ঢাকা , সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo মধুখালীতে দোয়া মাহফিল ও গণমাধ্যম কর্মিদের সাথে মতবিনিময় Logo বাঘায় মুক্তিযোদ্ধার সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী চাঁদের মতবিনিময় Logo শিবগঞ্জে চোখ উপড়ে পাহারাদারকে হত্যা Logo মধুখালীতে সাংবাদিক সাগর চক্রবর্তীর মোটরসাইকেল চুরি Logo বালিয়াকান্দিতে মোবাইলকোট পরিচালনায় দুই ট্রলি চালককে জরিমানা  Logo বগুড়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য পালশা ডে নাইট শর্ট পিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত Logo তানোর বিএনপির রাজনীতিতে জাহাঙ্গীরকে দায়িত্বশীল পদে দেখতে চায় তৃণমুল Logo কালুখালীতে জাতীয় সমবায় দিবস পালিত Logo তানোরে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু Logo হিলিতে বিদুৎ স্পৃষ্টে নিহত-১আহত হয়েছে ৬ জন
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন। Hotline- +880 9617 179084

পদ্মায় মাছ-বালু লুট ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ৯

ইসমাইল হোসেন বাবুঃ

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে মাছ ধরা, বালু উত্তোলন ও জেলেদের কাছ চাঁদা উত্তোলন নিয়ে স্থানীয় দুই পক্ষের দফায় দফায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৯ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এসময় বেশকিছু বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।

 

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ভোরের দিকে উপজেলার কয়া ইউনিয়নের বেড় কালোয়া জেলেপাড়ার থেকে কালোয়া বাজার পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় অন্তত দেড় ঘণ্টাব্যাপী এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

 

আহতরা হলেন বের কালোয়া গ্রামের আনারুলের ছেলে আকরাম হোসেন (৩১), দুলাল শেখের ছেলে রাজিব শেখ (৩২), আলম মন্ডলের ছেলে আলামিন মন্ডল (৩৩), বজলু শেখের ছেলে রুহুল আমীন (৫২), কুদ্দুস শেখের ছেলে আশিকুর রহমান (৩২) ও কেরায় শেখের ছেলে তাজিম শেখ (৫০)। বর্তমানে তারা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

 

আহত অন্যরা হলেন একই গ্রামের জেহের শেখের ছেলে কুদ্দুস শেখ (৬৫), মৃত মোশারফের ছেলে দুলাল হোসেন (৪২) ও মহির শেখের ছেলে খুতে শেখ (৩৫)।

 

স্থানীয়রা জানান, ইলিশের প্রজনন মৌসুমে পদ্মায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে। তবুও নদীতে অবৈধভাবে মাছ ধরা, বালু উত্তোলন ও জেলেদের কাছ চাঁদা উত্তোলন নিয়ে কয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও ইউপি সদস্য রাশিদুল ইসলাম, তার ভাগনে সালমান এফ রহমান বকুল গ্রুপের সঙ্গে ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ও সাবেক ইউপি সদস্য বকুল বিশ্বাস এবং জেলেপাড়ার সরদার ইয়ারুল ইসলাম গ্রুপের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।

 

এসময় বাড়িঘর ও স্থানীয় বিএনপির অফিস ভাঙচুর করা হয়। খালেদা জিয়ার ছবি সম্বলিত ব্যানারও ছিঁড়ে ফেলা হয়। তবে এ নিয়ে উভয়পক্ষের নেতাকর্মীরা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছেন।

 

বিএনপি নেতা বকুল বিশ্বাস ও জেলে নেতা ইয়ারুল গ্রুপের অভিযোগ, কয়া ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রাশিদুল ইসলাম ও তার ভাগনে বকুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল খালেকের ছেলে রিপন, শিপন, লিটনসহ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে অতর্কিত গুলিবর্ষণ করেছেন। এতে অন্তত ছয়জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বেশকিছু বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটও চালিয়েছেন তারা।

 

তবে বিএনপি নেতা রাশিদুল ইসলাম গ্রুপের অভিযোগ, বিএনপি নেতা বকুল বিশ্বাস কয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হাজীর ভাই সোহেল রানা, আওয়ামী লীগের সমর্থক ও জেলেদের নেতা ইয়ারুল ইসলামের সঙ্গে মিলেমিশে পদ্মায় মাছ, বালু লুট ও চাঁদাবাজি করার জন্য গুলি চালিয়েছেন। এতে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

 

এই ঘটনায় সকাল ১১টা থেকে কালোয়া বাজার, বেড় কালোয়া মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের টহল রয়েছে।

 

আহত বিএনপিকর্মী কুদ্দুস শেখ বলেন, ফজরের নামাজ পড়তে যাচ্ছিলাম। তখন রাশিদুল ও বকুল আওয়ামী লীগের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে বৃষ্টির মতো গুলি করতে থাকে। দৌড়ে পালালেও আমার ডান হাতে এসে একটি গুলি লেগেছে।

 

কালোয়া মোড়ের ভাঙারি ব্যবসায়ী দুলাল হোসেন বলেন, ফরিদপুর থেকে রাতে বাড়ি এসেছে। আর ভোরবেলায় ওরা হামলা করেছে। আমার হাতে-মুখে-বুকে ছররা গুলি ঢুকে আছে।

 

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিপক্ষের আহত রাজিব শেখ বলেন, গুলির শব্দে ভোরে ঘুম ভেঙে যায়। বাইরে আসতেই দেখি প্রতিপক্ষের ইয়ারুল, সোহেল, রুহুলসহ অনেকেই গুলি করতে করতে এগিয়ে আসছে। তখন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলেও হাতে- পায়ে মুখে গুলি লেগেছে। আমরা তিনজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছি।

 

এ বিষয়ে ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রাশিদুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগে আমার ওপর হামলা করেছিল প্রতিপক্ষের লোকজন। নদীতে চাঁদাবাজি ও লুটপাটের জন্য ইয়ারুল তার লোকজন নিয়ে গুলি করেছে। এতে আমার তিন সমর্থক গুলিবিদ্ধ হয়েছে। থানায় মামলা করা হবে।

 

গোলাগুলির ঘটনা নিশ্চিত করে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার জিয়াউর রহমান বলেন, খবর পেয়ে এসে দেখি হামলাকারীরা কেউ নেই। তবে এখন পর্যন্ত ৬-৭ জন গুলিবিদ্ধ হওয়া এবং কিছু বাড়িতে ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

কুষ্টিয়ায় পাশাপাশি খোঁড়া হয় তিনটি কবর, দাফনসম্পন্ন

error: Content is protected !!

পদ্মায় মাছ-বালু লুট ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ৯

আপডেট টাইম : ০৯:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫
ইসমাইল হোসেন বাবু, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার :

ইসমাইল হোসেন বাবুঃ

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে মাছ ধরা, বালু উত্তোলন ও জেলেদের কাছ চাঁদা উত্তোলন নিয়ে স্থানীয় দুই পক্ষের দফায় দফায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৯ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এসময় বেশকিছু বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।

 

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ভোরের দিকে উপজেলার কয়া ইউনিয়নের বেড় কালোয়া জেলেপাড়ার থেকে কালোয়া বাজার পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় অন্তত দেড় ঘণ্টাব্যাপী এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

 

আহতরা হলেন বের কালোয়া গ্রামের আনারুলের ছেলে আকরাম হোসেন (৩১), দুলাল শেখের ছেলে রাজিব শেখ (৩২), আলম মন্ডলের ছেলে আলামিন মন্ডল (৩৩), বজলু শেখের ছেলে রুহুল আমীন (৫২), কুদ্দুস শেখের ছেলে আশিকুর রহমান (৩২) ও কেরায় শেখের ছেলে তাজিম শেখ (৫০)। বর্তমানে তারা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

 

আহত অন্যরা হলেন একই গ্রামের জেহের শেখের ছেলে কুদ্দুস শেখ (৬৫), মৃত মোশারফের ছেলে দুলাল হোসেন (৪২) ও মহির শেখের ছেলে খুতে শেখ (৩৫)।

 

স্থানীয়রা জানান, ইলিশের প্রজনন মৌসুমে পদ্মায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে। তবুও নদীতে অবৈধভাবে মাছ ধরা, বালু উত্তোলন ও জেলেদের কাছ চাঁদা উত্তোলন নিয়ে কয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও ইউপি সদস্য রাশিদুল ইসলাম, তার ভাগনে সালমান এফ রহমান বকুল গ্রুপের সঙ্গে ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ও সাবেক ইউপি সদস্য বকুল বিশ্বাস এবং জেলেপাড়ার সরদার ইয়ারুল ইসলাম গ্রুপের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।

 

এসময় বাড়িঘর ও স্থানীয় বিএনপির অফিস ভাঙচুর করা হয়। খালেদা জিয়ার ছবি সম্বলিত ব্যানারও ছিঁড়ে ফেলা হয়। তবে এ নিয়ে উভয়পক্ষের নেতাকর্মীরা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছেন।

 

বিএনপি নেতা বকুল বিশ্বাস ও জেলে নেতা ইয়ারুল গ্রুপের অভিযোগ, কয়া ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রাশিদুল ইসলাম ও তার ভাগনে বকুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল খালেকের ছেলে রিপন, শিপন, লিটনসহ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে অতর্কিত গুলিবর্ষণ করেছেন। এতে অন্তত ছয়জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বেশকিছু বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটও চালিয়েছেন তারা।

 

তবে বিএনপি নেতা রাশিদুল ইসলাম গ্রুপের অভিযোগ, বিএনপি নেতা বকুল বিশ্বাস কয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হাজীর ভাই সোহেল রানা, আওয়ামী লীগের সমর্থক ও জেলেদের নেতা ইয়ারুল ইসলামের সঙ্গে মিলেমিশে পদ্মায় মাছ, বালু লুট ও চাঁদাবাজি করার জন্য গুলি চালিয়েছেন। এতে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

 

এই ঘটনায় সকাল ১১টা থেকে কালোয়া বাজার, বেড় কালোয়া মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের টহল রয়েছে।

 

আহত বিএনপিকর্মী কুদ্দুস শেখ বলেন, ফজরের নামাজ পড়তে যাচ্ছিলাম। তখন রাশিদুল ও বকুল আওয়ামী লীগের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে বৃষ্টির মতো গুলি করতে থাকে। দৌড়ে পালালেও আমার ডান হাতে এসে একটি গুলি লেগেছে।

 

কালোয়া মোড়ের ভাঙারি ব্যবসায়ী দুলাল হোসেন বলেন, ফরিদপুর থেকে রাতে বাড়ি এসেছে। আর ভোরবেলায় ওরা হামলা করেছে। আমার হাতে-মুখে-বুকে ছররা গুলি ঢুকে আছে।

 

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিপক্ষের আহত রাজিব শেখ বলেন, গুলির শব্দে ভোরে ঘুম ভেঙে যায়। বাইরে আসতেই দেখি প্রতিপক্ষের ইয়ারুল, সোহেল, রুহুলসহ অনেকেই গুলি করতে করতে এগিয়ে আসছে। তখন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলেও হাতে- পায়ে মুখে গুলি লেগেছে। আমরা তিনজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছি।

 

এ বিষয়ে ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রাশিদুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগে আমার ওপর হামলা করেছিল প্রতিপক্ষের লোকজন। নদীতে চাঁদাবাজি ও লুটপাটের জন্য ইয়ারুল তার লোকজন নিয়ে গুলি করেছে। এতে আমার তিন সমর্থক গুলিবিদ্ধ হয়েছে। থানায় মামলা করা হবে।

 

গোলাগুলির ঘটনা নিশ্চিত করে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার জিয়াউর রহমান বলেন, খবর পেয়ে এসে দেখি হামলাকারীরা কেউ নেই। তবে এখন পর্যন্ত ৬-৭ জন গুলিবিদ্ধ হওয়া এবং কিছু বাড়িতে ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।


প্রিন্ট