সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ
আষাঢ়ী পূর্ণিমা উপলক্ষে বাংলাদেশের ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেছেন, বুদ্ধের শিক্ষা প্রচার ও বৌদ্ধ ঐতিহ্যকে সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভারত। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার প্রাঙ্গণে আষাঢ়ী পূর্ণিমা উদ্যাপন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (আইজিসিসি) এর সহযোগিতায় বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ এই উপলক্ষ্যে আশীর্বাদ সহভাগিতা করতে গিয়ে বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি বুদ্ধপ্রিয় মহাথেরো বলেন, আষাঢ়ী পূর্ণিমার পবিত্র তাৎপর্য, যেদিন গৌতম বুদ্ধ সারনাথে তাঁর প্রথম ধর্মোপদেশ দিয়েছিলেন, সেই দিনটিকে চিহ্নিত করে, যার ফলে ধম্মচক্কপবত্তন বা ধর্মের চক্র ঘুরানোর সূচনা হয়েছিল। তিনি উল্লেখ করেন, এই দিনটি বর্ষাবাসের সূচনাও চিহ্নিত করে।
ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা তাঁর বক্তব্যে ভারত ও বাংলাদেশের অভিন্ন বৌদ্ধ ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরেন, যেখানে ভারত হলো বুদ্ধের বোধিজ্ঞান, প্রথম ধর্মোপদেশ ও মহাপরিনির্বাণের ভূমি এবং বাংলাদেশ হলো প্রভু অতীশের মতো বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দের আবাসস্থল। তিনি পুনরায় নিশ্চিত করেন, ভারত বৌদ্ধ নিদর্শন সংরক্ষণ, সন্ন্যাস শিক্ষাকে সমর্থন ও সাংস্কৃতিক সম্প্রীতি বৃদ্ধিতে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার মাধ্যমে ভগবান বুদ্ধের শিক্ষা প্রচার ও বৌদ্ধ ঐতিহ্যকে সমর্থন করার জন্য গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 'বৌদ্ধ সার্কিট' উদ্যোগের মাধ্যমে, ভারত সরকার ভগবান বুদ্ধের পদচিহ্ন অনুসরণ করে তীর্থযাত্রীদের ভারতের পবিত্র বৌদ্ধ স্থানসমূহ - লুম্বিনী থেকে বোধগয়া, সারনাথ থেকে কুশীনগর পরিদর্শনের সুযোগ করে দিয়ে থাকে।
এই আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংঘের সহ-সভাপতি রঞ্জিত কুমার বড়ুয়া ও ভদন্ত স্বরূপানন্দ ভিক্ষু।
এই অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক তরুণ প্রতিনিধি, ভিক্ষুসংঘ, শিল্পীবৃন্দ, শিক্ষাবিদগণ, কূটনীতিকগণ ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সদস্যবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার এই অনুষ্ঠান শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে, যা অন্ধকার দূরীকরণ ও জ্ঞানের জাগরণকে প্রতীকীভাবে নির্দেশ করে। এরপর ভদন্ত আনন্দমিত্র মহাথেরোর নেতৃত্বে ত্রিপিটক থেকে পবিত্র স্তোত্রপাঠ অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে “দ্য ওয়ে অব বুদ্ধ” শিরোনামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়, যেখানে বুদ্ধের জীবন, উপদেশ ও তাঁর বিশ্বব্যাপী প্রভাবকে চিত্রায়িত করে একটি দৃশ্যমান যাত্রা উপস্থাপন করে।
এই অনুষ্ঠানটি “বুদ্ধ – দ্য এনলাইটেন্ড ওয়ান” শীর্ষক একটি নৃত্যনাট্যের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়, যা পরিচালনা ও পরিবেশন করেন সৃষ্টি কালচারাল সেন্টারের পরিচালক ও ভারত সরকারের আইসিসিআর-এর প্রাক্তন শিক্ষার্থী, নৃত্যশিল্পী আনিসুল ইসলাম হিরো। ভারতের ‘গুরু-শিষ্য পরম্পরা’ পদ্ধতিতে ভারতনাট্যম শাস্ত্রীয় নৃত্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং অস্ট্রিয়ার ইন্টারন্যাশনাল সামার ব্যালে সেমিনার, জাপান, জার্মানি, শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন নৃত্য শিক্ষা ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে অংশগ্রহণের জন্য আনিসুল ইসলাম হিরো আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সুপরিচিত। তিনি নৃত্যকে সমাজসচেতনতা ও শিক্ষার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার জন্যও সমাদৃত, বিশেষ করে এইচআইভি/এইডস সচেতনতার ক্ষেত্রে। তাঁর নিবেদিত দলের সঙ্গে তাঁর পরিবেশনায় বুদ্ধের জ্ঞানলাভের যাত্রা অত্যন্ত শৈল্পিকভাবে ফুটে ওঠে, যা দর্শকদের প্রাণঢালা প্রশংসা অর্জন করে।
আষাঢ়ী পূর্ণিমা উদ্যাপন বুদ্ধের শান্তি, করুণা ও আধ্যাত্মিক রূপান্তরের বার্তার চিরন্তন প্রাসঙ্গিকতাকে পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেয় এবং ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর ও স্থায়ী সাংস্কৃতিক বন্ধনের একটি উজ্জ্বল সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এ. এস.এম
মুরসিদ (লিটু সিকদার)। মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর। মোবাইলঃ ০১৭১১ ৯৩৯৪৪৫