মোঃ নূর -ই- আলম (কাজী নূর):
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) থ্যালাসেমিয়া বিষয়ক একটি সচেতনতামূলক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, থ্যালাসেমিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে এ রোগের একটি নীরব মহামারী চলছে। প্রায় দুই কোটি মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। এই সংখ্যার প্রায় অর্ধেক তরুণ এবং বিবাহযোগ্য নর-নারী। এদের অধিকাংশই জানেন না তারা থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না।
.
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর নাজমুল হোসেনের সভাপতিত্বে ফ্রি থ্যালাসেমিয়া স্ক্রীনিং ক্যাম্পেইনে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর এম এ মাজিদ। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন জীববিজ্ঞান অনুষদের ডীন, প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম।
.
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা তৈরীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান। প্রফেসর এম এ মাজিদ বলেন, জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিতে এবং স্বাস্থ্য সেবায় থ্যালাসেমিয়া বাহক নির্ণয়কে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত। ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে থ্যালাসেমিয়া বাহক নির্ণয়কে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার এবং একই ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন ডিন প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান বলেন, এই ধরনের উদ্যোগ থেকে জাতীয় পর্যায়ের কর্মসূচি শুরু করা সম্ভব এবং এর মাধ্যমেই থ্যালাসেমিয়া রোগকে বাংলাদেশ থেকে নির্মূলের দিকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
.
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বায়োটেডের নির্বাহী পরিচালক ড. মুহাম্মদ সওগাতুল ইসলাম। বায়োটেডের উদ্যোগে, জেনেক্স হেলথের প্রযুক্তিগত সহায়তায় এবং যুক্তরাজ্য ভিত্তিক বেইজ কেয়ার ফাউন্ডেশন এর আর্থিক সহযোগিতায় সারাদেশের বিভিন্ন বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝে থ্যালাসেমিয়া বিষয়ক সচেতনতা এবং ফ্রি স্ক্রীনিং ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় বায়োটেক সোসাইটি ক্লাবের সহযোগিতায় সচেতনতামূলক এই সেমিনার আয়োজন করা হয়।
.
সেমিনারে মূল বক্তা বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া রোগের বিস্তার, বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যতে করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরেন। তারা বলেন, বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। এই সংখ্যার প্রায় অর্ধেক তরুণ এবং বিবাহযোগ্য নর-নারী। এদের অধিকাংশই জানেন না তারা থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না। মা ও বাবা দুজনই থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক হলে সন্তান থ্যালাসেমিয়ার রোগী হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই অজ্ঞতার কারণে ভবিষ্যতে তাদের সন্তানের থ্যালাসেমিয়া রোগ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এই মুহূর্তে সচেতন না হলে আগামী এক দশকে বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে যেতে পারে। তৈরি হতে পারে জনস্বাস্থ্যের উপর বড় রকমের হুমকি।
.
থ্যালাসেমিয়া মুক্ত সুস্থ সবল ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পেতে হলে এখনই সচেতন হওয়া ছাড়া আমাদের কোন বিকল্প নেই। থ্যালাসেমিয়া রোগের সহজ কোনো চিকিৎসা নেই। যে সকল চিকিৎসা রয়েছে তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। অপরদিকে, বিয়ের পূর্বে সাধারণ একটি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ার বাহক সনাক্ত করা সম্ভব। সেই জন্য প্রয়োজন ব্যাপক সচেতনতা এবং প্রতিটি বিবাহযোগ্য নারী পুরুষের রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ার বাহক শনাক্তকরণ।
.
ড. সওগাত জাতীয় পর্যায়ে বৃহৎ পরিসরে সনাক্তকরণ কর্মসূচি পরিচালনার মাধ্যমে এই রোগটিকে সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, সরকার উদ্যোগী হলে বাংলাদেশের থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা ব্যাপকহারে কমিয়ে আনা সম্ভব। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি সহ অন্যান্য বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী সেমিনারে এবং ফ্রি স্ক্রিনিং ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণ করেন। বায়োটেডের উদ্যোগে ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তরুণ শিক্ষার্থীদের মাঝে এই কর্মসূচিটি পরিচালনা করা হবে বলে সেমিনারে জানানো হয়।
.
সেমিনারে মূল বক্তা ড. মুহাম্মদ সওগাতুল ইসলাম আরো বলেন, এই ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থ্যালাসেমিয়া রোগের বিরুদ্ধে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করা সম্ভব। ধীরে ধীরে সেই কর্মসূচি সামাজিক পর্যায়েও ছড়িয়ে দিতে হবে। থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধ করতে হলে প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন এবং সামাজিকভাবে এই সমস্যার মোকাবেলা করা। সচেতনতাই হচ্ছে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ করার প্রথম পদক্ষেপ।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এ. এস.এম
মুরসিদ (লিটু সিকদার)। মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর। মোবাইলঃ ০১৭১১ ৯৩৯৪৪৫