তাসলিমা আক্তার বিথীঃ
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার বাসিন্দা ফাতেমা খাতুন, একজন সংগ্রামী নারী উদ্যোক্তা। সমাজে নারীর উন্নয়ন ও স্বাবলম্বিতার জন্য তিনি কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। নিজ উদ্যোগে পরিবার, সমাজ ও কর্মক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে প্রতিদিন লড়ে যাচ্ছেন দৃঢ়তা ও নিষ্ঠা দিয়ে।
ছোটবেলা থেকেই ফাতেমার স্বপ্ন ছিল নিজে কিছু করার। কিন্তু সেই পথে চলা সহজ ছিল না। অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়ে বুঝে গিয়েছিলেন জীবনের কঠিন বাস্তবতা—নিজেকে গড়ে তুলতে হবে নিজের চেষ্টায়।
পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি যুক্ত ছিলেন গার্লস গাইড, চক্ষু শিবির, রেড ক্রিসেন্ট, জাবারাং কল্যাণ সমিতি সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে। পেয়েছেন ঢাকায় ক্ষুদে সাংবাদিকতার ট্রেনিং, গ্লোবাল ভিলেজ ও নানা প্রশিক্ষণের সুযোগ।
২০১৫ সালে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাকরি পেলেও সংসার ও সন্তানের কারণে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। জীবনের এই সময়টি ছিল মানসিক ও শারীরিকভাবে কঠিন এক অধ্যায়। ডেঙ্গু ও রক্তের জটিলতা পেরিয়েও মানুষের ভালোবাসা ও সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আবার উঠে দাঁড়ান তিনি।
এরপর ২০২০ সালের করোনাকালীন সময় তার জীবনে নতুন মোড় আনে। এক মাসের সিজারিয়ান বাচ্চা নিয়ে তিনি শুরু করেন নিজ হাতে তৈরি ফ্রোজেন রুটি বিক্রির ব্যবসা—অনলাইন ও অফলাইনে। একা হাতে শুরু করা এই যাত্রা ভালো সাড়া পায়, এবং পরে তিনি একজন মহিলা কর্মীও নিয়োগ দেন।
রুটির পর এবার হাতে তৈরি ঘি, মধু, সরিষার তেল, নারিকেল তেল, দই ও মাশরুম পণ্যে ব্যবসার পরিধি বাড়ান ফাতেমা। অদম্য পরিশ্রম, ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাসই তার সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। আজ তার পণ্য ছড়িয়ে পড়েছে খাগড়াছড়ির গণ্ডি পেরিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে।
এখন তিনি স্থানীয় কয়েকজন নারীকে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন, যা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। ফাতেমা খাতুনের বিশ্বাস- “নারী চাইলে পারে। নারী শুধু নিজের নয়, সমাজের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও বড় ভূমিকা রাখতে পারে।”
আজ তিনি একজন সফল ও স্বাবলম্বী নারী উদ্যোক্তা। তার লক্ষ্য, অন্য নারীদের অনুপ্রাণিত করা—যেন তারাও নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, নিজের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসে।
জয়িতা অ্যাওয়ার্ড তাকে আরও অনুপ্রাণিত করবে সমাজের অন্য নারীদের পাশে দাঁড়াতে এবং পরিবর্তনের আলো ছড়িয়ে দিতে এই বিশ্বাস নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন ফাতেমা খাতুন।
প্রিন্ট

মধুখালীতে দোয়া মাহফিল ও গণমাধ্যম কর্মিদের সাথে মতবিনিময় 
তাসলিমা আক্তার বিথী, খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধি 





















