ইসমাইল হােসেন বাবুঃ
আজ থেকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ায় ৩দিন ব্যাপী শুরু হচ্ছে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩৫তম তিরোধান স্মরণে তিন দিনের স্মরণোৎসব। এবছরই প্রথম এ আয়োজন হবে রাষ্ট্রীয়ভাবে। এ নিয়ে খুশি সাধু-ভক্ত ও লালন অনুসারীরা। স্মরণোৎসব উপলক্ষ্যে ইতিমধ্যে জাকজমকপূর্ণ আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাজার হাজার সাধু-ভক্তরা ছুটে এসেছেন লালন আখড়াবাড়ির মাজার প্রাঙ্গণে।
আজ (১৭ অক্টোবর) শুক্রবার সাধুদের রীতিতে অনুষ্ঠান শুরু হলেও গ্রামীণ মেলা চলবে টানা তিনদিন ধরে। সেই সাথে আলোচনাসভা ও বসবে গভীর রাত অবধি লালনের গানের আসর। মেলা শেষ হবে ১৯ অক্টোবর রোববার। এবারে লালন মুক্ত মঞ্চে আলোচনাসভার পাশাপাশি প্রখ্যাত লালন সংগীত শিল্পী প্রয়াত ফরিদা পারভীনের স্মরণে আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হবে।
এবছর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমি ১৭ থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী লালন উৎসবের আয়োজন করেছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে লালন উৎসব আয়োজন করায় খুশি লালনের ভক্ত ও অনুসারীরা।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আগামীকাল শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় এই উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
জানা যায়, ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক উপমহাদেশের আধ্যাত্মিক সাধক পুরুষ বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের মৃত্যুর পর প্রথমে তার অনুসারীরা লালন স্মরণে উৎসব পালন করতেন। পরে লালন একাডেমি ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন যৌথভাবে প্রতিবছর এ উৎসব পালন করে আসছে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন বলেন, প্রতিদিনই রাতে আখড়াবাড়ীর মূলমঞ্চে আলোচনা সভার পাশাপাশি অ্যাকাডেমির শিল্পী ও দেশবরেণ্য লালন শিল্পীরা লালন ফকিরের আধ্যাত্মিক গান পরিবেশন করবেন।
নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আখড়াবাড়ী চত্বরে কালী নদীর তীরে মাঠে বসেছে বিশাল লালন মেলা। আর এই উৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে সিসি টিভি, ওয়াচ টাওয়ারসহ কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
মরমি সাধক লালনের জীবনকর্ম, জাতহীন মানব দর্শন, অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনার আদর্শিক বিষয় নিয়েই চলে আসছে প্রতিবছর এ উৎসব। ধর্ম-বর্ণ জাত-পাত ও সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে উঠে লালনের দর্শন নিয়ে অসম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান সাধু বাউলদের। আগামী ১৯ অক্টোবর লালন উৎসব শেষ হবে।
আয়োজকরা বলছেন, দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভক্তরা মনে করেন, দুই হাজার বছর পূর্বে দার্শনিক সক্রেটিসের বিখ্যাত উক্তি ‘নো দাই সেলফ’ এর মতো মর্মকথা যেভাবে মানুষের মনে দাগ কেটেছিল এবং বিশ্ব সভ্যতার ক্রমবিকাশকে প্রভাবিত করেছিল। এতকাল পরে এসে আধ্যাত্মিক চিন্তার দার্শনিক মহামতি লালনের সংগীত ও ধর্ম-দর্শন নিয়ে দেশ-বিদেশে মুক্ত চিন্তক গবেষকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
যদিও এর আগে কার্যত বাউল সাধক ফকির লালন শাহের জীবদ্দশা থেকে চলে আসা দোল উৎসব এবং তিরোধান দিবস স্মরণকে ঘিরে লালন শাহের ভক্ত অনুসারীরা একেবারেই নিজস্ব ঘরানার রীতিতে আচার অনুষ্ঠানের মধ্যেই সাঁইজিকে স্মরণ করতে এদিনটির জন্য অপেক্ষা করেন।
আখড়াবাড়িতে সাধু আনু ফকির বলেন, এবার সাঁইজির অনুষ্ঠান রাষ্ট্রীয়ভাবে বেশ বড় আকারে হচ্ছে। এতে আমরা খুশি। লালনের দর্শন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। মানুষের আনন্দের যায়গা এখন কমে এসেছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবার আগের তুলনায় বেশি লোকসমাগম হবে এবং হচ্ছে।
মামুন সাধু বলেন, সরকারের এমন উদ্যোগ অনেক আগেই নেওয়া উচিত ছিল। অনেক দেরীতে হলেও এত বড় আয়োজনের মধ্য দিয়ে লালনের বাণী দেশবাসীর কাছে তুলে ধরা এবং লালনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ায় আমরা আনন্দিত।
দর্শনার্থী জেরিন জানান, প্রতিবছরই আমি এখানে আসি। এবার রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের উদ্যোগ নেওয়ায় দর্শনার্থীরা আগেই আসা শুরু করেছে। প্রতিবছরের তুলনায় আরো বেশি মানুষের সমাগম হবে বলে মনে হচ্ছে।
এক সপ্তাহ আগে থেকেই হাজারো ভক্ত-অনুসারীরা দূর দূরান্ত থেকে আসতে শুরু করেছেন। লালন মেলা উপলক্ষ্যে আখড়াবাড়িতে হাজারো ভক্ত-অনুসারীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
একদিকে, বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সাধু-গুরুরা তাদের শিষ্যের সঙ্গে ভাব বিনিময়ে মত্ত থাকছেন। অন্যদিকে, ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে একতারা আর ঢোল বাজিয়ে সাঁইজীর মরমী সংগিত পরিবেশন করছেন। দিনরাত গান ছাড়াও তারা লালন ফকিরের বাণী নিয়ে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করছেন। অনেকে আবার লালনের মত ও পথের দীক্ষা নিচ্ছেন। আর এ মেলা দেখতে আসছেন হাজারো মানুষ। এক কথায় উৎসব শুরুর আগেই নদীর পাড়ঘেঁষে গুরুশিষ্য, ভক্ত-অনুসারী আর দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়েছে প্রাঙ্গণ।
লালন ভক্ত ও অনুসারীরা জানান, প্রতিবারই লালন মেলায় লাখ লাখ মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়। এবার মেলা শুরুর এক সপ্তাহ আগে থেকেই দূরদূরান্ত থেকে হাজারো ভক্তরা এসেছেন।
লালন শাহের ১৩৫তম স্মরণোৎসব উদযাপনে তিন দিনের আয়োজনকে ঘিরে লালন একাডেমী, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান, কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমীর সভাপতি আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন।
প্রিন্ট

মধুখালীতে দোয়া মাহফিল ও গণমাধ্যম কর্মিদের সাথে মতবিনিময় 
ইসমাইল হােসেন বাবু, সিনিয়র ষ্টাফ রিপাের্টার 





















