জাহিদ হোসেন দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট বাজার এলাকায় মাদক উদ্ধার ও বিশেষ অভিযানে যান। র্যাব সদস্যরা বেলা ১১টার দিকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বাগদা বাজার এলাকায় অবস্থান নেয়। সেখানে গোবিন্দগঞ্জ থেকে আসা দিনাজপুরের হিলিগামী "সাম্য রাজা-১" নামে একটি মিনিবাস সংকেত দিয়ে থামায় র্যাব সদস্যরা। তারা মিনিবাসের পিছনের মাঝখানের দুইসিটে বাসের সুপারভাইজার মোঃ পারভেজ ও চেইন মাস্টার মোঃ আফাজ উদ্দিনকে তল্লাশি করে।
এ সময় র্যাব সদস্যরা বাসের সুপারভাইজার মোঃ পারভেজের হতে থাকা পাঁচটি পলিথিনে মোড়ানো ৪৫০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করে এবং মোঃ পারভেজ ও মোঃ আফাজ উদ্দিনকে গ্রেফতার করে। তাদের জিঞ্জাসাবাদে উদ্ধারকৃত হেরোইন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শ্রীপতিপুর সোনারপাড়া এলাকার আবুল হোসেন সোনার ছেলে মোঃ দুদু মিয়ার কাছ থেকে একই উপজেলার বাগদা (পলুপাড়া) এলাকার মোঃ উকিলের ছেলে মোঃ সাইদুল ইসলামের কাছে নিয়ে যাচ্ছিল বলে র্যাবকে জানায়।
এই ঘটনায় র্যাব-১৩, গাইবান্ধা ক্যাম্পের ডিএডি মোঃ জাহিদ হোসেন বাদি হয়ে বাসের সুপারভাইজার মোঃ পারভেজ, চেইন মাস্টার মোঃ আফাজ উদ্দিন, মোঃ দুদু মিয়া ও মোঃ সাইদুল ইসলামকে আসামি করে গোবিন্দগঞ্জ থানায় ১৯৯০ সালের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনের ১৯(১) টেবিল ১(খ)/২৫ ধারায় মামলা করেন। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর গোবিন্দগঞ্জ থানা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আদালতে মামলাটির সাক্ষ্যপ্রমান গ্রহন করেন।
বাদি ও বিবাদি পক্ষে যুক্তিতর্ক শেষে আজ গাইবান্ধার সিনিয়র জেলা ও দায়রাজজ আদালত আসামি বাস সুপার ভাইজার পারভেজকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড ও এক লক্ষ টাকা জরিমানার আদেশ দেন।
এছাড়া মামলার অপরাপর আসামি চেইন মাস্টার মোঃ আফাজ উদ্দিন, মোঃ দুদু মিয়া ও মোঃ সাইদুল ইসলামকে নির্দোষ হিসেবে মামলা থেকে বেকসুর খালাশ প্রদান করেন। বাদিপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন পাবলিক প্রসিকিউটর মোঃ ফারুক আহম্মেদ প্রিন্স আসামী পক্ষে এ্যাড. আবু আলা মোঃ সিদ্দিকুল ইসলাম রিপু, আহসানুল করিম লাছু, মোকছেদুর রহমান, সিরাজুল ইসলাম বাবু, মুরাদ জামান রাব্বানী।
পাবলিক প্রসিকিউটর মোঃ ফারুক আহম্মেদ প্রিন্স এই মামলায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আসামী পারভেজের সর্বোচ্চ শাস্তি দেখে আর কেই মাদক সংক্রান্ত ঘৃনীত কাজে সম্পৃক্ত হবে না। তিনি আরো বলেন, মাদক মামলায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় ফাঁসির রায় এটি। চলতি বছরের ৩ মার্চ গাইবান্ধার আদালতে রবি দাস নামে এক যুবককে দেশের প্রথম মাদক মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
তাকেও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অপরদিকে আসামী পক্ষে এ্যাড. আবু আলা মোঃ সিদ্দিকুল ইসলাম রিপু বলেন, এই মামলায় আমরা সন্তোষ্ট না। তাই উচ্চতর আদালতে আপিল করা হবে।