আলিফ হোসেনঃ
রাজশাহীর তানোরের গ্রামীণ জনপদ থেকে আধুনিকতার ছোঁয়া ও কালের বিবর্তনে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে গরু-মহিষ দিয়ে হালচাষের ঐতিহ্য। আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির প্রসার, মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং সময়ের চাহিদা মেটাতে দ্রুত ফলনের প্রয়োজনে আজ আর চোখে পড়ে না সেই চিরচেনা দৃশ্য—ভোরবেলা মহিষ গরুর-লাঙল-জোয়াল কাঁধে মাঠে পাড়ি দেওয়া কৃষকের। এক সময় বাংলার পল্লীতে হালচাষ ছিল কৃষকের প্রধান কৃষি পদ্ধতি। মহিষ-গরুর জোড়ার সঙ্গে লাঙল, জোয়াল, মই, লরি ও গোমাই নিয়ে দিনের পর দিন হালচাষ করতেন কৃষকরা। কোকিল ডাকা সকালে পান্তাভাত আর আলুবর্তার পোটলা হাতে কৃষানিরা যেতেন মাঠে। মাঠ ভরতো কৃষকের কণ্ঠে পল্লী গীতি ও ভাটি য়ালির সুরে। কিন্তু এখন সেই দৃশ্য যেন শুধুই স্মৃতি। ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, সিডারসহ বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র কৃষি কাজে ব্যবহৃত হওয়ায় কৃষকরা দ্রুত ফলন ও সময় সাশ্রয়ের জন্য মহিষ-গরু দিয়ে হালচাষ পরিহার করছেন।
উপজেলার তালন্দ ইউনিয়নের (ইউপি) মোহর গ্রামের কৃষক কাবিল হোসেন বলেন, “একসময় দুই জোড়া বলদ দিয়ে জমি চাষ করতাম। গরুর গোবর জমিতে পড়ে মাটি ছিল উর্বর, ঘাস কম হতো, ফসল ভালো হতো। এখন সে দৃশ্য শুধু স্মৃতিতে।”
এছাড়াও লসিরামপুর গ্রামের প্রবীণ কৃষক সাইফুল ও রফিকুল জানান, “গরু-মহিষ দিয়ে হালচাষ যেমন পরিবেশবান্ধব, তেমনি এটি আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্যের অংশ। এখন শখের বশে কেউ কেউ ব্যবহার করলেও তা বিলুপ্তির পথে।” উপজেলার হাট-বাজারে এখনো কিছু কৃষি সরঞ্জামের দোকান দেখা যায়, তবে চাহিদা না থাকায় সেই কারিগররাও ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহমেদ জানান, গরু-মহিষের দিয়ে চাষ করলে মাটির গভীরতা ভালোভাবে আলগা হয়, মাটি ছোট কণায় বিভক্ত হয়, যা মাটির উর্বরতা বাড়াতে সহায়ক। এটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়। তবে সময় ও উৎপাদনশীলতার দিক দিয়ে যান্ত্রিক কৃষি অনেক এগিয়ে। এদিকে প্রবীণ কৃষকদের মতে, গরু দিয়ে হালচাষ শুধু কৃষি পদ্ধতি নয়, এটি ছিল গ্রামীণ জীবনের ছন্দ। সেই ছন্দ এখন আর গ্রামে বাজে না। আধুনিকতার ঢেউয়ে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার এক গৌরবময় কৃষি ঐতিহ্য, যা আগামী প্রজন্মের কাছে হয়ে থাকবে শুধুই গল্পের অংশ।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এ. এস.এম
মুরসিদ (লিটু সিকদার)। মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর। মোবাইলঃ ০১৭১১ ৯৩৯৪৪৫