চলতি বছরে জানুয়ারি থেকে নভেম্বর মাস প্রর্যন্তু মহম্মদপুরে ১০৫টি আত্মহনের ঘটনা ঘটেছে। পারিবারিক কলহ ও প্রেমঘঠিত বিষয়ে অধিকাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে আগষ্ট মাসেই ২৩টি আত্মহত্যার ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোতে সবচে বেশী আত্মহননের ঘটনা ঘটেছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে প্রতিবছর আট লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে, অর্থাৎ প্রায় প্রতি ৪৫ সেকেন্ডে একজন মানুষ বেছে নেয় আত্মহননের পথ। গভীর বিষন্নতা এবং অন্যান্য মানসিক রোগ, যেমন সিজোফ্রেনিয়া, বাই-পোলার, মুড ডিজর্ডার ইত্যাদির সঙ্গেই শুধু আত্মহত্যা জড়িত।
সেই সঙ্গে সামাজিক, পরিবেশগত কারণ এবং অন্যান্য ঝুঁকি মিলিয়ে একজন মানুষ আত্মহত্যা করে বলে জানিয়েছেন মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোকছেদুল মোমিন। তিনি আরো জানান, পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিসহ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আন্তরিকতা হ্রাস পেলে আত্নহত্যার ঝুকি বৃদ্ধি পায়। আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে সবাইকে একযোগে কাজ করা উচিত। তিনি আরও বলেন, কারও জ্বর হলেই যেমন প্যারাসিটামল খেতে হয়, তেমনি বিষন্নতা বা অন্য কোনো মানসিক সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং প্রয়োজনে ওষুধ নেওয়া জরুরি।
তবে সামাজিক বা সরকারিভাবে সচেতনতা মুলক কর্মকান্ড না উল্লেযোগ্য কোন পদক্ষেপ না থাকায় আত্মহত্যার প্রবনতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে বলে কেউ কেউ অভিমত প্রকাশ করেছেন।
৮টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত মহম্মদপুর উপজেলা। জনসংখ্যা প্রায় আড়াইলাখ। মাঝে মধ্যেই আত্মহত্যার খবর পাওয়া যায়। চলতি বছরের আগষ্ঠ মাসে মহম্মদপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৬ ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন। আগষ্ট পরবর্তী সেপ্টেম্বরে ১৬,অক্টোবরে ১২ এবং নভেম্বরে ২১ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন।
তবে আগষ্ট মাসে ২৩ জনের আত্মহত্যার বিষয় নিয়ে এলাকায় ভীতির সঞ্চার হয়েছে। ৩ আগষ্ট উপজেলার বিনোদপুর এলাকায় মিরা খাতুন (১৯), ৪ আগষ্ট বাবুখালি ইউনিয়রে বৃহসনগর এলাকায় রিয়া বিশ্বাস (১১), ১৩ আগষ্ট শুকুরণ নেছা (৭৫), ১৬ আগষ্ট দীঘা ইউনিয়নের নমিতা রানী বিশ্বাস (২২), ২২ আগষ্ট উপজেলা সদরের গোপালনগর গ্রামে মোহন শেখ (১৮), ১৯ আগষ্ট চিত্তবিশ্রাম এলাকায় মর্জিনা বেগম (৫২), ২৩ আগষ্ট বড়রিয়া গ্রামে বেদেনা খাতুন (৬৫), নিখড়হাটা গ্রামে আলি হাসান (২০), ২৪ আগষ্ট বিনোদপুর এলাকায় আরফিনা খাতুন (২০), নহাটায় ইসমোত আরা (১৬), ২৫ আগষ্ট চরপাচুড়িয়ায় ছায়েরা খাতুন (১১), নহাটায় আলেয়া খাতুন (১৭), ২৮ আগষ্ট চরপাচুড়িয়ায় বৈশাখী খাতুন (১৩), একই দিনে চাকুলিয়ায় স্বপ্না খাতুন (১৯), এবং ৩০ আগষ্ট নহাটা ইউনিয়নের গঙ্গানন্দপুর গ্রামে সামিউল (১৮) নামের এক কিশোর আত্মহত্যা করে।
আত্মহননকারীদের মধ্যে ৩ জনের বয়স ৫৩ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে বাকিসব ১১ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। এদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। কয়েকটি আত্মহত্যার ঘটনা প্রেম ঘঠিত হলেও অধিকাংশ ঘটনা পারিবারিক কলহে সংঘঠিত হয়েছে। প্রায় প্রতিটা ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
আত্মহত্যার প্রবণতা প্রতিরোধে বিভিন্নজন বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। ডা. আবু আহসান বলেন, আত্মহত্যার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা বা রোগকে। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় অবসাদ (ডিপ্রেশন), অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি ইত্যাদি বেশ কিছু অবস্থার নাম।
এক্ষেত্রে সহমর্মিতার সঙ্গে এদের বুঝিয়ে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা দরকার। আত্মহত্যা প্রতিরোধে সেটাই প্রথম ধাপ। ডা. সাইফুর রহমান বলেন, মনে রাখা প্রয়োজন, মানসিক সমস্যায় ক্লিষ্ট মানুষটির প্রতি সমানুভূতি বা সহানুভূতিশীল হবার জন্য রোগ নির্দিষ্ট করা জরুরি নয়, বরং মনোরোগীর তকমা এবং তার সঙ্গে জড়িত সামাজিক অপবাদ কাউকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
আবার চরম শারীরিক যন্ত্রণা বা নিরাময়ের অযোগ্য কঠিন শারীরিক ব্যাধির কারণেও কেউ আত্মহত্যা করতে পারেন। ডা. তপন কুমার বলেন, আত্মহত্যা কিছুটা ছোঁয়াচেও বটে, যদিও জীবাণুঘটিত রোগ নয়। কেউ আত্মহত্যা করলে তাঁর ঘনিষ্ঠ পরিসরে অন্যদের আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়ে যায়।
আবার কোনো বিখ্যাত ব্যক্তি আত্মহত্যা করলে বা গণমাধ্যমে আত্মহত্যার দৃশ্য বা বিবরণ দেখলেও আত্মহত্যার চেষ্টা করার সম্ভাবনা বাড়ে। এতে মনে হয়, নির্দিষ্ট শারীরিক, মানসিক বা সামাজিক কারণে কোনো মানুষ যখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন, তখন একটি আত্মহত্যার ঘটনা তাঁর সামনে মডেল হয়ে উঠতে পারে এবং তিনি সেই পথটিই বেছে নিতে পারেন।
তবে আত্মহত্যা প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। এ বিষয়ে মহম্মদপুর আমিনুর রহমান কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক ওসমান আলী বলেন, আত্মহত্যার প্রবনতা কমাতে হলে সরকারিভারে সামাজিক উদ্যোগে সচেতনমুলক প্রচার-প্রচারণা বৃদ্ধি করতে হবে। মহম্মদপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমীর চক্রবর্ত্তী বলেন, কোন সমস্যার সমাধান আত্মহত্যা না এবং এর পরিণতি বিষয়ক সেমিনার করা জরুরী।
অক্টোবর মাসে মহম্মদপুর উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় মিটিংএ মহম্মদপুরে আত্মহত্যার অধিক প্রবনতা নিয়ে আলোচনা হয়।
উপজেলা কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার আবু আহসান আলোচনায় বিষয়টি উত্থাপন করলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবু আব্দুল্লাহ্ আল কাফী পৃথক বক্তব্যে বলেন, প্রতিটা ইউনিয়নের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের মাধ্যমে সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সমন্বয়ে এলাকার সাধারন মানুষদের নিয়ে পথসভা বা উঠান বৈঠকের মাধ্যমে তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে সমস্যা চিহ্নিত করে প্রতিকারে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। এই মর্মে সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এ বিষয়ে মহম্মদপুর থানার ওসি তদন্ত মামুন বিশ্বাস বলেন, মহম্মদপুরে আত্মহত্যার প্রবনতা অনেক বেশী। প্রতিটা আত্মহত্যার ঘটনায় আমরা অপমৃত্যুর মামলা নিয়ে থাকি। তবে কোন ঘটনায় অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে আইনানুক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মুরসিদ আহমেদ সিকদার, মোবাইল : 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর, ই-মেইলঃ [email protected]
Copyright © August, 2020-2025 @ Daily Somoyer Protyasha