ইসমাইল হােসেন বাবুঃ
কুষ্টিয়া শহরের গড়াই নদীর তীরবর্তী দুই পাড় দখলের কবলে পড়েছে। অবৈধ স্থাপনা ও বাধের দুইপাড় দখলের কারণে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে গড়াই নদীর শহর রক্ষা বাঁধ। স্বেচ্ছাচারিভাবে নদীতীরে দোকান পাঠ, খামার, প্রতিষ্ঠান, এমনকি ঘর বাড়িও নির্মাণ করা হচ্ছে।
-
নদীর কিছু কিছু জায়গায় ইতিমধ্যেই দখলদাররা বালু মহাল তৈরি করে পুরো চর দখল করে নিয়েছে। এমনকি নদীর তীরে মোটা বালি চিকন বালির বিশাল বিশাল বড় বড় গাদি করে ট্রলি ও ডাম ট্রাক এর মাধ্যমে এসব বালি বিক্রয় করছে। যা নদী রক্ষা বাঁধ ও তীর হুমকির মধ্যে পড়েছে। এছাড়াও নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে ক্ষমতাসীনদের ছত্র ছায়ায় বিভিন্ন মানুষকে টাকার বিনিময়ে জায়গা বিক্রয় করে তাদেরকে বসবাস করার অনুমতিও দেওয়া হচ্ছে।
-
এলাকাবাসীর দাবি, এ দখলদাররা এলাকার উচ্চ পদের লোকদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে যার ফলে এদের কিছুই হচ্ছে না। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অবৈধ দখলদারদের হাতে বেদখল হয়ে যাচ্ছে কুষ্টিয়া গড়াই নদীর চর ও তীরবর্তী অঞ্চল গুলো। কিছু অসাধু চক্র ক্ষমতার বড়াই দেখিয়ে একের পর এক দখল করে নিচ্ছে গড়াই নদীর পাড়। কুষ্টিয়া থানাপাড়া থেকে শ্মশান ঘাট পর্যন্ত ক্ষমতা দেখিয়ে নদী তীরে দোকান পাঠ, খামার এমনকি ঘরবাড়ি ও নির্মাণ করেছে ওই ভূমিদস্যুরা।
-
কোথাও কোথাও পাকা দোতলা পর্যন্ত বাড়ি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কুষ্টিয়া হরিপুর ব্রিজের দুই পাশে দোকানপাট করেছে। এমনকি ব্রিজের পিলার দখল করে দোকান তৈরি করা হয়েছে। এতে হুমকিতে রয়েছে নদীর পাশবতী এলাকাসহ মানুষজন। এছাড়াও এইসব দখলবাজদের জন্য সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে কুষ্টিয়া গড়াই নদীর তীর। নষ্ট হচ্ছে নদীর পরিবেশ ও প্রকৃতি। নদী দখল হওয়া এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে কুষ্টিয়া শহর সংলগ্ন জুগিয়ার নদী তীরবর্তী অঞ্চল, মঙ্গলবাড়িয়া বাঁধ সংলগ্ন, রেইনউক বাঁধ ও এর পাশ্ববর্তী এলাকা, হরিপুর সংযোগ ব্রিজ এলাকা, হরিপুরের বিভিন্ন নদীর তীর সংলগ্ন এলাকা, বড়বাজার ঘোড়ার ঘাট এলাকা, শ্বশ্নান ঘাট, সৈয়দ মাসউদ রুমী সেতু সংলগ্ন এলাকা, কয়া বাজার ও কুমারখালী শহররক্ষা বাঁধ।
-
খোকসা উপজেলাতেও চলছে নদী দখলের মহোৎসব। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, গড়াই নদীর কোল ঘেঁষে নানান রকম সাইনবোর্ড দিয়ে বসানো হচ্ছে স্থাপনা এবং ঘর, দোকান। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দখলদাররা এতটাই বেপরোয়া হয়ে ওঠে যে, তারা নদীতীরের সীমানা পিলার পর্যন্ত উপড়ে ফেলে দেয়। এমন কে নদীর রক্ষা বাঁধের ওপরেও বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা তৈরি করছে। নানামূখী অব্যবস্থাপনার কারণে পানি প্রবাহ হারানো নদীগুলো এভাবে দখলে চলে যাচ্ছে। এ দখলদারিকে কেন্দ্র করে নদী তীরে বেশ কয়েকবার রক্তা রক্তির ঘটনাও ঘটেছে। তবে এই সবই সম্ভব হচ্ছে দীর্ঘদিন দখলবাজদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা না নেয়ার কারনে। অতি দ্রুত এই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করলে শহররক্ষা বাঁধ যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে।
-
পরিবেশবিদদের মতে, নদী দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ফলে একদিকে যেমন নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে নাব্যতা সংকটও দেখা দিচ্ছে। এরফলে বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন তারা। গড়াইয়ের পানি প্রবাহের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৪ জেলার মানুষের ভালোমন্দ। তাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রিত হয় গড়াইয়ের ওপর। একটু বলে রাখা দরকার, ১৯৫৪ সালে কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চলে সেচ সুবিধা ও বন্যা থেকে ফসল ও জনপদ রক্ষার জন্য গঙ্গা কপোতাক্ষ পরিকল্পনা (জিকে) সেচ প্রকল্প নামে কার্যক্রম চালু হয়।
-
জাতিসংঘের সহযোগিতায় চালু হওয়া সে প্রকল্পের আওতায় ফসল উৎপাদন বেড়ে যায় প্রায় তিনগুণ। এ প্রকল্পের মূল উৎস ছিল গড়াই। গড়াই নাব্য সংকটে থাকায় উৎসমুখের কাছে ভেড়ামারাতে পাম্প হাউস স্থাপন করে এ প্রকল্প টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল, তাও রক্ষা হয়নি। গড়াই শুকিয়ে যাওয়ার ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পরিবেশের ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সুন্দরবনের জন্য গড়াই নদী খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গড়াই নদী, যা গঙ্গা নদীর একটি শাখা, মূলত সুন্দরবনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মিঠা পানির সরবরাহ নিশ্চিত করে। এই নদীর মাধ্যমে আসা মিঠা পানি সুন্দরবনের বাস্তসংস্থানের জন্য অপরিহার্য।
-
গড়াই নদীর পানির প্রবাহ কমে গেলে সুন্দরবনের লবণাক্ততা বেড়ে যায়, যা সেখানকার উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এখন তো নিশ্চিত মরূকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এ জেলাগুলো।
-
তবে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রে জানা যায়, এসব অবৈধ স্থাপনা নিয়ে কাজ করছে তারা। অতি দ্রুতই এগুলো ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশিদুর রহমান।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এ. এস.এম
মুরসিদ (লিটু সিকদার)। মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর। মোবাইলঃ ০১৭১১ ৯৩৯৪৪৫