ডেস্ক রিপোর্টঃ
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচি ঘিরে পুলিশের ওপর হামলা, গাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ এবং গাছ ফেলে সড়ক অবরোধের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের জেলা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ আড়াই হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। তবে এনসিপির পথসভাকে কেন্দ্র করে বুধবার হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় মূল মামলা এখনো হয়নি। পুলিশ বলেছে, শিগ্গিরই সেই মামলাও হবে। আসামিদের ধরতে গোপালগঞ্জ শহরে চিরুনি অভিযান চলছে। ৪৮ ঘণ্টায় জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১৬৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ রমজান মুন্সি বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ল পাঁচজনে। শুক্রবার কারফিউর মেয়াদ ফের বাড়ানো হয়েছে। এদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে নতুন করে শুরু হয়েছে কারফিউ। আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত তা থাকবে। এরপর কারফিউ আর বাড়ানো হবে কি না, তা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান।
গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. মো. রুহুল আমিন সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, শহরে চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে যৌথ বাহিনী। আমরা সর্বোচ্চ তৎপর আছি। যারা অপরাধী, তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে কাউকে অহেতুক হয়রানি করা হচ্ছে না। এ অভিযান চলমান থাকবে।
জানা যায়, এনসিপির কর্মসূচির দিন বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় সদর উপজেলার দুর্গাপুর চরপাড়ায় পুলিশের ওপর হামলা এবং গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি নিউটন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়ালসহ ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ৪/৫শ জনকে আসামি করে গোপালগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। গোপীনাথপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক আহম্মদ আলী বিশ্বাস বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
একই দিন কাশিয়ানী উপজেলায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে গাছ ফেলে অবরোধের ঘটনায় এসআই আলীমুল হক জনি বাদী হয়ে সন্ত্রাস দমন আইনে ৭০ জনের নাম উল্লেখসহ আজ্ঞাতপরিচয় আরও ২৫০-৩০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। এছাড়া কোটালীপাড়া থানায় শুক্রবার সন্ত্রাস দমন আইনে এসআই উত্তম কুমার সেন বাদী হয়ে ১৫৫ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ১৫শ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান বলেন, গোপালগঞ্জ সদরে ৪৫ জনকে গ্রেফতার করেছে যৌথ বাহিনী। হামলা-সংঘর্ষের মূল মামলা কবে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা পক্রিয়াধীন আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে শিগ্গিরই মামলা হবে।
কাশিয়ানী থানার ওসি মো. কামাল হোসেন বলেন, গাছ ফেলে সড়ক অবরোধের অভিযোগে করা মামলায় ২৪ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। মুকসুদপুর থানার ওসি মোস্তফা কামাল জানান, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ৫৪ ধারায় ৬৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া টুঙ্গিপাড়ায় ১৭ এবং কোটালীপাড়ায় ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে শুক্রবার সকাল থেকে জেলা শহরসহ সর্বত্র যৌথ বাহিনীকে টহল দিতে দেখা গেছে। লোকজনের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাই তারা ঘর থেকে কম বের হন। তবে মানুষের জীবনযাত্রা অনেকটা স্বাভাবিক ছিল। জেলায় কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। নিত্যপণ্যের দোকানপাট খোলা ছিল। শহরে সীমিতসংখ্যক রিকশা, ভ্যান ও আটো চলাচল করেছে। অভ্যন্তরীণ তিনটি রুটে যানবাহন চলাচলও স্বাভাবিক ছিল।
কারফিউর কারণে সবচেয়ে বিপাকে আছেন খেটে খাওয়া দিনমুজুর ও নিম্ন-আয়ের মানুষ। পেটের দায়ে তারা বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। গোপালগঞ্জ সদরের পাইককান্দি গ্রামের আটোচালক নিহার মৃধা বলেন, কারফিউর মধ্যে বাধ্য হয়ে আটো নিয়ে বের হয়েছি। শহরে কোনো যাত্রী নেই। বেলা ১২টা থেকে বসে আছি। দুই ঘণ্টায় মাত্র ১০ টাকা পেয়েছি। বাড়িতে বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও এক সন্তান রয়েছে। দুদিন ধরে চাল নেই, বাজার নেই। মালিককে অটো ভাড়া পাঁচশ টাকা দিতে হবে। তারপর যদি কিছু থাকে, তা দিয়ে চাল, ডাল ও লবণ কিনে বাড়ি যেতে হবে।
কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লে. কমান্ডার হারুন অর রশীদ জানান, নদীপথেও টহল জোরদার করেছে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী।
গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন বলেন, কারফিউ যাতে কেউ ভাঙতে না পারে, সেজন্য শহরের চারটি পয়েন্টে বিশেষ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে এবং ১০টি টহল দল অভিযান চালাচ্ছে।
গুলিবিদ্ধ রমজান মুন্সির মৃত্যু : সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ রমজান মুন্সি (৩৫) বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ২টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মারা গেছেন। বুধবার দুপুরে শহরের চিত্রবাণী সিনেমা হলের পেছনের গলিতে গুলিবিদ্ধ হন রিকশাচালক রমজান। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ওই রাতেই ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিহত রমজান মুন্সি গোপালগঞ্জ শহরের থানাপাড়ার আকবর মুন্সির ছেলে। এ নিয়ে সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল পাঁচজনে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এ. এস.এম
মুরসিদ (লিটু সিকদার)। মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর। মোবাইলঃ ০১৭১১ ৯৩৯৪৪৫