ঢাকা , সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo মধুখালীতে দোয়া মাহফিল ও গণমাধ্যম কর্মিদের সাথে মতবিনিময় Logo বাঘায় মুক্তিযোদ্ধার সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী চাঁদের মতবিনিময় Logo শিবগঞ্জে চোখ উপড়ে পাহারাদারকে হত্যা Logo মধুখালীতে সাংবাদিক সাগর চক্রবর্তীর মোটরসাইকেল চুরি Logo বালিয়াকান্দিতে মোবাইলকোট পরিচালনায় দুই ট্রলি চালককে জরিমানা  Logo বগুড়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য পালশা ডে নাইট শর্ট পিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত Logo তানোর বিএনপির রাজনীতিতে জাহাঙ্গীরকে দায়িত্বশীল পদে দেখতে চায় তৃণমুল Logo কালুখালীতে জাতীয় সমবায় দিবস পালিত Logo তানোরে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু Logo হিলিতে বিদুৎ স্পৃষ্টে নিহত-১আহত হয়েছে ৬ জন
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন। Hotline- +880 9617 179084

পানির ন্যায্য অধিকারের দাবিতে গোদাগাড়ীতে উত্তাল জনতার মানববন্ধন

সেলিম সানোয়ার পলাশঃ

 

‘শহরের জন্য পানি যাবে, কিন্তু গোদাগাড়ীর মানুষ আর্সেনিক খাবে এই বৈষম্য চলবে না।’ এই ঘোষণা নিয়ে পানির ন্যায্য অধিকারের দাবিতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা সদরে মঙ্গলবার উত্তাল হয়ে ওঠে জনতা। উপজেলা প্রশাসনিক ভবনের সামনে তীব্র জলসংকট ও বঞ্চনার প্রতিবাদে এক মানববন্ধনের আয়োজন করে ‘গোদাগাড়ী স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদ’।

 

মানববন্ধনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক ও সাবেক গোগ্রাম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হযরত আলী। তিনি বলেন, ‘গোদাগাড়ী থেকে ওয়াসার ট্রান্সপ্লান্ট ট্রিটমেন্ট পাইপলাইনে শহরের জন্য পানি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, অথচ এখানকার মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে। পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামছে। এটা ভয়াবহ অবস্থা।’

 

হযরত আলী আরও বলেন, শহরের মানুষ যেমন মানুষ, আমরা গ্রামের মানুষরাও মানুষ। মানুষে মানুষে বৈষম্য চলবে না। গোদাগাড়ীর হিস্যা পূরণের পরই শহরের পানি সরবরাহ করা হোক। আমাদের বাদ দিয়ে এক ফোঁটা পানিও নিতে দেওয়া হবে না।

মানববন্ধনে বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষের পাশাপাশি আদিবাসী সম্প্রদায়ের নারীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তাদের হাতে ছিল নানা দাবিদাওয়া লেখা প্ল্যাকার্ড আমাদের পানি আমাদের অধিকার গোদাগাড়ীবাসীর অঙ্গীকারপানির ন্যায্য অধিকার সম্পদ ব্যবহারে স্থানীয় সিদ্ধান্তের অধিকার চাই।

 

আদিবাসী নারী মুক্তা রাণী বলেন, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। ঠিকমতো পানি পাই না। যা পাই তাতে আর্সেনিক থাকে। অনেক টিউবওয়েলে জলই ওঠে না। অথচ তারা শহরে পানি নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগে আমাদের পানি নিশ্চিত করা হোক, তারপর শহরের কথা ভাবুক।

 

গোদাগাড়ী স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক মোস্তারুজ্জামান লাভলু বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে আর্সেনিক সমস্যা ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামায় চরম সংকট চলছে। সুলতানগঞ্জ থেকে লক্ষ লক্ষ লিটার পানি নিয়ে যাওয়া হবে, আর আমরা বঞ্চিত থাকব—এটা মেনে নেওয়া যায় না।

 

তিনি আরও দাবি জানান, স্থানীয়দের ঘরবাড়ি ভেঙে পাইপলাইন বসানোর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং গোদাগাড়ীর জন্য পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সংযোগের ব্যবস্থাও করতে হবে।

 

এর আগে, গত সোমবার পদ্মা নদী থেকে উত্তোলিত বিশুদ্ধ পানির ন্যায্য অংশ গোদাগাড়ী উপজেলার জনগণের জন্য বরাদ্দের দাবিতে পরিষদের পক্ষ থেকে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। মঙ্গলবার মানববন্ধন শেষে ইউএনওর কাছেও দাবিপত্রের অনুলিপি হস্তান্তর করা হয়।

 

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা বরেন্দ্র অঞ্চলে অবস্থিত। এখানকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিবছর নিচে নামছে। অধিকাংশ এলাকার টিউবওয়েলে আর্সেনিকের মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর মধ্যেই রাজশাহী ওয়াসা পদ্মা নদী থেকে পানি তুলে ট্রান্সপ্লান্ট ট্রিটমেন্ট প্রক্রিয়ায় শহরে সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্পে তাদের জন্য কোনো বরাদ্দ বা বিকল্প পানির ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

 

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষ কৃষিনির্ভর জীবনযাপন করেন। কৃষিকাজ, গৃহস্থালি ও পানযোগ্য পানির অভাবে তাদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের একটাই দাবি আমাদের পানি আগে, শহরের পানি পরে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

কুষ্টিয়ায় পাশাপাশি খোঁড়া হয় তিনটি কবর, দাফনসম্পন্ন

error: Content is protected !!

পানির ন্যায্য অধিকারের দাবিতে গোদাগাড়ীতে উত্তাল জনতার মানববন্ধন

আপডেট টাইম : ০৭:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
সেলিম সানোয়ার পলাশ, গোদাগাড়ী (রাজশাহী) প্রতিনিধি :

সেলিম সানোয়ার পলাশঃ

 

‘শহরের জন্য পানি যাবে, কিন্তু গোদাগাড়ীর মানুষ আর্সেনিক খাবে এই বৈষম্য চলবে না।’ এই ঘোষণা নিয়ে পানির ন্যায্য অধিকারের দাবিতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা সদরে মঙ্গলবার উত্তাল হয়ে ওঠে জনতা। উপজেলা প্রশাসনিক ভবনের সামনে তীব্র জলসংকট ও বঞ্চনার প্রতিবাদে এক মানববন্ধনের আয়োজন করে ‘গোদাগাড়ী স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদ’।

 

মানববন্ধনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক ও সাবেক গোগ্রাম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হযরত আলী। তিনি বলেন, ‘গোদাগাড়ী থেকে ওয়াসার ট্রান্সপ্লান্ট ট্রিটমেন্ট পাইপলাইনে শহরের জন্য পানি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, অথচ এখানকার মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে। পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামছে। এটা ভয়াবহ অবস্থা।’

 

হযরত আলী আরও বলেন, শহরের মানুষ যেমন মানুষ, আমরা গ্রামের মানুষরাও মানুষ। মানুষে মানুষে বৈষম্য চলবে না। গোদাগাড়ীর হিস্যা পূরণের পরই শহরের পানি সরবরাহ করা হোক। আমাদের বাদ দিয়ে এক ফোঁটা পানিও নিতে দেওয়া হবে না।

মানববন্ধনে বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষের পাশাপাশি আদিবাসী সম্প্রদায়ের নারীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তাদের হাতে ছিল নানা দাবিদাওয়া লেখা প্ল্যাকার্ড আমাদের পানি আমাদের অধিকার গোদাগাড়ীবাসীর অঙ্গীকারপানির ন্যায্য অধিকার সম্পদ ব্যবহারে স্থানীয় সিদ্ধান্তের অধিকার চাই।

 

আদিবাসী নারী মুক্তা রাণী বলেন, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। ঠিকমতো পানি পাই না। যা পাই তাতে আর্সেনিক থাকে। অনেক টিউবওয়েলে জলই ওঠে না। অথচ তারা শহরে পানি নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগে আমাদের পানি নিশ্চিত করা হোক, তারপর শহরের কথা ভাবুক।

 

গোদাগাড়ী স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক মোস্তারুজ্জামান লাভলু বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে আর্সেনিক সমস্যা ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামায় চরম সংকট চলছে। সুলতানগঞ্জ থেকে লক্ষ লক্ষ লিটার পানি নিয়ে যাওয়া হবে, আর আমরা বঞ্চিত থাকব—এটা মেনে নেওয়া যায় না।

 

তিনি আরও দাবি জানান, স্থানীয়দের ঘরবাড়ি ভেঙে পাইপলাইন বসানোর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং গোদাগাড়ীর জন্য পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সংযোগের ব্যবস্থাও করতে হবে।

 

এর আগে, গত সোমবার পদ্মা নদী থেকে উত্তোলিত বিশুদ্ধ পানির ন্যায্য অংশ গোদাগাড়ী উপজেলার জনগণের জন্য বরাদ্দের দাবিতে পরিষদের পক্ষ থেকে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। মঙ্গলবার মানববন্ধন শেষে ইউএনওর কাছেও দাবিপত্রের অনুলিপি হস্তান্তর করা হয়।

 

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা বরেন্দ্র অঞ্চলে অবস্থিত। এখানকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিবছর নিচে নামছে। অধিকাংশ এলাকার টিউবওয়েলে আর্সেনিকের মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর মধ্যেই রাজশাহী ওয়াসা পদ্মা নদী থেকে পানি তুলে ট্রান্সপ্লান্ট ট্রিটমেন্ট প্রক্রিয়ায় শহরে সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্পে তাদের জন্য কোনো বরাদ্দ বা বিকল্প পানির ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

 

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষ কৃষিনির্ভর জীবনযাপন করেন। কৃষিকাজ, গৃহস্থালি ও পানযোগ্য পানির অভাবে তাদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের একটাই দাবি আমাদের পানি আগে, শহরের পানি পরে।


প্রিন্ট