ইসমাইল হােসেন বাবুঃ
কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে মরমী সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেউড়িয়াস্থ তাঁর আখড়াবাড়িতে তিন দিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসব ও লালন মেলা শেষ হচ্ছে।
নানা আনুষ্ঠানিকতায় সাধুসঙ্গের পর বাউল-সাধকরা ফিরবেন যার যার গন্তব্যে। যাতে ছড়িয়ে পড়বে লালন সাঁইজির মানবতার বার্তা। লালন আখড়াবাড়িতে আগতরা বলছেন, দিন দিন মানুষের মাঝে লালনের দর্শনে ঘিরে আগ্রহ বাড়ছে, তাই এবারের লালন আয়োজনে ভিড় ছিলো অন্য বারের চেয়ে অনেক বেশি।
আধ্যাত্মিক সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩৫তম তিরোধান দিবস ঘিরে এবারই প্রথম রাষ্ট্রীয়ভাবে আয়োজিত হয় সাধুসঙ্গের আয়োজন।
গত (শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর) বিকেলে রাখাল সেবা ও রাতে অধিবাস দিয়ে শুরু হয় মূল আয়োজন। এরপর গতকাল (শনিবার, ১৮ অক্টোবর) সকালে বাল্যসেবা ও দুপুরে পূর্ণসেবার মধ্যদিয়ে শেষ হয় সাধুসঙ্গ। সাধু গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে আখড়াবাড়ি ছাড়বেন সাধু-বাউলরা। তবে বিদায় বেলায় আবারও মিলিত হওয়ার আশা লালন ভক্তদের।
গতকাল থেকেই গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে আখড়াবাড়ি ছেড়ে যেতে শুরু করেন সাধু-বাউলরা। তবে বিদায়ের মাঝেও থেকে গেছে আবার মিলিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি।

যদিও সাধুসঙ্গ শেষ হয়েছে, লালন মেলায় রাতে চলবে আলোচনা সভা ও গান। এজন্য অনেক সাধু-বাউল এখনো রয়ে গেছেন আখড়াবাড়িতেই, সাঁইজির সান্নিধ্যে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লালনদর্শনে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে, তাই এবারের আয়োজনে ছিলো আগের চেয়ে বেশি ভিড়।
দর্শনার্থীরা বলছেন, দিন দিন ছড়িয়ে পড়ছে লালনের অহিংস ও মানবতাবাদী দর্শন। তরুণ প্রজন্মের মাঝেও তার গান ও ভাবধারার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।
ফকির লালন শাহের মানবতাবাদী দর্শন আর আধ্যাত্মিক বাণীর সন্ধানে শুধু দেশ নয়, বিদেশ থেকেও লালন অনুসারীরা যোগ দেন এই সাধুসঙ্গে। উৎসবের তিন দিনই লালনভক্তদের পদচারণায় মুখর ছিল আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণ। ছোট ছোট আস্তানা গেড়ে চলেছে ভজন-সাধন ও আধ্যাত্মিক আলোচনা।
উৎসবের প্রধান আকর্ষণ ছিল আলোচনা সভা ও রাতভর বাউল গানের আসর। প্রতিদিন সন্ধ্যায় লালন মঞ্চে বিশিষ্ট গবেষক ও গুণীজনরা লালন শাহের জীবন, দর্শন ও মানবতাবাদী আদর্শ নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে শুরু হয় লালন গানের আসর, যা চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। বিভিন্ন স্থান থেকে আগত বাউল শিল্পীরা সাঁইজির অমর গান গেয়ে ভক্তদের মুগ্ধ করেন।
সাধুরা জানান, লালন সাঁইজি যে তত্ত্ব দর্শন রেখে গেছেন তার শিষ্যদের মাঝে তা এখনো প্রতীয়মান। মানুষ যেখানে তার সত্যকে খুঁজে পাবে সেখানে ভিড় জমবেই। তাদের প্রেম, সাম্য, ভাতৃত্ববোধ রাষ্ট্রের সকল ক্ষত্রেই প্রচার করতে চান তারা।
দর্শনার্থীরা বলছেন, দিন দিন লালনের অহিংস, মানবতাবাদী দর্শন ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বময়। আগ্রহ বাড়ছে লালনের গান, বাণী ও সাধু-গুরুদের জীবনাচরণ নিয়ে।
দর্শনার্থীরা জানান, তারা এ আয়োজনে এসে আনন্দিত। পাশে মেলার আয়োজন করা হয়েছে, সেখানে অনেক মানুষের ভিড় থাকলেও তারা উপভোগ করছেন আয়োজন।
লালন মেলা উপলক্ষে আখড়াবাড়ী সেজে ওঠে বর্ণিল সাজে। আলোকসজ্জা, বিশাল তোরণ নির্মাণ এবং কালী নদীর ভরাটকৃত জায়গায় স্থাপিত লালন মঞ্চের সামনে ছামিয়ানা টাঙিয়ে তৈরি করা হয় উৎসবের আবহ। মাজার প্রাঙ্গণের বাইরে মূল রাস্তাজুড়ে বসে গ্রামীণ মেলা, যেখানে গ্রামীণ নানা সামগ্রী, লোকজ খেলনা ও হস্তশিল্পের পসরা নিয়ে ভিড় করেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা।
এ বছরই প্রথম লালন শাহের তিরোধান দিবস উপলক্ষে উৎসবটি জাতীয় পর্যায়ে উদযাপন করা হয়। শুধু কুষ্টিয়া নয়, সারা দেশের ৬৪টি জেলায় একযোগে এই লালন উৎসব ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বিশাল আয়োজনকে নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।

১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক (ইংরেজি ১৬ অক্টোবর ১৮৯০) ফকির লালন শাহ দেহত্যাগ করেন। সেই থেকে প্রতি বছর এই দিনটিকে ঘিরে তাঁর ভক্ত, অনুসারীরা ছেউড়িয়ায় আয়োজন করেন সাধুসঙ্গ ও লালন স্মরণোৎসব। লালনের ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ এই অহিংস ও মানবতাবাদী দর্শনকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়েই এবার সাধু-গুরুরা নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে গেলেন।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন জানান, এ আয়োজন শুধু আধ্যাত্মিক নয়, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরও প্রতীক। নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় জেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছে।
প্রিন্ট

বালিয়াকান্দিতে মোবাইলকোট পরিচালনায় দুই ট্রলি চালককে জরিমানা 
ইসমাইল হােসেন বাবু, সিনিয়র ষ্টাফ রিপাের্টার 





















