শামীম আহমেদঃ
বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতি যেমন মানুষের জীবনকে সহজ ও গতিশীল করেছে, তেমনি এর নেতিবাচক প্রভাব সমাজে এক নতুন ধরণের অবক্ষয়ের জন্ম দিয়েছে। ডিজিটাল যুগে মানুষের সংযুক্তি যত বাড়ছে, সামাজিক মূল্যবোধ, সম্পর্কের গভীরতা ও মানবিকতা ততটাই কমে যাচ্ছে—এমনটাই মত সমাজবিজ্ঞানীদের।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠলেও এর অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের সামাজিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। মানুষ এখন বাস্তব সম্পর্কের চেয়ে ভার্চুয়াল সম্পর্কেই বেশি আবদ্ধ। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানোর পরিবর্তে অধিকাংশ মানুষ এখন মোবাইল স্ক্রিনেই নিমগ্ন থাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সামিয়া হক বলেন, “প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করেছে, কিন্তু একইসঙ্গে মানুষের মধ্যে একাকীত্ব, অবসাদ এবং আত্মকেন্দ্রিকতার প্রবণতা বাড়িয়েছে। তরুণ প্রজন্ম বাস্তব সামাজিকতা ও পারিবারিক বন্ধন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।”
অন্যদিকে, প্রযুক্তির অপব্যবহারও এক বড় সামাজিক সংকট তৈরি করেছে। অনলাইন প্রতারণা, সাইবার বুলিং, পর্নোগ্রাফির সহজলভ্যতা, গুজব ছড়ানোসহ নানা ধরণের অপরাধ প্রযুক্তির মাধ্যমেই ছড়িয়ে পড়ছে। শিশু ও কিশোররা প্রযুক্তির ক্ষতিকর কন্টেন্টের সহজ শিকার হচ্ছে।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তানভীর রহমান বলেন, “অতিরিক্ত গ্যাজেট ব্যবহার, বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের মধ্যে, তাদের আচরণগত পরিবর্তন ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহারে পারিবারিক ও সামাজিক নজরদারি জরুরি।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে এর ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা জরুরি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবার এবং সরকারের যৌথ উদ্যোগে প্রযুক্তি ব্যবহার সংক্রান্ত নীতিমালা ও জনসচেতনতা কার্যক্রম আরও জোরদার করা প্রয়োজন।
প্রযুক্তি আমাদের ভবিষ্যতের চাবিকাঠি, তবে তার সঙ্গে যদি নৈতিকতা ও মানবিকতা বজায় না থাকে, তাহলে তা সমাজের জন্য অভিশাপ হয়ে উঠতে পারে। সুতরাং, প্রযুক্তির ব্যবহার হোক সুচিন্তিত, নিয়ন্ত্রিত ও মানবিক গুণাবলির পরিপূরক।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এ. এস.এম
মুরসিদ (লিটু সিকদার)। মোবাইল: 01728 311111
ঢাকা অফিসঃ হোল্ডিং-১৩, লাইন-৬, রোড- ১২, ব্লক-বি, মিরপুর-১১, ঢাকা-১২১৬।
ফরিদপুর অফিসঃ মুজিব সড়ক, ফরিদপুর। মোবাইলঃ ০১৭১১ ৯৩৯৪৪৫