ঢাকা , রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন। Hotline- +880 9617 179084

কাউখালী উত্তর নিলতী সমতট বিদ্যালয়ে শিক্ষক জাহানারা আক্তার ও কমিটির বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ

হাসান মামুনঃ

পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার উত্তর নিলতী সমতট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনিক জটিলতা বিরাজ করছে। বিষয়টি বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) কর্তৃক তদন্তাধীন রয়েছে। জানা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে মাউশির ঢাকা ও বরিশাল আঞ্চলিক অফিস থেকে পৃথকভাবে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

পিরোজপুর জেলা শিক্ষা অফিসার মো. ইদ্রিস আলী আযিযী বলেন, বরিশাল অঞ্চল ও ঢাকা অধিদপ্তর থেকে পৃথক নির্দেশনা এসেছে। প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হচ্ছে, যা শিগগিরই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। ২০২৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বরিশাল আঞ্চলিক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে (স্বারক নং-৫৯২) বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান হাওলাদারকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাহানারা আক্তারকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

 

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বরখাস্তের সিদ্ধান্ত কোন কমিটির মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে; উক্ত কমিটি বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত কি না; বরখাস্ত বিধিসম্মত কি না এবং বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন কি না-এসব বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে হবে।

 

প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান হাওলাদার জানান, ২০২৪ সালের ১৯ মে তৎকালীন অ্যাডহক কমিটির সভাপতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে বেসরকারি চাকরি বিধি অনুসরণ না করেই সাময়িক বরখাস্ত করেন। অথচ হাইকোর্টের রিট পিটিশন নং ৩৬৫৭/২০১৫ অনুযায়ী ৬০ দিনের বেশি কোনো শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত রাখা যাবে না। ২০২৪ সালের প্রজ্ঞাপণেও বলা আছে, ১৮০ দিনের বেশি বরখাস্ত অবৈধ। তবুও আমাকে পুনর্বহাল করা হয়নি এবং বেতন-ভাতা বন্ধ রাখা হয়েছে।

 

তিনি আরও অভিযোগ করেন, গত ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে ইউএনও কাউখালী লিখিত আদেশে জাহানারা আক্তারকে প্রধান শিক্ষকের যাবতীয় দায়িত্বভার হস্তান্তরের নির্দেশ দিলেও তিনি তা অমান্য করে জোরপূর্বক দায়িত্ব পালন অব্যাহত রেখেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানায়, জাহানারা আক্তারের নেতৃত্বে নিজের পদ স্থায়ী করার লক্ষ্যে তিনি আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কয়েকজন ব্যক্তিকে নিয়ে একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করেন।

 

এ নিয়ে অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ২০২৪ সালের ২২ মে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করে অভিভাবকরা উক্ত কমিটি বাতিলের দাবিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করেন। পরে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে এক অবিভাবক উক্ত কমিটি বাতিলের আবেদন করেন। বরিশাল শিক্ষা বোর্ড ৩ জুলাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেন, যেখানে কমিটিকে বিধিবহির্ভূত প্রমানিত করা হয়।

 

এর পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড ২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর উক্ত অ্যাডহক কমিটি বাতিল করে। প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান আরও অভিযোগ করেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাহানারা আক্তার ও সভাপতি বিদ্যালয়ের দুটি ব্যাংক হিসাব থেকে প্রায় দুই লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। যেহেতু কমিটি অবৈধভাবে গঠিত, তাই তাদের আর্থিক কার্যক্রমও অবৈধ। অভিযোগের বিষয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাহানারা আক্তার বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি নিয়ম মেনে দায়িত্ব পালন করছি এবং বিষয়টি বরিশাল বিভাগীয় কতৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।

 

স্থানীয় শিক্ষাবিদরা বলেন- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক অস্থিরতা দীর্ঘায়িত হলে তা পাঠদান ও শিক্ষার মানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে যথাযথ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক অস্থিতিশীলতায় দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে আছে। তারা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে স্বাভাবিক শিক্ষা পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম কে মনোনয়ন দিলে বিপুল ভোটে বিএনপি’র বিজয় হবে

error: Content is protected !!

কাউখালী উত্তর নিলতী সমতট বিদ্যালয়ে শিক্ষক জাহানারা আক্তার ও কমিটির বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ

আপডেট টাইম : ০৮:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
হাসান মামুন, পিরোজপুর জেলা প্রতিনিধি :

হাসান মামুনঃ

পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার উত্তর নিলতী সমতট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনিক জটিলতা বিরাজ করছে। বিষয়টি বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) কর্তৃক তদন্তাধীন রয়েছে। জানা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে মাউশির ঢাকা ও বরিশাল আঞ্চলিক অফিস থেকে পৃথকভাবে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

পিরোজপুর জেলা শিক্ষা অফিসার মো. ইদ্রিস আলী আযিযী বলেন, বরিশাল অঞ্চল ও ঢাকা অধিদপ্তর থেকে পৃথক নির্দেশনা এসেছে। প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হচ্ছে, যা শিগগিরই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। ২০২৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বরিশাল আঞ্চলিক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে (স্বারক নং-৫৯২) বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান হাওলাদারকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাহানারা আক্তারকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

 

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বরখাস্তের সিদ্ধান্ত কোন কমিটির মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে; উক্ত কমিটি বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত কি না; বরখাস্ত বিধিসম্মত কি না এবং বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন কি না-এসব বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে হবে।

 

প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান হাওলাদার জানান, ২০২৪ সালের ১৯ মে তৎকালীন অ্যাডহক কমিটির সভাপতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে বেসরকারি চাকরি বিধি অনুসরণ না করেই সাময়িক বরখাস্ত করেন। অথচ হাইকোর্টের রিট পিটিশন নং ৩৬৫৭/২০১৫ অনুযায়ী ৬০ দিনের বেশি কোনো শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত রাখা যাবে না। ২০২৪ সালের প্রজ্ঞাপণেও বলা আছে, ১৮০ দিনের বেশি বরখাস্ত অবৈধ। তবুও আমাকে পুনর্বহাল করা হয়নি এবং বেতন-ভাতা বন্ধ রাখা হয়েছে।

 

তিনি আরও অভিযোগ করেন, গত ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে ইউএনও কাউখালী লিখিত আদেশে জাহানারা আক্তারকে প্রধান শিক্ষকের যাবতীয় দায়িত্বভার হস্তান্তরের নির্দেশ দিলেও তিনি তা অমান্য করে জোরপূর্বক দায়িত্ব পালন অব্যাহত রেখেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানায়, জাহানারা আক্তারের নেতৃত্বে নিজের পদ স্থায়ী করার লক্ষ্যে তিনি আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কয়েকজন ব্যক্তিকে নিয়ে একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করেন।

 

এ নিয়ে অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ২০২৪ সালের ২২ মে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করে অভিভাবকরা উক্ত কমিটি বাতিলের দাবিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করেন। পরে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে এক অবিভাবক উক্ত কমিটি বাতিলের আবেদন করেন। বরিশাল শিক্ষা বোর্ড ৩ জুলাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেন, যেখানে কমিটিকে বিধিবহির্ভূত প্রমানিত করা হয়।

 

এর পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড ২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর উক্ত অ্যাডহক কমিটি বাতিল করে। প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান আরও অভিযোগ করেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাহানারা আক্তার ও সভাপতি বিদ্যালয়ের দুটি ব্যাংক হিসাব থেকে প্রায় দুই লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। যেহেতু কমিটি অবৈধভাবে গঠিত, তাই তাদের আর্থিক কার্যক্রমও অবৈধ। অভিযোগের বিষয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাহানারা আক্তার বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি নিয়ম মেনে দায়িত্ব পালন করছি এবং বিষয়টি বরিশাল বিভাগীয় কতৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।

 

স্থানীয় শিক্ষাবিদরা বলেন- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক অস্থিরতা দীর্ঘায়িত হলে তা পাঠদান ও শিক্ষার মানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে যথাযথ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক অস্থিতিশীলতায় দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে আছে। তারা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে স্বাভাবিক শিক্ষা পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।


প্রিন্ট