আালিফ হোসেনঃ
রাজশাহীর তানোরে আলুর জমিতে রোপণকৃত টি-আমণ ধান কাটা শুরু হয়েছে। এ বছরের ফলন ও দামে খুশি কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ধান কাটা শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে।কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বিঘায় ধানের ফলন হচ্ছে (সাড়ে ৩৭ কেজিতে এক মণ) ২৪ মণ থেকে ২৬ মণ পর্যন্ত। প্রত মণ ধান বিক্রি করছেন এক হাজার দুশ' টাকা দরে।
-
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৩ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছিলো। আলু তোলার পর পুরো জমিতেই টি-আমণ ধান চাষ করেছেন কৃষকরা। গত কদিনের বৃষ্টিতে বর্তমানে বেশির ভাগ জমিতে পানি জমেছে। এতে শ্রমিকরা ধান কেটে মাঠ থেকে আনতে পারছেন না।
-
তবে রাস্তার ধারের কিছু কিছু জমি থেকে ট্রাক্টরে কাটা ধান নিয়ে আশা হচ্ছে। অধিকাংশক্ষেত্রে কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিনে ধান কেটে অল্প সময়ের মধ্যেই সড়কের ধারে সরাসরি বস্তাবন্দি করা হচ্ছে।বস্তাবন্দি করা ধান সড়কের ধার থেকেই ট্রাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন পাইকার ব্যবসায়ীরা। খরচ কম ও ঝামেলা মুক্ত হওয়ায় জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির এই কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন। তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউপির প্রাণপুর পাঠাকাটা গ্রামের আদর্শ কৃষক কামরুল ইসলাম বলেন, এ বছর আলু তোলার পর তার ১৫ বিঘা জমিতে টি-আমণ ধান চাষ করেছেন।
-
এর মধ্যে ৭ বিঘা জমির ধান মেশিনে কেটে মাঠ থেকেই বিক্রি করেছি। বাকি ৮ বিঘা জমির ধান দু’এক দিনের মধ্যেই কাটা হবে। তিনি বলেন, প্রতি বিঘায় মেশিন খচর দিতে হয়েছে ২ হাজার তিনশ' টাকা। শ্রমিক দিয়ে কাটলে সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হতো। মেশিনে ধান কাটার কারনে খরচ কম হওয়ায় পাশাপাশি জমি থেকেই স্বল্প সময়ে ধান বিক্রি করা যাচ্ছে।তিনি বলেন, বিঘা প্রতি ফলন হচ্ছে (সাড়ে ৩৭ কেজিতে মণ) দুই মণের বস্তায় ১৩ বস্তা, প্রতি বস্তা ধান জমি থেকেই বিক্রি হচ্ছে এক হাজার দুশ' টাকা দরে।
-
প্রতি বিঘা জমির ধানের দাম প্রায় ২৮ হাজার টাকা এবং প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা।এ বছর প্রতি বিঘায় কৃষকের লাভ হচ্ছে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা। তিনি আরো বলেন, জমিতে পানি জমে কাঁদায় পরিণত হয়েছে, এ কারণে শ্রমিকরা ধান কাটতে পারছেন না। তাই আধুনিক কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটা হচ্ছে। তানোর উপজেলার মাঠ জুড়ে এখন দোল খাচ্ছে পাঁকা টি-আমণ ধানের শীষ। মাঠের চারি দিকেই পেকে গেছে আলু তোলার পর রোপণকৃত টি-আমণ ধান। জমিতে পানি জমে কাঁদা হওয়ায়।এমুহূর্তে এই ধান কেটে শ্রমিক দিয়ে তোলা কৃষকদের জন্য খুবই কষ্টকর।
-
কৃষকদের জন্য আশির্বাদ হয়ে এসেছে ধান কাটা ও মাড়াই করা আধুনিক মেশিন কম্বাইন্ড হারভেস্টর নামের এই মেশিন। কৃষকদের উৎপাদন খরচ এবং সময় বাঁচাতে সক্ষম এসব প্রযুক্তির ব্যবহারে কৃষিতে বিপ্লব ঘটবে বলে এমনটাই জানিয়েছেন কৃষিবিদরা।
-
উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌর এলাকায় ১০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিন কৃষকদের দেয়া হয়েছে। প্রতিটি মেশিনের মূল্য ২৫ লাখ টাকা। এসব আধুনিক কম্বাইন্ড হারভেস্টারের সাহায্যে ঘণ্টায় দেড় একর জমির ধান কাটা এবং একই সঙ্গে মাড়াই কাজ সম্পন্ন করতে পারবে কৃষকরা।এছাড়া এর আগে আরো ৫টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, মাঠের ধান পাকলেই কাটার জন্য দুশ্চিন্তা বেড়ে যেত। গ্রামে গ্রামে শ্রমিক খুঁজতে হতো। আর শ্রমিক পাওয়া গেলেও মজুরি ও খরচ বেশি হওয়ায় পাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়তে হতো এসব কৃষকদের।
-
তানোরে কম্বাইন্ড হারভেস্টর ১টি মেশিনের মালিক উপজেলার পাঁচন্দর ইউপির দুবইল গ্রামের বিমল বলেন, বিঘা প্রতি দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকি। তিনি বলেন, প্রতিদিন ২০ বিঘা থেকে ২৫ বিঘা জমির ধান কাটা সম্ভব হয়। তিনি বলেন, সরকারি ভূর্তুকিতে এই মেশিনটি কিনেছিলাম খরচ বাদে লাভ ভালোই হয়। তিনি আরও বলেন, এই মেশিন ধান কাটার সুয়োগ না থাকলে কৃষকদের আলুর জমিতে রোপণকৃত বোরো ধান ঘরে তুলতে চরম বিপাকে পড়তে হতো। কৃষকদের চাহিদা মেটাতে হিমসিম খাচ্ছি। সময় সুযোগ বুঝে সিরিয়াল অনুযায়ী ধান কেটে দিচ্ছি।
-
এবিষয়ে তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহমেদ বলেন, আলু তোলার পর রোপণকৃত টি-আমণ ধান কাটা শুরু হয়েছে ফলন ও দাম ভালো পাচ্ছেন কৃষকরা।তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কম্বাইন্ড হারভেস্টার যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। এ উপজেলায় ১৫টি মেশিন দিয়ে কৃষকদের ধান কাটা হচ্ছে। এতে সময় ও খরচ অনেক কম লাগে বলে তিনি জানান।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এ. এস.এম
মুরসিদ (লিটু সিকদার)। মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর। মোবাইলঃ ০১৭১১ ৯৩৯৪৪৫