ঢাকা , রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo মধুখালীতে দোয়া মাহফিল ও গণমাধ্যম কর্মিদের সাথে মতবিনিময় Logo বাঘায় মুক্তিযোদ্ধার সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী চাঁদের মতবিনিময় Logo শিবগঞ্জে চোখ উপড়ে পাহারাদারকে হত্যা Logo মধুখালীতে সাংবাদিক সাগর চক্রবর্তীর মোটরসাইকেল চুরি Logo বালিয়াকান্দিতে মোবাইলকোট পরিচালনায় দুই ট্রলি চালককে জরিমানা  Logo বগুড়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য পালশা ডে নাইট শর্ট পিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত Logo তানোর বিএনপির রাজনীতিতে জাহাঙ্গীরকে দায়িত্বশীল পদে দেখতে চায় তৃণমুল Logo কালুখালীতে জাতীয় সমবায় দিবস পালিত Logo তানোরে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু Logo হিলিতে বিদুৎ স্পৃষ্টে নিহত-১আহত হয়েছে ৬ জন
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন। Hotline- +880 9617 179084

ফরিদপুরে ৫৪ বছরেও অবহেলিত আলফাডাঙ্গার পাঁচটি গ্রাম

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামে গত ৫৪ বছরেও তৈরি করা হয়নি পাকা সড়ক। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় এসব গ্রামের প্রায় ২০ হাজার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রায় তেমন মানোন্নয়ন হয়নি। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে কাদা এবং শুকনায় ধুলোবালির কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন এ অঞ্চলের মানুষ।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার টিটা-পানাইল, শিকারপুর, টিটা, ইকড়াইল ও কুমুরতিয়া গ্রামে ১০টি জামে মসজিদ, একটি কারিগরি কলেজ, দুইটি উচ্চ বিদ্যালয়, চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি দাখিল মাদরাসা, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি সাব পোস্ট অফিস, দুইটি বড় বাজার এবং ১০টির বেশি মাছ ও গবাদিপশু খামার রয়েছে।

 

এসব গ্রামের কৃষকরা উৎপাদিত কৃষিপণ্য, গাভীর দুধ এবং বাঁওড়ের বিপুল পরিমাণ মাছের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী কাশিয়ানী উপজেলা সদরের বাজারের প্রায় ৭০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করেন। এছাড়া আলফাডাঙ্গার সদর ও গোপালপুর বাজারসহ বিভিন্নস্থানেও এখানকার কৃষি পণ্যের কদর রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশার কারণে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সময়মতো ও অক্ষত অবস্থায় বাজারে নিতে পারছেন না, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় কৃষক ও অর্থনীতি।

 

স্থানীয় কৃষক নাছির মিয়া বলেন, ভালো সড়ক না থাকায় সবজি ও দুধ মাথায় কিংবা বাইসাইকেলে করে কাদা-ধুলো পেরিয়ে কাশিয়ানী বাজারে নিয়ে যেতে হয়। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি, সরকার যেন এই গ্রামে পাকা সড়ক নির্মাণ করে মানসিক স্বস্তি এনে দেয়।

 

ইকড়াইল গ্রামের বাসিন্দা মো. ইমদাদুল হক বলেন, ইটের ভাঙা রাস্তা দিয়ে আমাদের সন্তানদের চলাচল করতে হচ্ছে। এলাকার মানুষ রাস্তার কারণে চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে। এখানকার মানুষ অন্য এলাকা থেকে ফিরে এসে আফসোস করে-আমাদের এলাকায় কেনো একটিও পাকা রাস্তা নেই।

 

ওই এলাকার টিটা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বিদ্যাপীঠের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিউটি সুলতানা বলেন, ভাঙা ইটের রাস্তার কারণে ভ্যান, অটোরিকশাও ঠিকমতো চলতে পারে না। তাই বাড়ি থেকে হেঁটে হেঁটে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হয়।

টিটা গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান সিকদার বলেন, একসময় এই পাঁচ গ্রাম ছিল মধুমতি নদী বেষ্টিত। এলাকাবাসীর উদ্যোগে ও নিজস্ব অর্থায়নে ২০২০ সালের মার্চ মাসে প্রায় ৩০০ মিটার দীর্ঘ একটি ভাসমান (ড্রাম) সেতু নির্মাণ করা হয়, যা এখনও চলছে। সরকারের কাছে আমাদের জোর দাবি, এই অবহেলিত এলাকায় দ্রুত পাকা সড়ক নির্মাণ করা হোক। তাহলে এ অঞ্চলের অর্থনীতি ও সমাজ নির্মাণে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।

 

টগরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য(মেম্বার) আবু সাইদ মিয়া বলেন, অনেকবার রাস্তা পাকাকরণের দাবি জানিয়েছি স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। শুধু আশ্বাস মিলেছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আলফাডাঙ্গা উপজেলা প্রকৌশলী (স্থানীয় সরকার বিভাগ) রাহাত ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত আছি। প্রধান সমস্যা হলো, এই গ্রামে প্রবেশ করতে গেলে ঝুঁকিপূর্ণ ভাসমান সেতু পার হতে হয়, নয়তো বিকল্প একটি দুর্বল কাঁচা রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। রাস্তা পাকাকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ভারি রোলার সরঞ্জাম বর্তমানে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

 

তিনি আরও বলেন, এলাকাটি সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়েছে এবং ওই এলাকার রাস্তাগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূল হলে এবং বর্ষা মৌসুম শেষ হলে আগামীতে টেন্ডারের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়কের কার্পেটিং কাজ শুরু করা হবে। মধুমতি বাঁওড়ে স্থায়ী সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হলেও তা বিভিন্ন কারণে বাতিল হয়েছে। আমরা গুরুত্ব বিবেচনা করে শিগগির পুনরায় প্রস্তাব পাঠাবো।

 

এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবাল বলেন, সড়ক বানাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে এলজিইডি থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, আপাতত সড়ক করার মতো পরিবেশ অনুকূল নয়। বর্ষা শেষ হলে পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পৌঁছানোর ব্যবস্থা হলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়নে জনগণের আস্থার প্রতীক ধানের শীষের সৈনিক এনামুল হক উকিল

error: Content is protected !!

ফরিদপুরে ৫৪ বছরেও অবহেলিত আলফাডাঙ্গার পাঁচটি গ্রাম

আপডেট টাইম : ০৫:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, ফরিদপুর :

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামে গত ৫৪ বছরেও তৈরি করা হয়নি পাকা সড়ক। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় এসব গ্রামের প্রায় ২০ হাজার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রায় তেমন মানোন্নয়ন হয়নি। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে কাদা এবং শুকনায় ধুলোবালির কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন এ অঞ্চলের মানুষ।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার টিটা-পানাইল, শিকারপুর, টিটা, ইকড়াইল ও কুমুরতিয়া গ্রামে ১০টি জামে মসজিদ, একটি কারিগরি কলেজ, দুইটি উচ্চ বিদ্যালয়, চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি দাখিল মাদরাসা, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি সাব পোস্ট অফিস, দুইটি বড় বাজার এবং ১০টির বেশি মাছ ও গবাদিপশু খামার রয়েছে।

 

এসব গ্রামের কৃষকরা উৎপাদিত কৃষিপণ্য, গাভীর দুধ এবং বাঁওড়ের বিপুল পরিমাণ মাছের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী কাশিয়ানী উপজেলা সদরের বাজারের প্রায় ৭০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করেন। এছাড়া আলফাডাঙ্গার সদর ও গোপালপুর বাজারসহ বিভিন্নস্থানেও এখানকার কৃষি পণ্যের কদর রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশার কারণে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সময়মতো ও অক্ষত অবস্থায় বাজারে নিতে পারছেন না, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় কৃষক ও অর্থনীতি।

 

স্থানীয় কৃষক নাছির মিয়া বলেন, ভালো সড়ক না থাকায় সবজি ও দুধ মাথায় কিংবা বাইসাইকেলে করে কাদা-ধুলো পেরিয়ে কাশিয়ানী বাজারে নিয়ে যেতে হয়। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি, সরকার যেন এই গ্রামে পাকা সড়ক নির্মাণ করে মানসিক স্বস্তি এনে দেয়।

 

ইকড়াইল গ্রামের বাসিন্দা মো. ইমদাদুল হক বলেন, ইটের ভাঙা রাস্তা দিয়ে আমাদের সন্তানদের চলাচল করতে হচ্ছে। এলাকার মানুষ রাস্তার কারণে চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে। এখানকার মানুষ অন্য এলাকা থেকে ফিরে এসে আফসোস করে-আমাদের এলাকায় কেনো একটিও পাকা রাস্তা নেই।

 

ওই এলাকার টিটা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বিদ্যাপীঠের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিউটি সুলতানা বলেন, ভাঙা ইটের রাস্তার কারণে ভ্যান, অটোরিকশাও ঠিকমতো চলতে পারে না। তাই বাড়ি থেকে হেঁটে হেঁটে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হয়।

টিটা গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান সিকদার বলেন, একসময় এই পাঁচ গ্রাম ছিল মধুমতি নদী বেষ্টিত। এলাকাবাসীর উদ্যোগে ও নিজস্ব অর্থায়নে ২০২০ সালের মার্চ মাসে প্রায় ৩০০ মিটার দীর্ঘ একটি ভাসমান (ড্রাম) সেতু নির্মাণ করা হয়, যা এখনও চলছে। সরকারের কাছে আমাদের জোর দাবি, এই অবহেলিত এলাকায় দ্রুত পাকা সড়ক নির্মাণ করা হোক। তাহলে এ অঞ্চলের অর্থনীতি ও সমাজ নির্মাণে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।

 

টগরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য(মেম্বার) আবু সাইদ মিয়া বলেন, অনেকবার রাস্তা পাকাকরণের দাবি জানিয়েছি স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। শুধু আশ্বাস মিলেছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আলফাডাঙ্গা উপজেলা প্রকৌশলী (স্থানীয় সরকার বিভাগ) রাহাত ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত আছি। প্রধান সমস্যা হলো, এই গ্রামে প্রবেশ করতে গেলে ঝুঁকিপূর্ণ ভাসমান সেতু পার হতে হয়, নয়তো বিকল্প একটি দুর্বল কাঁচা রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। রাস্তা পাকাকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ভারি রোলার সরঞ্জাম বর্তমানে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

 

তিনি আরও বলেন, এলাকাটি সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়েছে এবং ওই এলাকার রাস্তাগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূল হলে এবং বর্ষা মৌসুম শেষ হলে আগামীতে টেন্ডারের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়কের কার্পেটিং কাজ শুরু করা হবে। মধুমতি বাঁওড়ে স্থায়ী সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হলেও তা বিভিন্ন কারণে বাতিল হয়েছে। আমরা গুরুত্ব বিবেচনা করে শিগগির পুনরায় প্রস্তাব পাঠাবো।

 

এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবাল বলেন, সড়ক বানাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে এলজিইডি থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, আপাতত সড়ক করার মতো পরিবেশ অনুকূল নয়। বর্ষা শেষ হলে পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পৌঁছানোর ব্যবস্থা হলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।


প্রিন্ট