ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন। Hotline- +880 9617 179084

দৌলতপুর চর অঞ্চলে অস্ত্রের মহড়া ও গোলাগুলিতে আতঙ্কিত চরবাসী

মোঃ জিয়াউর রহমানঃ

 

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মার দুর্গম ও বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল দখল নিতে আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে অন্তত ১২ জন সন্ত্রাসী বাহিনী। অস্ত্রের সশস্ত্র মহড়া ও গোলাগুলিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে চর অঞ্চলের নিরীহ মানুষ। পদ্মার চরের খড়ের মাঠ দখল নিয়ে গত কয়েকদিন আগে দুই সন্ত্রাসী বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধে ৩ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় চরবাসীর দিন কাটছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায়। আবার কেউ ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র যেয়ে আশ্রয় নিয়েছে।

 

ভারত সীমান্তঘেঁষা চরাঞ্চলের কারণে পদ্মার চর অপরাধীদের যেন অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পদ্মার চরের বিস্তীর্ণ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কাকন বাহিনী ও মণ্ডল বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আধিপত্য বিস্তার ও খড়ের মাঠ দখল নিতে এই দুই বাহিনীর মধ্যে মাঝে মধ্যেই গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বালুমহল দখল নিয়েও রয়েছে তাদের মধ্যে বিরোধ। এরই জের ধরে গত (২৭শে অক্টোবর) দুপুরে মণ্ডল বাহিনী ও কাকন বাহিনীর মধ্যে মরিচা ইউনিয়নের চৌদ্দহাজার মৌজার পদ্মার দুর্গম চরে ভয়াবহ বন্দুকযুদ্ধ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কয়েক ঘণ্টা ধরে বন্দুকযুদ্ধ চলে উভয় বাহিনীর আমান মণ্ডল (৩৬), নাজমুল মণ্ডল (২৬) ও লিটন আলী ঘোষ (৩০) নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় মুনতাজ মণ্ডল (৩২) ও রাকিব মণ্ডল (১৮) নামে আরও দুই জন।

 

এই দুই সন্ত্রাসী বাহিনী শেষ নয়, সক্রিয় রয়েছে আরও অন্তত ১০টি সন্ত্রাসী বাহিনী। এর মধ্যে রয়েছে টুকু বাহিনী, সাইদ বাহিনী, লালচাঁদ বাহিনী, রাখি বাহিনী, শরিফ কাইগি বাহিনী, রাজ্জাক বাহিনী, চল্লিশ বাহিনী ও বাহান্ন বাহিনী উল্লেখযোগ্য। ২০২৪ সালের (৫ই আগস্ট) হাসিনা সরকারের পতনের পর (৩০শে সেপ্টেম্বর) প্রকাশ্য দিবালোকে ফিলিপনগর ইউপি চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টুকে হত্যার মধ্যদিয়ে বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের আত্মপ্রকাশ করে। এরপর থেকে তারা নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে থাকে।

 

এসব বাহিনীর দুই এক জন সদস্য পুলিশের অভিযানে ধরা পড়লেও তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও সক্রিয় হয় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে। এসব বাহিনীর সদস্যরা রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে ও প্রশ্রয়ে থাকার কারণে উপজেলার মরিচা, ফিলিপনগর ও চিলমারী ইউনিয়নের পদ্মার চরের জমি দখল, ফসল লুট, বাথানের গরু-মহিষ লুট, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, বালু উত্তোলন, মাদক ও অস্ত্র পাচারসহ নানা অপরাধে জড়িত রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব সন্ত্রাসী বাহিনী পদ্মার চরে নিজেরা সশস্ত্র সাম্রাজ্য গড়ে তুলে অপরাধ কার্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে ও নির্ভয়ে। সচরাচার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চালানো সম্ভব না হওয়ায় অপরাধের অভয়ারণ্য হয়ে পড়েছে চরাঞ্চল।

 

শুধুমাত্র দৌলতপুরের পদ্মার চর নয়, এসব বাহিনী রাজশাহী, নাটোর ও পাবনা জেলার দুর্গম চরের রয়েছে তাদের বিস্তার। সম্প্রতি দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা নদীর চরে কাকন বাহিনী ও মণ্ডল বাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ বন্দুকযুদ্ধে দুই বাহিনী ৩ সদস্য নিহত হয়। এরপর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এ ঘটনায় দৌলতপুর থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় আসামি ধরতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশের একাধিক টিম পদ্মার চরে সাঁড়াশি অভিযান চালায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করতে না পারলেও অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দৌলতপুরের পদ্মারচরে বর্তমানে ১২ জন সন্ত্রাসী বাহিনী থাকলেও ২০ বছর আগে এখানে ২টি সন্ত্রাসী বাহিনীর উত্থান ঘটেছিল। একটি ছাপাত-পান্না বাহিনী অপরটি ও লালচাঁদ বাহিনী। একইভাবে দুই বাহিনীর সন্ত্রাসীরা সে সময় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতো। তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ডে এলাকার সাধারণ মানুষ ছিল অসহায়, ভীতসন্ত্রস্ত ও বন্দি। দুই বাহিনীর হাতে সে সময় অন্তত ৪১ জন খুন হয়।

 

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার হয়, পুলিশ ও র‌্যাবের অভিযানে ‘ক্রসফাযারে’ দুই বাহিনীর প্রধান লালচাঁদ, ছাপাত ও পান্নাসহ তাদের সহযোগীরা নিহত হলে পরবর্তীতে কাকন বাহিনী চরাঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নেয়। বাহিনী প্রধান কাকনের বিরুদ্ধে পাবনার ঈশ্বরদী, রাজশাহীর বাঘা, নাটোরের লালপুর ও কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানায় অর্ধডজন মামলা হয়েছে। কাকন পাবনার ঈশ্বরদী কলেজ রোডের বাসিন্দা হলেও তার বাবার বাড়ি দৌলতপুরের মরিচা ইউনিয়নের মাজদিয়াড় গ্রামে।

 

এ ছাড়াও টুকু বাহিনী, সাইদ বাহিনী, লালচাঁদ বাহিনী, রাখি বাহিনী, শরিফ কাইগি বাহিনী, রাজ্জাক বাহিনী, চল্লিশ বাহিনী ও বাহান্ন বাহিনীর প্রধানসহ সহযোগী সন্ত্রাসীদের বাড়ি ফিলিপনগর ও মরিচা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়। গত বছরের (৩০শে সেপ্টেম্বর) দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টুকে নিজ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করে আলোচনায় আসে টুকু বাহিনী।

 

বাহিনীর প্রধান তরিকুল ইসলাম ওরফে টুকু’র বাড়ি ফিলিপনগর গ্রামে। বর্তমানে টুকু বাহিনীর সদস্য প্রায় ২০ জনের মতো। চেয়ারম্যান হত্যায় বাহিনী প্রধান টুকুসহ বেশ কয়েকজন সহযোগী গ্রেপ্তার হলেও জামিনে মুক্ত হয়ে একই অপরাধে জড়িত রয়েছে তারা। এ ছাড়াও চলতি বছরের (১০ই ফেব্রুয়ারি) রাতে মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর মণ্ডলপাড়া এলাকায় রাজু আহমেদ (১৮) নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করে সাইদ বাহিনী।

 

বাহিনীর প্রধান আবু সাঈদ মণ্ডল (৩৫) মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর দক্ষিণ ভাঙ্গাপাড়া এলাকার ভাদু মণ্ডলের ছেলে। তার বিরদ্ধে দৌলতপুর থানায় ৯ টিরও বেশি মামলা রয়েছে। ২০০৯ সালে র‌্যাবের অভিযানে চরাঞ্চলের ত্রাস ফিলিপনগর গ্রামের সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান লালচাঁদ নিহত হওয়ার পর তার ভাই সুখচাঁদ এ বাহিনীর দায়িত্ব নেন। লালচাঁদের ছেলে রুবেলসহ ফিলিপনগর এলাকার একাধিক যুবক এ বাহিনীর সক্রিয় সদস্য।

 

এ বাহিনীর বিরুদ্ধে হত্যা, ছিনতাই, মাদক ও অস্ত্র পাচার এবং ডাকাতির অভিযোগ ও মামলা রয়েছে। এ বাহিনীর পাশাপাশি বর্তমানে বেশ আলোচনায় রয়েছে রাখি বাহিনী। এ বাহিনীর প্রধান রাকিবুল ইসলাম রাখি। তার বিরুদ্ধেও অন্তত ৭টি মামলা রয়েছে। রাখি’র বাড়ি ফিলিপনগর ইউনিয়নের দারোগার মোড়ে। এ ছাড়াও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সক্রিয় রয়েছে শরিফ কাইগি বাহিনী, রাজ্জাক বাহিনী, চল্লিশ বাহিনী ও বাহান্ন বাহিনী।

 

গোয়েন্দা সূত্রমতে, ২০২৪ এর (৫ই আগস্টের) পর দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে এসব বাহিনীর মাধ্যমে দেশে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র প্রবেশের তথ্য রয়েছে। পদ্মার চরের খড়ের মাঠ দখল নিয়ে দুই বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধের পর গত বৃহস্পতিবার ১২০ সদস্যের পুলিশের অভিযানিক দল সন্ত্রাসীদের ধরতে চরে অভিযান চালায়। কেউ গ্রেপ্তার না হলেও পুলিশের এমন অভিযানে চরবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরেছে।

 

এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ বলেন, সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে চরে অভিযান চলমান রয়েছে। সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থল চরগুলোতে আর হতে দেয়া হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

শার্শায় সমাবেশে মফিকুল হাসান তৃপ্তিঃ -ক্ষমতায় এলে শিক্ষিত যুবকদের চাকরি ও বেকারভাতা দেবে বিএনপি

error: Content is protected !!

দৌলতপুর চর অঞ্চলে অস্ত্রের মহড়া ও গোলাগুলিতে আতঙ্কিত চরবাসী

আপডেট টাইম : ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫
মোঃ জিয়াউর রহমান, দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি :

মোঃ জিয়াউর রহমানঃ

 

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মার দুর্গম ও বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল দখল নিতে আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে অন্তত ১২ জন সন্ত্রাসী বাহিনী। অস্ত্রের সশস্ত্র মহড়া ও গোলাগুলিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে চর অঞ্চলের নিরীহ মানুষ। পদ্মার চরের খড়ের মাঠ দখল নিয়ে গত কয়েকদিন আগে দুই সন্ত্রাসী বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধে ৩ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় চরবাসীর দিন কাটছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায়। আবার কেউ ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র যেয়ে আশ্রয় নিয়েছে।

 

ভারত সীমান্তঘেঁষা চরাঞ্চলের কারণে পদ্মার চর অপরাধীদের যেন অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পদ্মার চরের বিস্তীর্ণ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কাকন বাহিনী ও মণ্ডল বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আধিপত্য বিস্তার ও খড়ের মাঠ দখল নিতে এই দুই বাহিনীর মধ্যে মাঝে মধ্যেই গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বালুমহল দখল নিয়েও রয়েছে তাদের মধ্যে বিরোধ। এরই জের ধরে গত (২৭শে অক্টোবর) দুপুরে মণ্ডল বাহিনী ও কাকন বাহিনীর মধ্যে মরিচা ইউনিয়নের চৌদ্দহাজার মৌজার পদ্মার দুর্গম চরে ভয়াবহ বন্দুকযুদ্ধ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কয়েক ঘণ্টা ধরে বন্দুকযুদ্ধ চলে উভয় বাহিনীর আমান মণ্ডল (৩৬), নাজমুল মণ্ডল (২৬) ও লিটন আলী ঘোষ (৩০) নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় মুনতাজ মণ্ডল (৩২) ও রাকিব মণ্ডল (১৮) নামে আরও দুই জন।

 

এই দুই সন্ত্রাসী বাহিনী শেষ নয়, সক্রিয় রয়েছে আরও অন্তত ১০টি সন্ত্রাসী বাহিনী। এর মধ্যে রয়েছে টুকু বাহিনী, সাইদ বাহিনী, লালচাঁদ বাহিনী, রাখি বাহিনী, শরিফ কাইগি বাহিনী, রাজ্জাক বাহিনী, চল্লিশ বাহিনী ও বাহান্ন বাহিনী উল্লেখযোগ্য। ২০২৪ সালের (৫ই আগস্ট) হাসিনা সরকারের পতনের পর (৩০শে সেপ্টেম্বর) প্রকাশ্য দিবালোকে ফিলিপনগর ইউপি চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টুকে হত্যার মধ্যদিয়ে বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের আত্মপ্রকাশ করে। এরপর থেকে তারা নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে থাকে।

 

এসব বাহিনীর দুই এক জন সদস্য পুলিশের অভিযানে ধরা পড়লেও তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও সক্রিয় হয় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে। এসব বাহিনীর সদস্যরা রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে ও প্রশ্রয়ে থাকার কারণে উপজেলার মরিচা, ফিলিপনগর ও চিলমারী ইউনিয়নের পদ্মার চরের জমি দখল, ফসল লুট, বাথানের গরু-মহিষ লুট, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, বালু উত্তোলন, মাদক ও অস্ত্র পাচারসহ নানা অপরাধে জড়িত রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব সন্ত্রাসী বাহিনী পদ্মার চরে নিজেরা সশস্ত্র সাম্রাজ্য গড়ে তুলে অপরাধ কার্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে ও নির্ভয়ে। সচরাচার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চালানো সম্ভব না হওয়ায় অপরাধের অভয়ারণ্য হয়ে পড়েছে চরাঞ্চল।

 

শুধুমাত্র দৌলতপুরের পদ্মার চর নয়, এসব বাহিনী রাজশাহী, নাটোর ও পাবনা জেলার দুর্গম চরের রয়েছে তাদের বিস্তার। সম্প্রতি দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা নদীর চরে কাকন বাহিনী ও মণ্ডল বাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ বন্দুকযুদ্ধে দুই বাহিনী ৩ সদস্য নিহত হয়। এরপর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এ ঘটনায় দৌলতপুর থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় আসামি ধরতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশের একাধিক টিম পদ্মার চরে সাঁড়াশি অভিযান চালায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করতে না পারলেও অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দৌলতপুরের পদ্মারচরে বর্তমানে ১২ জন সন্ত্রাসী বাহিনী থাকলেও ২০ বছর আগে এখানে ২টি সন্ত্রাসী বাহিনীর উত্থান ঘটেছিল। একটি ছাপাত-পান্না বাহিনী অপরটি ও লালচাঁদ বাহিনী। একইভাবে দুই বাহিনীর সন্ত্রাসীরা সে সময় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতো। তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ডে এলাকার সাধারণ মানুষ ছিল অসহায়, ভীতসন্ত্রস্ত ও বন্দি। দুই বাহিনীর হাতে সে সময় অন্তত ৪১ জন খুন হয়।

 

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার হয়, পুলিশ ও র‌্যাবের অভিযানে ‘ক্রসফাযারে’ দুই বাহিনীর প্রধান লালচাঁদ, ছাপাত ও পান্নাসহ তাদের সহযোগীরা নিহত হলে পরবর্তীতে কাকন বাহিনী চরাঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নেয়। বাহিনী প্রধান কাকনের বিরুদ্ধে পাবনার ঈশ্বরদী, রাজশাহীর বাঘা, নাটোরের লালপুর ও কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানায় অর্ধডজন মামলা হয়েছে। কাকন পাবনার ঈশ্বরদী কলেজ রোডের বাসিন্দা হলেও তার বাবার বাড়ি দৌলতপুরের মরিচা ইউনিয়নের মাজদিয়াড় গ্রামে।

 

এ ছাড়াও টুকু বাহিনী, সাইদ বাহিনী, লালচাঁদ বাহিনী, রাখি বাহিনী, শরিফ কাইগি বাহিনী, রাজ্জাক বাহিনী, চল্লিশ বাহিনী ও বাহান্ন বাহিনীর প্রধানসহ সহযোগী সন্ত্রাসীদের বাড়ি ফিলিপনগর ও মরিচা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়। গত বছরের (৩০শে সেপ্টেম্বর) দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টুকে নিজ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করে আলোচনায় আসে টুকু বাহিনী।

 

বাহিনীর প্রধান তরিকুল ইসলাম ওরফে টুকু’র বাড়ি ফিলিপনগর গ্রামে। বর্তমানে টুকু বাহিনীর সদস্য প্রায় ২০ জনের মতো। চেয়ারম্যান হত্যায় বাহিনী প্রধান টুকুসহ বেশ কয়েকজন সহযোগী গ্রেপ্তার হলেও জামিনে মুক্ত হয়ে একই অপরাধে জড়িত রয়েছে তারা। এ ছাড়াও চলতি বছরের (১০ই ফেব্রুয়ারি) রাতে মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর মণ্ডলপাড়া এলাকায় রাজু আহমেদ (১৮) নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করে সাইদ বাহিনী।

 

বাহিনীর প্রধান আবু সাঈদ মণ্ডল (৩৫) মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর দক্ষিণ ভাঙ্গাপাড়া এলাকার ভাদু মণ্ডলের ছেলে। তার বিরদ্ধে দৌলতপুর থানায় ৯ টিরও বেশি মামলা রয়েছে। ২০০৯ সালে র‌্যাবের অভিযানে চরাঞ্চলের ত্রাস ফিলিপনগর গ্রামের সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান লালচাঁদ নিহত হওয়ার পর তার ভাই সুখচাঁদ এ বাহিনীর দায়িত্ব নেন। লালচাঁদের ছেলে রুবেলসহ ফিলিপনগর এলাকার একাধিক যুবক এ বাহিনীর সক্রিয় সদস্য।

 

এ বাহিনীর বিরুদ্ধে হত্যা, ছিনতাই, মাদক ও অস্ত্র পাচার এবং ডাকাতির অভিযোগ ও মামলা রয়েছে। এ বাহিনীর পাশাপাশি বর্তমানে বেশ আলোচনায় রয়েছে রাখি বাহিনী। এ বাহিনীর প্রধান রাকিবুল ইসলাম রাখি। তার বিরুদ্ধেও অন্তত ৭টি মামলা রয়েছে। রাখি’র বাড়ি ফিলিপনগর ইউনিয়নের দারোগার মোড়ে। এ ছাড়াও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সক্রিয় রয়েছে শরিফ কাইগি বাহিনী, রাজ্জাক বাহিনী, চল্লিশ বাহিনী ও বাহান্ন বাহিনী।

 

গোয়েন্দা সূত্রমতে, ২০২৪ এর (৫ই আগস্টের) পর দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে এসব বাহিনীর মাধ্যমে দেশে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র প্রবেশের তথ্য রয়েছে। পদ্মার চরের খড়ের মাঠ দখল নিয়ে দুই বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধের পর গত বৃহস্পতিবার ১২০ সদস্যের পুলিশের অভিযানিক দল সন্ত্রাসীদের ধরতে চরে অভিযান চালায়। কেউ গ্রেপ্তার না হলেও পুলিশের এমন অভিযানে চরবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরেছে।

 

এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ বলেন, সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে চরে অভিযান চলমান রয়েছে। সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থল চরগুলোতে আর হতে দেয়া হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।


প্রিন্ট