খোন্দকার আব্দুল মতিনঃ
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যেখানে প্রতিটি ইবাদত মানুষের আত্মিক, ব্যক্তিত্বিক এবং সামাজিক পরিশুদ্ধির জন্য নির্ধারিত। তেমনই এক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো কোরবানি। কোরবানি শুধুমাত্র পশু জবাই নয়, বরং এটি আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, তাকওয়া এবং আত্মত্যাগের প্রতীক। এই ইবাদতের মাধ্যমে একজন মুমিন নিজের ভেতরের স্বার্থপরতা, অহংকার ও দুনিয়ামুখী প্রবৃত্তিকে কেটে ফেলে পরিণত হয় একজন খাঁটি ঈমানদারে।
-
কোরবানির ইতিহাস শুরু হয় হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র ইসমাঈল (আ.)-এর ঐতিহাসিক ঘটনার মাধ্যমে। আল্লাহ তাআলা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-কে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় জিনিস—নিজ পুত্রকে কোরবানি করার নির্দেশ দেন। কোনো প্রশ্ন না করে, কোনো দ্বিধা ছাড়াই তিনি এই নির্দেশ পালন করতে প্রস্তুত হন। ইসমাঈল (আ.)-ও আল্লাহর আদেশে সাড়া দিয়ে বলেছিলেন, “আপনি আমাকে ইনশাআল্লাহ ধৈর্যশীল পাবেন।” (সুরা সাফফাত: ১০২) এই ঘটনা প্রমাণ করে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একজন মুমিনকে যে কোনো ত্যাগে প্রস্তুত থাকতে হয়।
-
আল্লাহ বলেন, “আল্লাহর কাছে তাদের মাংস ও রক্ত পৌঁছায় না, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।” (সুরা হজ: ৩৭) এ আয়াত স্পষ্ট করে দেয় যে কোরবানির মূল উদ্দেশ্য আল্লাহভীতি এবং অন্তরের খাঁটি নিয়ত। আজকের মুসলিম সমাজে যখন দুনিয়াপ্রীতি, স্বার্থান্বেষণ ও আত্মকেন্দ্রিকতা দিন দিন বাড়ছে, তখন কোরবানির শিক্ষা মানুষকে আল্লাহর পথে আত্মোৎসর্গের অনুপ্রেরণা দেয়।
-
কোরবানির আরেকটি দিক হলো সমাজে সাম্য ও ভ্রাতৃত্ববোধের বিকাশ। কোরবানির গোশত বিতরণ করা হয় আত্মীয়, প্রতিবেশী ও গরিবদের মাঝে। এতে করে ধনী-গরিব ভেদাভেদ লঘু হয়, হৃদয়ে সহানুভূতি ও সহযোগিতার চেতনা জাগ্রত হয়। ঈদের আনন্দ সবাই মিলে ভাগ করে নেওয়ার একটি বাস্তব ও মহৎ রূপ এটি।
-
কিন্তু কোরবানির শিক্ষা কেবল পশু জবাইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং প্রতিটি মুমিনের জীবনে এটি হওয়া উচিত এক চিরস্থায়ী নৈতিক রূপান্তর। অর্থাৎ, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের সময়, শ্রম, সম্পদ এমনকি জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকার মানসিকতা তৈরি হওয়া চাই। ইসলামি আন্দোলনের পথে, দাওয়াতি দায়িত্বে কিংবা অন্যায়ের প্রতিবাদে যখন ত্যাগের প্রয়োজন হয়, তখন কোরবানির চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একজন মুমিন তা হাসিমুখে পালন করে।
-
সত্যিকার অর্থে, কোরবানি মুমিনদের জীবনে এক প্রশিক্ষণ—আল্লাহর প্রেমে নিজেকে বিলীন করে দেওয়ার প্রশিক্ষণ। এ ইবাদত মানুষকে আত্মিকভাবে শুদ্ধ করে, সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং একটি তাকওয়াভিত্তিক সমাজ গঠনের ভিত প্রস্তুত করে।
সুতরাং, কোরবানি যেন আমাদের জীবনে শুধু একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা না হয়ে থাকে, বরং হয়ে উঠুক আমাদের চিন্তা, বিশ্বাস ও কর্মের স্থায়ী অনুপ্রেরণা।
-
আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে কোরবানির প্রকৃত চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে জীবন গঠনের তাওফিক দেন।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এ. এস.এম
মুরসিদ (লিটু সিকদার)। মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর। মোবাইলঃ ০১৭১১ ৯৩৯৪৪৫