আব্দুল হামিদ মিঞাঃ
শ্রেণী কক্ষে পড়ার সময় ভূল পড়ছিলেন বেসরকারি মাদ্রাসার মক্তবের ছাত্র আব্দুর রহমান (১৪)। তাৎক্ষণিক তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন শিক্ষক বেলাল হুজুর। অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় চিকিৎকের াছে নেওয়া হয়। পরে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের কয়েকজন বিশেষজ্ঞকে দেখানো হলেও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি আব্দুর রহমান। অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটছে মা-বাবার। আব্দুর রহমান রাজশাহী বাঘার আড়ানী পৌর এলাকার চক সিংগা কাসিমূল উলুম কওমি মাদ্রাসার ছাত্র। সে উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের চক বাউসা গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে।
-
গত ৩০জুন ওই ছাত্রের বাবা মাদরাসার সুপার (বড় হুজুর) কামরুজ্জামান,বেলাল হুজুর,এলাজ হুজুর, ও রিয়াজ উদ্দীন হুজুরের নাম উল্লেখসহ ৮জনের বিরুদ্ধে বাঘা থানায় অভিযোগ করেছেন । তবে অভিযোগের আগেই স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মাদরাসায় বসে ছাত্রের চিকিৎসার জন্য মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছেন।
-
জানা যায়, গত ৩মে’২৫ ওই মাদ্রাসার শিক্ষক বেলাল হুজুরের ক্লাস করার সময় ভূল পড়ছিলেন আব্দুর রহমান। এসময় হাত দিয়ে গালে ও ঘাড়ের নীচে চড় থাপ্পড় মারেন বেলাল হুজুর। ওই সময় ছাত্র আব্দুর রহমানের শ্বাসকষ্ট ও খিচুনি দেখা দেয়। পরে অচেতন হয়ে পড়েন। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় চিকিৎসক আমিরুল ইসলামের কাছে নেওয়ার পর পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে দুইদিন (৪ মে হতে ৬ মে) চিকিৎসা নেন। ৭ মে ল্যাব এইড লিমিটেড রাজশাহীর পপুলারে সহকারি অধ্যাপক ডা.জসিম উদ্দীন(এমডি সাইক্রিয়াট্রি) এর ব্যবস্থপত্রে চিকিৎসা নেন। ২৬ মে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারির বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা.মঞ্জুরুল হক এর ব্যবস্থাপত্র মোতাবেক চিকিৎসা নেন। তাতেও অবস্থার উন্নতি হয়নি।
-
২২জুন ঢাকার পপুলার ডায়ানস্টিক সেন্টার (শ্যামলি শাখা,ইউনিট-২) এ গিয়ে মেডিসিন ও নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা.এমএস জহিরুল হক চৌধুরিকে দেখান। বর্তমানে তারই ব্যবস্থাপত্রে চিকিৎসা চলছে।
বৃহসপতিবার(৩জুন’২৫) ওই ছাত্রের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়,বিছানায় শুয়ে ঘুমাচ্ছিলেন আব্দুর রহমান। বিছানার পাশে বসে তার বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন ও মা রুমা বেগমের সাথে কথা বলার সময় ঘুমের ঘোরে আতকে উঠে দুই হাত বাকিয়ে (শিকটি-বিকটি) মোচড় দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লেন। এ সময় চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রসহ একগাদা পরীক্ষা নিরিক্ষার রিপোর্ট দেখান ছাত্রের বাবা।
-
তিনি বলেন,ঘটনার দিন বেলাল হুজুর জানান, আপনার ছেলের সমস্যা হয়েছে আপনি মাদরাসা আসেন। তিনিসহ আত্নীয়দের নিয়ে মারাসায় যান। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে চিকিৎসককে দেখিয়েছেন। মাদরাসার শিক্ষকরাও সাথে ছিলেন এবং খরচ বহন করেছেন। তবে ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে তাকেও ১০ হাজার টাকা ঋণ করতে হয়েছে।
-
অভিযোগ আকারে জাহাঙ্গীর বলেন, ঢাকার পপুলার ডায়ানস্টিক সেন্টার (শ্যামলি শাখা,ইউনিট-২) এর মেডিসিন ও নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা.এমএস জহিরুল হক চৌধুরিকে দেখানোর পর তার ছেলেকে ভর্তি করার জন্য বলেন। কিন্ত তার সাথে থাকা মাদরাসার শিক্ষক ভর্তি না করে বসুন্ধরা মেদানিপুর মাদরাসায় নিয়ে শাহরিয়ার কবীর নামে একজন চিকিৎসককে দেখিয়ে সাদা কাগজে লেখা তার ব্যবস্থাপত্র মোতাবেক ঔষধ কিনে দিয়ে চলে আসেন। ছেলেকে সেই ঔষধ সেবন না করায়ে পরে আবারো মেডিসিন ও নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা.এমএস জহিরুল হক চৌধুরিকে দেখান। তারই ব্যবস্থাপত্র মোতাবেক ঔষধ চলছে।
ঢাকা থেকে বাড়িতে ফিরে মাদরাসার সুপার কামরুজ্জামানকে বিস্তারিত জানানোর পর কর্নপাত করেননি। পরে ৩০জুন বাঘা থানায় অভিযোগ করেছেন ।
-
কিছুটা স্বাভাবিক হলে আব্দুর রহমানের সাথে কথা বললে বলেন, ওইদিন ক্লাসে বেলাল হুজুর আরবি পড়াচ্ছিলেন। পড়ার সময় তার একটা ভূল হয়েছিল। এনিয়ে হাত দিয়ে বাম গালে ও মাথার নীচে ঘাড়ে অনেকগুলো চড় থাপ্পড় মারেন। পরে শ্বাসকষ্ট ও খিচুনি হলে অচেতন হয়ে পড়ি। পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর বুঝতে পারি তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। পরে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়েছে। তবে সুস্থ হতে পারিনি। মাথা ও ঘাড়ে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছে। ক্লাস চললেও আমি ক্লাসে ফিরতে পারছি না। এটা ভেবে আরও কষ্ট পাচ্ছি।
-
মাদরাসায় গিয়ে কথা হলে শিক্ষক বেলাল হুজুর বলেন,পড়া বলে দেওয়ার পরেও ভূল পড়ছিল। ভুল-সঠিক না ভেবে তাৎক্ষণিক বাম গালে ১টা ও মাথার নীচে ঘাড়ে ১টা থাপ্পড় মেরেছেন। দুইটার বেশি তিনটাও মারেননি বলে দাবি তার। এতে এমন অবস্থা হবে ভাবতেই পারেননি।
-
মাদরাসার সুপার কামরুজ্জামান বলেন,ঘটনার শুরু থেকে আমরা চিকিৎসা ব্যয়ভার বহন করছি। বসুন্ধরা মেদানিপুর মাদরাসায় নিয়ে দেখানোর বিষয়ে বলেন,ডা.শাহরিয়ার কবীর মসজিদে নামাজ পড়তে এলে অনুরোধ করে তাকে দেখানো হয়। তুচ্ছ একটি ঘটনা গুজব ছড়িয়েও অনেক ক্ষেত্রে উত্তেজিত করে তোলা হচ্ছে লোকজনকে। শিক্ষদের দাবি ছেলেটা আগে থেকেই শারিরিকভাবে দুর্বল ছিল।
-
আড়ানি ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, ঘটনার পর মাদরাসায় বসে মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে চিকিৎসার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। উভয় মিলে চিকিৎসা করাচ্ছেন বলে জানি।
-
অভিজ্ঞরা বলছেন, পড়া না পারার কারণে একজন ছাত্রকে মারতে হবে? যদি সামাজিক মূল্যবোধের অভাব থাকে, নৈতিকতা এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধা না থাকে তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। পারিবারিক, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধেরও অভাবের কারণে নিজেরাই প্রতিরোধ করতে চাইছে। আইনের কঠোর প্রয়োগ হলে বিচারহীনতার এ ধরনের ঘটনা কমবে।
-
অভিযোগ তদন্তকারী অফিসার সহকারি পরিদর্শক (এসআই) হারুনুর রশিদ হারুন বলেন, অভিযোগ তদন্তকালে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসার কথা বলে সময় নিয়েছেন। যেহেতু চড় থাপ্পড় মেরেছে,তাই শরীরে আঘাতের চিহৃ পাওয়া যায়নি। তবে ছাত্র পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেনি।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এ. এস.এম
মুরসিদ (লিটু সিকদার)। মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর। মোবাইলঃ ০১৭১১ ৯৩৯৪৪৫