ইসমাইল হোসেন বাবুঃ
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নামে উন্মুক্ত স্থানে ময়লার স্তুপ, বিপর্যস্ত পরিবেশ — এভাবে উন্মুক্ত স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলানোর কারণে পরিবেশ দূষিত হয়ে উঠছে কুষ্টিয়ায়। সারা দেশের মতো কুষ্টিয়াতেও বছর ঘুরে প্রতিবারই নানা আয়োজনে পালিত হয় পরিবেশ দিবস।
স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্যোগও নেওয়া হয় এসব দিবস পালনের মধ্য দিয়ে। তবে, বাস্তবিক অর্থে লাভের লাভ কী হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। ঐতিহ্যবাহী এই জেলার মানুষ নানাবিধ পরিবেশ বিপর্যয়ের শিকার।
এ বছর ঈদ-উল-আযহার ছুটির কারণে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয়নি। তা দেশব্যাপী পালিত হয়েছে বুধবার (২৫ জুন)। বাদ যায়নি কুষ্টিয়াতেও।
বুধবার ২৫ জুন বেলা সাড়ে ১২টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের উদ্যোগে ‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনই সময়’ — এই স্লোগানে পরিবেশ দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলম সভায় আলোচনা করেন।
সভা থেকে পরিবেশ রক্ষায় বরাবরের মতো এবারও দেওয়া হয় নানা পরামর্শ। কিন্তু, অতীতের উদ্যোগসমূহের কোনো মূল্যায়ন করা হয়নি। যেখানে দেখা যায়, এসব আয়োজনের মাধ্যমে অতীতে যে প্রত্যাশা করা হয়েছিল, তার ৩০ শতাংশও অর্জিত হয়নি। উল্টো উন্মুক্ত ড্রেনেজ-সুয়ারেজ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের কারণে নানা রোগ বিস্তারসহ দূষিত পরিবেশে উৎকট দুর্গন্ধে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে প্রাচীনতম এই জনপদে।
পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, উন্মুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইনত সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। আর্থিক ও জনবল সীমাবদ্ধতায় বিস্তীর্ণ এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতার ঘাটতির কথা জানিয়ে, সঠিক ভূমি চত্বর (প্রপার ল্যান্ডফিল্ড) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে উন্মুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সৃষ্ট দূষণ রোধ সম্ভব হবে বলে জানায় পৌর কর্তৃপক্ষ।
কুষ্টিয়া পৌরসভার বাড়াদি-যুগিয়া মাঠের একমাত্র ডাম্পিং ইয়ার্ডে উন্মুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে। আশপাশের পানি ও বায়ু দূষণের ফলে উৎকট দুর্গন্ধে চরম বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা। এর পাশ দিয়ে চলাচলরতরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ছড়িয়ে পড়ছে নানাবিধ রোগবালাই।
এমনকি ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে আশপাশের কৃষি জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় চাষিদের।
জরুরি ভিত্তিতে এমন দুর্বিষহ, স্বাস্থ্যহানিকর পরিবেশ সুরক্ষায় অন্ততপক্ষে বাউন্ডারি ওয়াল দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
বাড়াদি গ্রামের কৃষক নবীর আলী অভিযোগ করেন, “পৌরসভার পরিবেশ বাঁচাতে গিয়ে এই ভাগাড়ে যেভাবে ময়লা-আবর্জনা পচাচ্ছে, এই মাঠে কাম (কাজ) করতি আসলি দুর্গন্ধে আমারে কইলজিও পইচি যাচ্ছে। এই দুঃখের কথা কেউ শোনে না। রাইত নি, দিন নি, যেকন সেখন আগুন জ্বালা দিলি, তকন এই এলাকায় আর থাকা যায় না।”
স্থানীয় বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, “ময়লা ফেলার কারণে গন্ধে আমরা থাকতে পারি না। ভাত খেতে বসলেও গন্ধ লাগে। মরা জীবজন্তুর দেহ এখানে খোলা স্থানে ফেলা হয়। গন্ধে না থাকতে পেরে সেগুলো পরে আমাদের সরাতে হয়।”
যুগিয়া গ্রামের বিদ্যুৎকর্মী আমিরুল ইসলামের অভিযোগ, “প্রতিদিন এই রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হয়। প্রায়ই পৌরসভার ভ্যান চালকরা এসে রাস্তার ওপরই ময়লা ফেলে চলে যায়। এতে একটু জোরে বাতাস কিংবা বৃষ্টি হলে এই রাস্তায় যাতায়াত তো দূরের কথা, এই এলাকাতেই ঢোকা যায় না।”
তবে পাশেই স্থাপিত মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম কেন্দ্রের ইনচার্জ সাব্বির হোসেন বলেন, “এখানে ডাম্পিং ইয়ার্ডে উন্মুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম চললেও মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সেই সুযোগ নেই। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরিবেশ দূষণ রোধে গুরুত্বপূর্ণ আরও একটি খাত হলো মেডিকেল স্ক্র্যাপ, যা ক্যান্সারসহ মানবদেহে নানাবিধ প্রাণঘাতি রোগের কারণ হতে পারে।”
সে কারণে সংবিধিবদ্ধ নির্দেশনা মেনে সুরক্ষিত কম্পাউন্ডে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম নিশ্চিতের পাশাপাশি সকল নাগরিকের করণীয় তুলে ধরেন সাব্বির হোসেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক আতাউর রহমান জানান, স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশ সুরক্ষায় উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো সুযোগ নেই। কুষ্টিয়া পৌরসভার বাড়াদি-যুগিয়া মাঠে উন্মুক্ত ডাম্পিং ইয়ার্ডে যেভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম চলছে, তাতে ওই এলাকার মানুষ তাদের ভোগান্তির অভিযোগ দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, সেখানে পানি ও বায়ুর মাধ্যমে দূষণ রোধ এবং জীবাণু বহনকারী মশা-মাছি থেকে রক্ষা পেতে ইতিমধ্যেই পৌর কর্তৃপক্ষকে জরুরি ভিত্তিতে অন্তত একটি বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের অনুরোধ করে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া পৌরসভার শহর পরিকল্পনাবিদ রানভীর আহমেদ বলেন, “প্রকৃত অর্থে পরিবেশ-সুরক্ষিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সংরক্ষিত ভূমি চত্বর (প্রপার ল্যান্ডফিল্ড) না থাকায় আমাদের এই উন্মুক্ত ডাম্পিং ইয়ার্ডে কাজ সারতে হচ্ছে। তবে এ বছরের শেষের দিকে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ওইখানে প্রস্তাবিত (প্রপার ল্যান্ডফিল্ড) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এই সমস্যা আর থাকবে না।”
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এ. এস.এম
মুরসিদ (লিটু সিকদার)। মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর। মোবাইলঃ ০১৭১১ ৯৩৯৪৪৫