ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন। Hotline- +880 9617 179084

নরসিংদীতে ছাত্র জনতার হত্যাকারী ওসি তানভীর কোথায়!

মোঃ আলম মৃধাঃ

 

২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর নরসিংদী সদর মডেল থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে যোগদান করেন তানভীর আহমেদ। এর আগে তিনি বেলাবো থানার ওসি ছিলেন। কিন্তু সদরে যোগদানের পর থেকেই যেন ক্ষমতা আর টাকার এক অন্ধকার সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রশাসনিক ছত্রচ্ছায়ায় তিনি হয়ে ওঠেন এক অঘোষিত গডফাদার।

 

স্থানীয় সূত্র ও একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত জানায়, ওসি তানভীর নরসিংদী সদরে অবস্থানকালে বালু ব্যবসা, মদের পাট্টা, জুট ব্যবসা, মাদক ও অস্ত্র বাণিজ্য, এমনকি জমি দখল থেকে শুরু করে দেহ ব্যবসা ও চোরাচালান পর্যন্ত বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের কাছ থেকেও নিয়মিত আদায় করতেন মোটা অঙ্কের মাসোহারা। তার নেতৃত্বে কিছু অসাধু এসআই ও কনস্টেবল নরসিংদী সদরে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।

 

কিন্তু ২০২৪ সালের মাঝামাঝি আওয়ামী লীগবিরোধী আন্দোলন শুরু হলে পরিস্থিতি বদলে যায়। চারদিক থেকে অর্থপ্রবাহ বন্ধ হয়ে পড়লে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ওসি তানভীর। আন্দোলন দমন করতে গিয়ে তিনি পরিণত হন এক নির্মম ঘাতকে। ১৮ জুলাই নরসিংদীর জেলখানা মোড়ে ছাত্র-জনতার ওপর যখন পুলিশ গুলি চালায়, তখন সামনে থেকেই নেতৃত্ব দেন তানভীর। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষায়, অনেক কনস্টেবল গুলি করতে অস্বীকৃতি জানালে তানভীর তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। সেই সময় তাকে বলতে শোনা যায়- “তোদের আর্মস দিছে কেন? গুলি কর”!

 

সেদিনের পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তরুণ ছাত্র তাহমিদ ও ইমন । আহত হন আরও অনেক নিরীহ মানুষ। পরবর্তী কয়েক দিনে জেলার বিভিন্ন স্থানে পুলিশের গুলিতে প্রায় ২২ জন নিহত হন। নরসিংদী উত্তাল হয়ে ওঠে। মানুষের ক্ষোভ, কান্না আর রক্তে ভেসে যায় শহর।

 

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়—এই নৃশংস ঘটনার পর তার বিরুদ্ধে মামলা হলেও এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে ওসি তানভীর। ২০২৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তাকে টুরিস্ট পুলিশে “বদলি” করা হয়। এরপর থেকেই তিনি কার্যত আত্মগোপনে চলে যান। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

 

বিশ্বাসযোগ্য সূত্র জানায়, এখনো নরসিংদী পুলিশের একাধিক সদস্যের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তানভীর। জেলার নানা ঘটনার খোঁজখবর নিচ্ছেন তিনি। অথচ তার বিরুদ্ধে এখনো নিরব পুলিশ।

 

নরসিংদীর সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—কে সেই অদৃশ্য হাত, যে আজও রক্ষা করছে খুনি ওসি তানভীরকে? মানুষের রক্তে রঞ্জিত নরসিংদী আজ জানতে চায়, তাহমিদসহ ২২ নিরপরাধ প্রাণের হত্যার বিচার কবে হবে? এই রক্তের দাগ কি মুছে ফেলা যাবে বিচার ছাড়া? জনগণের দাবিতে এখন জোরালো স্লোগান- “খুনি ওসি তানভীরের ফাঁসি চাই!”


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

শার্শায় সমাবেশে মফিকুল হাসান তৃপ্তিঃ -ক্ষমতায় এলে শিক্ষিত যুবকদের চাকরি ও বেকারভাতা দেবে বিএনপি

error: Content is protected !!

নরসিংদীতে ছাত্র জনতার হত্যাকারী ওসি তানভীর কোথায়!

আপডেট টাইম : ১২:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
মোঃ আলম মৃধা, নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি :

মোঃ আলম মৃধাঃ

 

২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর নরসিংদী সদর মডেল থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে যোগদান করেন তানভীর আহমেদ। এর আগে তিনি বেলাবো থানার ওসি ছিলেন। কিন্তু সদরে যোগদানের পর থেকেই যেন ক্ষমতা আর টাকার এক অন্ধকার সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রশাসনিক ছত্রচ্ছায়ায় তিনি হয়ে ওঠেন এক অঘোষিত গডফাদার।

 

স্থানীয় সূত্র ও একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত জানায়, ওসি তানভীর নরসিংদী সদরে অবস্থানকালে বালু ব্যবসা, মদের পাট্টা, জুট ব্যবসা, মাদক ও অস্ত্র বাণিজ্য, এমনকি জমি দখল থেকে শুরু করে দেহ ব্যবসা ও চোরাচালান পর্যন্ত বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের কাছ থেকেও নিয়মিত আদায় করতেন মোটা অঙ্কের মাসোহারা। তার নেতৃত্বে কিছু অসাধু এসআই ও কনস্টেবল নরসিংদী সদরে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।

 

কিন্তু ২০২৪ সালের মাঝামাঝি আওয়ামী লীগবিরোধী আন্দোলন শুরু হলে পরিস্থিতি বদলে যায়। চারদিক থেকে অর্থপ্রবাহ বন্ধ হয়ে পড়লে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ওসি তানভীর। আন্দোলন দমন করতে গিয়ে তিনি পরিণত হন এক নির্মম ঘাতকে। ১৮ জুলাই নরসিংদীর জেলখানা মোড়ে ছাত্র-জনতার ওপর যখন পুলিশ গুলি চালায়, তখন সামনে থেকেই নেতৃত্ব দেন তানভীর। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষায়, অনেক কনস্টেবল গুলি করতে অস্বীকৃতি জানালে তানভীর তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। সেই সময় তাকে বলতে শোনা যায়- “তোদের আর্মস দিছে কেন? গুলি কর”!

 

সেদিনের পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তরুণ ছাত্র তাহমিদ ও ইমন । আহত হন আরও অনেক নিরীহ মানুষ। পরবর্তী কয়েক দিনে জেলার বিভিন্ন স্থানে পুলিশের গুলিতে প্রায় ২২ জন নিহত হন। নরসিংদী উত্তাল হয়ে ওঠে। মানুষের ক্ষোভ, কান্না আর রক্তে ভেসে যায় শহর।

 

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়—এই নৃশংস ঘটনার পর তার বিরুদ্ধে মামলা হলেও এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে ওসি তানভীর। ২০২৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তাকে টুরিস্ট পুলিশে “বদলি” করা হয়। এরপর থেকেই তিনি কার্যত আত্মগোপনে চলে যান। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

 

বিশ্বাসযোগ্য সূত্র জানায়, এখনো নরসিংদী পুলিশের একাধিক সদস্যের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তানভীর। জেলার নানা ঘটনার খোঁজখবর নিচ্ছেন তিনি। অথচ তার বিরুদ্ধে এখনো নিরব পুলিশ।

 

নরসিংদীর সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—কে সেই অদৃশ্য হাত, যে আজও রক্ষা করছে খুনি ওসি তানভীরকে? মানুষের রক্তে রঞ্জিত নরসিংদী আজ জানতে চায়, তাহমিদসহ ২২ নিরপরাধ প্রাণের হত্যার বিচার কবে হবে? এই রক্তের দাগ কি মুছে ফেলা যাবে বিচার ছাড়া? জনগণের দাবিতে এখন জোরালো স্লোগান- “খুনি ওসি তানভীরের ফাঁসি চাই!”


প্রিন্ট