আলিফ হোসেনঃ
রাজশাহীর তানোরে পুর্ববিরোধের জের ধরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এক পরিবারকে একঘরে (সমাজচ্যুত) করার অভিযোগ উঠেছে।তানোরের পাঁচন্দর ইউনিয়নের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদপুর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অধ্যুষিত তালটিপাড়া পল্লীতে।
.
এ ঘটনায় ১৪মে বুধবার জুলিতা মুর্মু (৩৭ বাদি হয়ে রঞ্জিতসহ (২৭) তিন জনকে বিবাদী করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও তানোর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
.
জানা গেছে,উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের (ইউপি) জেল নম্বর ৭৬ মৌজা মোহাম্মদপুর,আরএস খতিয়ান নম্বর ১,আরএস দাগ নম্বর ১৫০,শ্রেণী ভিটা,বিরোধপুর্ণ জমির পরিমাণ ০৩ শতক। এসব সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে বিবাদীগণ দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্নভাবে নানা অপতৎপরতা করে আসছে।
.
এদিকে ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে,নিম্ন তফসিল বর্ণিত সম্পত্তি খাস তবে তাদের ভোগ-দখলীয় সম্পত্তি। তাদের ক্রয়কৃত সম্পত্তি সংলগ্ন নিম্ন তফসিল বর্ণিত খাস সম্পত্তি স্বাধীনের পর হইতে বংশ পরম্পরায় তারা শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ-দখল করে আসছেন এবং আংশিক সম্পত্তিতে বাড়িঘর করে পরিবারসহ বসবাস করছেন। তাদের বসবাসরত বাড়ীর সামনের জায়গা বিবাদীগণ দীর্ঘদিন যাবত জবরদখলের চেষ্টা ও ষড়যন্ত্র করিয়া আসছেন।
.
এমতাবস্থায় ২০২৪ সালের ২৪ জুলাই সকালে উক্ত বিবাদীগণ যোগসাজস করে দেশীয় অস্ত্র সজ্জিত হয়ে তাদের বসবাসকৃত সম্পত্তি জবর-দখলের উদ্দেশ্যে নিম্ন তফসিল বর্ণিত সম্পত্তিতে অনাধিকারে প্রবেশ করেন।এসময় ৩ নম্বর বিবাদী শ্রীমন্ত কিস্কুর হুকুমে ১ নম্বর ও ২ নম্বর বিবাদী সন্ত্রাসী কায়দায় তাদের ভোগদখলীয় সম্পত্তির উপরে থাকা বাঁশের বেড়া জোরপূর্বক ভাংচুর করেন। তিনি বিবাদীগণকে নিষেধ করিলে বিবাদীরা উল্টো তার উপর মারমুখি আচরণ করে এবং দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র প্রদর্শন করে ভয়ভীতি দেখাইয়া প্রাণনাশের হুমকি দেন।
.
এসময় বিবাদীরা তাদের বাঁশের বেড়া, টিনের ছাউনী ও বেড়া দিয়ে তৈরী দেয়াল ভাংচুর করে। এতে তাদের প্রায় পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এসময় বিবাদীগণ তাকে ও তার বাড়ীর লোকজনকে উদ্দেশ্যে করে ব্যাপক শাসন-গর্জন ও হুমকি দেয়। এ সময় বিবাদীগণকে বাধা প্রদান করা হলে, আইন-শৃংখলার অবনতিসহ যেকোন ধরণের বিশৃংখলার সম্ভবনা ছিল। তাই কোন ধরণের বিশৃংখলায় না জড়াইয়া সুষ্ঠ সমাধানের জন্য আইনের আশ্রয় গ্রহণ করিলাম।
.
ভুক্তভোগী রবি কিস্কু ও তার স্ত্রী জুলিতা মুরমু জানান, ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ বিচার হয়। বিচারে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে সমাজের লোকজনকে খাওয়াতে বলে। তারা বিচারকের কথামত মোড়লসহ গ্রামপ্রধানদের ১৫ হাজার টাকা দিই খাওয়ানোর জন্য। কিন্তু তারা আমাদের খৈলানে খাওয়া দাওয়া করবে। আমরা অন্য জায়গায় খাওয়ার জন্য অনুরোধ করি। পরে তারা টাকা ফেরত দিয়ে আমাদের একঘরে (সমাজচ্যুত) করার ঘোষণা দেন।
আমাদের ছেলে-মেয়েকে কারো সঙ্গে কথা বলতে দেয় না। তারা মাঠে একদিন খেলছিল, সেটা দেখে মোড়ল তাদের তাড়িয়ে দেয়। আমাদের ধর্মীয় কাজও করতে দেয় না। কারো সঙ্গে কাজ করতে পারি না। চরম মানবেতর জীবনযাপন করছি। মেম্বার ও চেয়ারম্যান সবকিছু জানে বলে তারা জানান।
.
এবিষয়ে ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) গাফফারের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি এসবের তেমন কিছু জানি না, তবে শুনেছি। আপনি জনপ্রতিনিধি সমাজচ্যুত করতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, তার কথা কেউ শুনেনা।এবিষয়ে পাঁচন্দর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি শুনেছি জমি জমা নিয়ে বিরোধ বা মামলার কথা, এর বেশি কিছু বলতে পারবো না।
.
এবিষয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আফজাল হোসেন জানান, একঘরে বা সমাজচ্যুত করে রাখার কোন অধিকার নেই। তিনি বলেন, এবিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে।এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিয়াকত সালমান জানান, এবিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।এবিষয়ে জানতে চাইলে রঞ্জিত সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এ. এস.এম
মুরসিদ, মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।