সেলিম সানোয়ার পলাশঃ
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় ও তীর্থস্থান শ্রী পাট খেতুরী ধামে শুক্রবার (১৩ জুন) গৌরাঙ্গদেব ট্রাস্ট বোর্ডের ট্রাস্টিদের হেনস্তার করার কৌশল নিয়ে একটি অনুমতিহীন ধর্মীয় সমাবেশের আয়োজনের প্রচেষ্টা ঘিরে উদ্ভূত হয়েছে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি। স্থানীয় শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গদেব ট্রাস্ট বোর্ড এই আয়োজনকে ‘ট্রাস্টিদের হেনস্তার করার কৌশল, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ দাবি করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
-
গৌরাঙ্গদেব ট্রাস্ট বোর্ডের সদস্যদের সূত্র মতে, গৌরাঙ্গদেব ট্রাস্ট বোর্ডের বহিষ্কৃত সাবেক সদস্য সুনন্দন দাস রতন, যিনি গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক, ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক এমপি ফারুক চৌধুরীর আস্তাভাজন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি ও তার অনুসারীরা "আধুনিক সনাতন ধর্ম" নামে একটি ব্যানারে ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের এ ঘোষণা দিয়ে ছিলেন।
-
এ বিষয়ে গৌরাঙ্গদেব ট্রাস্ট বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উক্ত অনুষ্ঠানটি বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া আয়োজন করা হচ্ছে। তারা অভিযোগ করেছেন, এই আয়োজনের মাধ্যমে ধর্মীয় বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও সনাতন সমাজে বিভাজন ঘটানোর অপচেষ্টা চলছে।
ট্রাস্ট বোর্ডের সভাপতি বিদ্যুৎ নারায়ণ সরকার এক লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, গোদাগাড়ী উপজেলার হিন্দু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মাঝে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে একাংশকে ভুল পথে প্ররোচিত করার প্রয়াস চালানো হচ্ছে। এই সমাবেশ শ্রী পাট খেতুরী ধামের পবিত্রতা নষ্ট করতে পারে এবং সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে।
-
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, খেতুরী ধাম একটি সম্মানিত তীর্থস্থান, যেখানে শ্রী চৈতন্যদেবের ভাবধারায় বহু বছর ধরে ধর্মীয় ও সামাজিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। অননুমোদিত জনসমাবেশ বা ধর্মীয় কার্যক্রমের মাধ্যমে এই ঐতিহ্যে আঘাত হানার চেষ্টা করা হলে তা সামাজিক শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে ট্রাস্ট বোর্ড রাজশাহীর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে লিখিতভাবে আবেদন করেছে যাতে উক্ত দিন ও সময়কালে ধর্মীয় স্থানের ভেতরে কোনো অনুমতিবিহীন জনসমাবেশ না হয় এবং যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
-
এদিকে ধর্মীয় সমাবেশের আয়োজকরা সমাবেশে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম ‘স্থায়ী কমিটির’ সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আসবেন বলে অপপ্রচার চালান। স্থানীয় বিএনপির নেতা কর্মিরা বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আসার গুনজন শুনে গৌরাঙ্গবাড়ী (শ্রী পাট খেতুরী ধামে) গিয়ে খোজ নিলে গৌরাঙ্গদেব ট্রাস্ট বোর্ডের কেউই বিষয়টি জানেন না বলে জানান। এছাড়াও বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আসার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনও জানেন না।
-
ট্রাস্ট বোর্ডের সভাপতি বিদ্যুৎ নারায়ণ সরকার বলেন, এর আগেও গৌরাঙ্গদেব ট্রাস্ট বোর্ডের সদস্য থাকা কালিন সময় সুনন্দন দাস রতন নিজের জমিতে য়াওয়ার জন্য গৌরাঙ্গবাড়ীর জায়গা দখল করে রাস্তা তৈরী করেছিল। যা ট্রাস্ট বোর্ডের সদস্যরা, স্থানিয় জনগন ও প্রশাসন মিলে সেই রাস্তা দখল মুক্ত করা হয়েছিল। বিভিন্ন অপকর্মের জন্য ট্রাস্ট বোর্ডের সদস্য থেকে তাকে বহিষ্কার করে গৌরাঙ্গদেব ট্রাস্ট বোর্ড। বহিস্কার হওয়ার পর থেকে সে বিভিন্ন ভাবে গৌরাঙ্গদেব ট্রাস্ট বোর্ডের সদস্যদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ট্রাস্ট বোর্ড দখলের হীনচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসাবে "আধুনিক সনাতন ধর্ম" নামে একটি ব্যানারে ধর্মীয় সমাবেশের ঘোষনা দেন। সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম ‘স্থায়ী কমিটির’ সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সমাবেশে আসবেন বলে গুনজন ছড়ালেও আমরা বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আসার বিষয়টি জানিনা।
-
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদকে ফোন করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে দেখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
-
এ বিষয়ে নিরাপত্তার স্বার্থে সহকারী ভূমি কমিশনার মো. শামসুল ইসলামকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনাস্থলের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় স্থানীয় থানাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সকাল ১০ টার সময় ধর্মীয় ও তীর্থস্থান শ্রী পাট খেতুরী ধামে গিয়ে দুপুর ২ টা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া চোখে পড়েনি, তবে প্রতিদিনের ন্যায় বিভিন্ন এলাকা থেকে ভক্তদের আনাগোনা ও পুলিশ প্রশাসনের জোরদার টহলদারী দেখা গেছে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করেছে।
-
উল্লেখ্য, আধুনিক সনাতন ধর্ম নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে এই অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে, যার স্ক্রিনশট ট্রাস্ট বোর্ড কর্তৃক সংযুক্ত করে প্রশাসনের কাছে দাখিল করা হয়েছে।
-
স্থানীয়রা জানান, এই ধরনের বিভাজনমূলক কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিনের ধর্মীয় সহাবস্থানকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও ধর্মীয় স্থানের পবিত্রতা রক্ষায় দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবিও উঠেছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এ. এস.এম
মুরসিদ (লিটু সিকদার)। মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর। মোবাইলঃ ০১৭১১ ৯৩৯৪৪৫