মানিক কুমার দাসঃ
দেশের আর্থিক খাতকে সম্পূর্ণভাবে ডিজিটালাইজ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত “ক্যাশলেস বাংলাদেশ উদ্যোগ কার্যক্রম সম্প্রসারণ ক্যাম্পেইন” উপলক্ষে ১২ অক্টোবর রোববার ফরিদপুর জেলায় দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য রোডশো, সেমিনার এবং স্টল প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এ প্রোগ্রামের লিড ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি’র তত্ত্বাবধানে জেলার অন্যান্য ব্যাংকের শাখা প্রধান, বাংলা কিউআর মার্চেন্ট ব্যবসায়ী এবং স্কুল কলেজের ছাত্র-শিক্ষক সহ সর্বস্তরের নাগরিকগণ স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন।
সকাল ১০.৩০ টায় বর্ণাঢ্য র্যালী সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের মূল ফটক থেকে শুরু হয়ে শিশু একাডেমিতে গিয়ে শেষ হয়। এরপর সকাল ১১টায় শিশু একাডেমিতে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট ডিভিশনের প্রধান রাফিজা আক্তার কান্তার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি প্রধান কার্যালয়ের এডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন মজুমদার। অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ দিলরুবা জেবা, ফরিদপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ তন্ময় ইসলাম প্রমুখ।
সেমিনারের শুরুতে গভর্নর মহোদয়ের ধারণকৃত বক্তব্য প্রচার করা হয়, যেখানে তিনি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল লেনদেনের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন। টাকা ছাপানো, টাকা পরিবহন ইত্যাদিতে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ বাঁচানো সম্ভব বলে তিনি উল্লেখ করেন। পাশাপাশি তিনি রাহাজানি, ছিনতাই, দুর্নীতি থেকে মুক্ত হয়ে নতুন অর্থনীতি প্রবর্তন করার নিজস্ব সুযোগকে কাজে লাগাতে প্রত্যেককে যত্নশীল হওয়ার আহবান জানান। অনুষ্ঠানে “ক্যাশলেস বাংলাদেশ” উদ্যোগ সম্পর্কিত একটি উপস্থাপনা পরিচালনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টের অতিরিক্ত পরিচালক মো: পারওয়েজ আনজাম মুনির।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) মহোদয় তাঁর বক্তব্যে “বাংলা কিউআর” এর কার্যক্রম বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন এবং এর মাধ্যমে ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার প্রসার ঘটানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। বিশেষ অতিথি ইসলামী ব্যাংকের এডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন মজুমদার তাঁর বক্তব্যে সকলকে “বাংলা কিউআর” লেনদেনে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান, যাতে করে দেশ একটি নগদবিহীন, নিরাপদ ও আধুনিক আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে।
বিশেষ অতিথি ডাঃ দিলরুবা জেবা তাঁর বক্তব্যে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ফর্ম ফিলাপ ইত্যাদিতে ঝুঁকি পরিহার করে মোবাইলে পেমেন্ট দেয়ার সহজ মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশের ডিজিটাল ব্যাংকিং এর অগ্রগতির প্রশংসা করেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ তন্ময় ইসলাম বলেন এই ব্যবস্থার ফলে দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেন সম্ভব হবে এবং নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি থেকে সবাই মুক্ত থাকতে পারবেন। তিনি দুর্নীতিমুক্ত এবং আর্থিকভাবে স্বচ্ছল বাংলাদেশ গড়তে ডিজিটাল ব্যাংকিং এর এই ধরনের সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম কয়েক মাস অন্তর অন্তর করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভাপতি তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আশা প্রকাশ করছে যে, “বাংলা কিউআর” এর সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কাঠামো আরও স্বচ্ছ, গতিশীল ও প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠবে। সেমিনারে কয়েকজন মার্চেন্ট তাদের বাংলা কিউআর ব্যবহারের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
সেমিনার শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী ও কর্মকর্তাবৃন্দ, অন্যান্য ব্যাংকের কর্মকর্তাবৃন্দ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, মার্চেন্ট এবং আগত অতিথিগণ ফরিদপুর জেলার লিড ব্যাংক সহ বাংলা কিউ আর অধিভুক্ত ১৭ টি ব্যাংকের জাকজমকপূর্ণ ২০টি স্টল পরিদর্শন করেন এবং ভূয়সী প্রশংসা করেন। স্টলগুলো সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, সরকারি ইয়াছিন কলেজ, সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজ, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতাল কলেজ এবং ফরিদপুর শহর এলাকার বিভিন্ন বাজারে প্রদর্শিত হয়।
স্টলগুলোতে বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাপের মাধ্যমে বাংলা কিউআর পেমেন্টের উপায় এবং সুবিধা সমূহ প্রদর্শিত হয়। সেখানে বাংলা কিউআর সমর্থিত পিআরএ অ্যাকাউন্টের সুবিধা বর্ণনা ধরা হয়। দর্শনার্থীরা সেলফিন, নগদ, বিকাশ সহ বিভিন্ন বাংলা কিউআর সাপোর্টেড অ্যাপের মাধ্যমে আগ্রহের সঙ্গে পেমেন্ট সম্পন্ন করেন। স্টলে সবার সামনে কয়েকজন ভ্রাম্যমাণ কফি, চা, ফুসকা ও মুড়ি বিক্রেতার বাংলা কিউআর খুলে দেওয়া হয়, যা উপস্থিত সবাইকে অনুপ্রাণিত করে।
প্রিন্ট

বালিয়াকান্দিতে মোবাইলকোট পরিচালনায় দুই ট্রলি চালককে জরিমানা 
মানিক কুমার দাস, ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি 





















